নাটক একটি বিশেষ ধরনের শিল্প মাধ্যম, যাকে Combined Art বা সমন্বিত শিল্পকলা বলা হয়। দৃশ্যমান, ছন্দময়, শ্রুতিময়, নান্দনিক জীবন ঘনিষ্ট বিষয়বস্তুকে একদল সংঘবদ্ধ মানুষ যখন পরিকল্পিত ভাবে অারেক দল মানুষের সামনে উপস্থাপন করে তাকেই নাটক বলে। প্রতিটি শিল্প মাধ্যমই মানুষের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু নাটকে এমন উপাদান অাছে যা মানুষকে তার জীবনের খুব কাছাকাছি নিয়ে অাসে। মানুষকে ভাবায়, অালোড়িত করে, উজ্জিবিত করে।
নাট্যকার তার সমস্ত না বলা কথা, অব্যক্ত যন্ত্রনা, সমকালীন শোষণ, বৈষম্য, অপরিসীম অাক্রশ দৃশ্যমান করে তোলেন নাটকে। যেহেতু নাটকের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য নাটক সেহেতু মানুষের কাছে মানবিক ও মানবিক প্রয়োজনে নাটকে একটি গ্রহনযোগ্য শিল্পকলায় রুপান্তর করা দরকার। অার তা করতে দরকার বিঙান ভিত্তিক শিক্ষা সমৃদ্ধ নাট্যকর্মী। তা হলেই নাটক হতে পারে এই চলমান ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে মানবিক সমাজ বির্নিমাণের তীক্ষ ধারাল অস্ত্র।
অামাদের দেশের বেশীর ভাগ নাটক সস্তা বিনোদন নির্ভর।
যা দর্শককে অাচ্ছন্ন করে কিন্তু জাগায় না। পুজিতন্ত্রের স্তুতি বাক্য শোনায়, ভাগ্যের দোহাই শেখায়। এখনকার বেশীর ভাগ নাটক সমাজের শোষিত মানুষকে জাগতে শেখায় না, ভাংতে শেখায় না, মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ানোর মন্ত্র দেয় না। শোষকের গলা চেপে ধরার শিক্ষা দেয় না। সমাজিক দুষ্টক্ষত চিহ্নিত করে না।
পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় উতসাহী করে না। অর্থাত মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বাষী ব্যক্তির স্বার্থে প্রদর্শিত হচ্ছে এখনের নাটক। এই নাটক বৃহত্তর নির্যাতিত গণমানুষের নাটক নয়। এখন প্রয়োজন বৃহত্তর গণমানুষের নাটক। প্রয়োজন সত, নির্ভিক, রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন অাদর্শবান নাট্যকর্মী।
গণমানুষের সংগ্রামী চেতনাকে জাগ্রত করার এই শক্তিশালি মাধ্যমকে শহুরে সভ্যতার গন্ডি ভেঙ্গে নিয়ে অাসতে হবে বৃহত্তর গণমানুষের কাছে। তাদের জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে তৈরী করতে হবে গণনাটক। অর্থাত কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা, শোষন প্রকৃয়া, মানবেতর জীবন, সামাজিক ব্যাধী ও তার প্রতিকার নিয়ে লোক সংস্কৃতির ছন্দ, তাল, সুর প্রয়োগকরে নাটক তৈরী করতে হবে। প্রদর্শণ করতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে পিছিয়ে থাকা মানুষের কাছাকাছি। প্রতিটা মানুষের মধ্যে যে সুপ্ত সৃজনশীলতা, কর্মস্পৃহা রয়েছে তা বিকশিত করতে হবে।
অার এর জন্য প্রয়োজন গণনাটক।
নাটক সামাজিক ও মানবিক শিক্ষা প্রসারের বড় হাতিয়ার। নাটক মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক সুদৃঢ় করে, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ চিনতে সাহায্য করে। মানুষে মানুষে মৈত্রী গড়তে ভূমিকা রাখে। অামাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষ অক্ষরঙানহীন সহজ সরল।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের জীবনবোধ, চিন্তা চেতনা সহজ সরল। তারা বোঝে মেঠপথ, সবুজ ফসল, নদী নৌকা, ঘর সংসার, জন্ম মৃত্যু এবং বেচে থাকার কঠোরতম সংগ্রাম। তারা তাদের জীবন নিয়ে গভীর ভাবে ভাবে না। অথবা ভাবতে পরে না। সহজ সরল মানুষগুলো বোঝে না মৌলবাদ হাঙ্গরের দাপট বা মহাজনী কুটচাল।
তারা সহজেই জড়িয়ে পড়ে এনজিও নামের সর্বগ্রাসী মায়া নেকড়ের খপ্পরে। অাবদ্ধ হয়ে পড়ে রাজনীতিকদের ভয়ঙ্কর শয়তানীর থাবায়। তারা বুঝতে পরে না তাদের শ্রম নিংড়ান সম্পদ সমর্পন করা হচ্ছে শোষকদের পয়ে। এই অশুভ শক্তির হাত থেকে গণমানুষকে উদ্ধার করেত হলে তাদের সচেতন করতে হবে। অার তা করার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম হলো নাটক।
এই বাস্তবতা বুঝে এগিয়ে অাসতে হবে প্রকৃত প্রগতিশীল নাট্যকার ও সংস্কৃতি কর্মীদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।