সামাজিক উন্নয়নে পেশার সৃজনশীলতা
ফকির ইলিয়াস
========================
একটি ছোট্ট সংবাদ।
সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর গ্রেফতার হয়েছেন। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ শুক্রবারের বিশেষ খবর। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা এবং এক
বছর সাজা প্রাপ্ত বলে ও জানিয়েছেন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মি.জাফর।
বোরহান যখন "আজকের কাগজ" এর প্রতিবেদক ছিলেন , আমি তখন আজকের কাগজের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি।
একদিন আলাপকালে বোরহান আমাকে বলেছিলেন , ইলিয়াস ভাই পার্মানেন্টলি দেশে আইসা পড়েন ।
বলেছিলাম , না ভাই তা হয়তো নানা কারণে হবে না।
আজ ভাবছি আবারো, যে দেশে বন্ধু সাংবাদিকরা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হন , সে দেশে আমার মতো ক্ষুদে সাংবাদিকের
গিয়ে মুখ দেখিয়ে লাভ কি ?
হা যশ !! হা সাংবাদিকতা !!!!!
আমাদের সমাজে আমরা দেখি কিছু কিছু পেশা এবং তা থেকে পেশাজীবীর পদবীটিও একটি বিশেষ ভাবমুর্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তা শুধু একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কাজ হিসেবে নয়, ঐ কাজের সঙ্গে কিছু বিশিষ্ট গুণাবলীর ধারক হিসেবেও। যেমন ‘শিক্ষক’ শব্দটির সঙ্গে সততা, সামাজিক নেতৃত্ব, একইভাবে ‘চিকিৎসক’ শব্দটির সঙ্গে সেবা, মহত্ব এসব গুণাবলী যুক্ত হয়েই ঐসব শব্দ ও পেশায় একএকটি বিশেষ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল।
বাঙালির সমাজ ব্যবস্খায় এক সময় ‘শিক্ষক’ পেশাটি ছিল অত্যন্ত সম্মানীয়। ‘চিকিৎসক’ পেশাটির কথা উঠলেই একজন সেবকের মুখ আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতো খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে। বর্তমানে সেই ধ্যান ধারণার বিয়োগাত্মক পরিবর্তন হয়েছে।
মানুষ এই চলমান সময়ে ‘শিক্ষক’ কিংবা ‘চিকিৎসক’ পেশাজীবিদেরকে আর আগের মতো শ্রদ্ধার চোখে দেখতে দ্বিধাবোধ করেন। এর কারণ কী? কারণ হচ্ছে, এই পেশা দুটিকে কিছু মানুষ খুবই ঘৃণ্য পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন।
শিক্ষকের যে জ্ঞান-গরিমা থাকার কথা ছিল, তা ধারণ না করে এক-একজন শিক্ষক পরিচিত হচ্ছেন এক-একজন বিদ্যাবিক্রেতা হিসেবে।
পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছিল, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কোচিং সেন্টারগুলোর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্খা নিতে যাচ্ছে। যে সব কোচিং সেন্টার প্রতারণা করে ছাত্রছাত্রী, অভিবাবকদেরকে ঠকিয়েছে কিংবা এখনো ঠকাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেবে সরকার। প্রাইভেট চিকিৎসা ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারেও বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধাত্ম নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছিল। এপর্যন্ত তেমন কোনো ব্যবস্থা
নেয়নি বর্তমান সরকার।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এই রেওয়াজ চালু আছে, রোগী যেই হোক তাকে জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতেই হবে। চিকিৎসার বিল কে দেবে তা প্রাথমিকভাবে বিবেচ্য বিষয় কখনোই হয়নি। অথচ বাংলাদেশে আমরা দেখি মুমূর্ষু রোগী সামনে রেখে দরদাম হাঁকছেন চিকিৎসক।
মানুষ স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি হিসেবে বিভিন্ন সৃজনশীল পেশাকে বেছে নেয়। সমাজ লজ্জা পায়, যখন দেখা যায় তেমনি সৃজনশীল কোনো পেশাকে ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ হাসিলে কেউ ব্যবহার করছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে ‘সাংবাদিকতা’ পেশাটিকে একটি মননশীল ধারায় রূপ দিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু অন্যদিকে এই পেশাকে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজেও ব্যবহার করেছেন কেউ কেউ। সামরিক জান্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাড়ি-গাড়িসহ নানা সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিকদের খাস আনুকূল্যও নিয়েছেন কেউ কেউ।
ভাবতে অবাক লাগে বর্তমানে ধ্বস নামা রাজনীতিকদের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সাংবাদিক, সম্পাদকরা এখন দুর্নীতিবিরোধী সেজে নানা নসিহত শুনাচ্ছেন বাংলা দেশের মানুষকে। এখন তাদের লেখালেখি, রিপোর্ট দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই এক সময় তারা রাজ সম্পাদক (রাজ্যের পোষ্য সম্পাদক) ছিলেন।
এরা আওয়ামী লীগের শাসনামলে যে তরিকা, বিএনপির আমলে জাতীয়তাবাদী তরিকা গ্রহণ করে ‘রাষ্ট্রের কল্যাণে’ নিজেদেরকে ব্রত রেখেছেন। এখন তারা বর্তমান তদারকি সরকারের মুখপাত্র সাজতেও ব্যস্ত।
মহামহিম এডওয়ার্ড সাঈদ তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,'' পেশাজীবীদের সৃজনশীল এবং সৎ ধ্যান-ধারণাই পারে সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে। সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ববান মানুষ হচ্ছেন সমাজের আইকন। এদেরকে সমাজের ভিতও বলা হয়।
যে সমাজে এই ভিত যতো বেশি গভীরে, সে সমাজই ততো শক্তিশালী। ''
বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা এবং জনগণের আশা-আকান্ঙখা বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ে সৎ মানুষের বেষ্টনী নির্মাণ সে জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, যে ছাত্র বিদ্যা বিক্রেতা শিক্ষকের সাহচর্য পায়, সে কখনোই নিজেকে মহানুভবতার আলোয় আলোকিত করতে পারে না। কারণ তার জ্ঞানসীমা হয়ে পড়ে খুবই সীমিত।
এখানে ভারতের একটি উদাহরণ টানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইটি, প্রযুক্তি, কারিগরি ফিল্ডে ভারতীয় তরুণদের পদচারণা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থলিংক, ডেল কম্পিউটার, এটি এন্ড টি, ক্যাপিটাল ওয়ানসহ অনেক বহুজাতিক কোম্পানি শোরুম, অফিস খুলেছে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে। টল ফ্রি নম্বরে নিউইয়র্কে বসে ফোন করলে, অপারেটর জবাব দিচ্ছে ভারত, ফিলিপিন কিংবা থাইল্যান্ড থেকে। এই যে ব্যবসায়িক মননের বিবর্তন তা সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার কারণে। গড়ে উঠেছে সৎ পেশাজীবী কর্মশক্তি।
একটি প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সততার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অতি নিকট-প্রতিবেশী ভারত যা পারছে, বাংলাদেশ তা পারবে না কেন? তবে প্রথম কাজটি হচ্ছে সুবিধাবাদী পেশাদারদেরকে দমন করা।
-----------------------------------------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।