একটা আটপৌরে ঘরোয়া সাদামাঠা প্রেমের কবিতা লিখতে চাই উঠনে পড়ে আছে শুকনো জলপাই পাতা। লাল সতেজ পাতাটি কেমন জীর্ণ মচমচে হয়ে গেছে। শিরা উপশিরার পিঙ্গল বর্ণ কেউ কি চুরি করেছে? নাকি বোহেমিয়ান সময় শুষে নিয়েছে?
পাতাটি ঝরে গেছে শীতের রুক্ষতা নিয়ে।
জলপাইয়ের অম্লতায় ছিল প্রেয়সীর লাজুক মুখ। কত না বলা কথা তার মনলিন্দে লুকিয়ে ছিল।
জানি, এই পাতায় সবুজের আকর ছিল। ভাবি যৌবনের কবিতা লেখা ছিল ছত্রে ছত্রে।
ঘুণেধরা আধাঁরে জরাগ্রস্ত শুককীট কেটে ফেলেছে শ্বাসমূল। ক্ষয়ে গেছে বিজ্ঞ বাকল। কঙ্কাল কোটরে বাসা বেঁধেছে লক্ষিপেঁচা।
পেঁচার চোখে নিযুত জোনাক খেলা করে। সেখানে সপ্তর্ষি ভোরের স্বপ্ন দেখায় বিগত কালপুরষ। সে বলেছিল একদিন শুক তারা উঠবে এই জলপাই পাতার ফাঁকে। হয়তো সেসময় কৃষ্ণভ্রমর কামিনী সুর শোনাবে লিলুয়া বাতাসকে। পবন পালে উড়ে যাবে নৈশব্দের ঘুড়ি।
কোনো মৌয়াল দুপুরে মৌরাণী পরাগ খুঁজবে ভাট ফুলে।
জলপাইয়ের পাশে ঢ্যাঙ্গা তালের ডগায় দুলে ওঠে বাবুই কুটির। কুটিরে বাসমতি সুবাস আছে, জানে মুগ্ধ বুলবুল।
দোযেলের কানে বঞ্চিত রাগিণী শুনায় নিঃসঙ্গ দাঁড়কাক। ডুমুরের ডালে তখন প্রিয় শালিক, অনাগত বাসর গড়ে যুগল ঘোরে।
ফুটে ওঠে ডালিম স্বপ্ন কৃষাণির সবুজ বুকে। যেখানে বাস করে ঝিনুক নদী। পানকৌড়ির জলডুবে উঠে আসে পাললিক ফসিল। যে ফসিলের গাঁয়ে লেখা থাকে লাঙল ফলার নকশিগল্প। এ গল্পে হিজল বনের কান্না আছে।
আছে জারুল ক্ষতের করুণ ইতিহাস। যদিও বুনো হাঁসের পাল আর ঘরে ফেরে না। তারা পরযায়ী অতীতের বুকে আশ্রয় খোঁজে।
হয়তো তাদের কেউ বলে না, আকাশ আজ ঢেকে গেছে প্রজাপতি ডানায়। রোদেলা সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে আলোক কুমারী, হাতে নিয়ে সবুজ পরাগ।
অবারিত মাঠে ছড়িয়ে যাবে পরাগ রেণু শালিকের ঠোঁটে। বিবাগী ঢেউ এ ভরে আছেকুমারীর হাতব্যাগ। ঢেউয়ের সঙ্গে রঙধনুর সাত রঙ মিশিয়ে মালতী কুমারী আলতা বানায়। রিনঝিন পায়ে পায়ে ছন্দ ছড়িয়ে পড়ে এলো পথে,দূরান্তে। হেসে ওঠে ভাট কিশোরী।
লাউ ফুলে মেলা করে কৃষ্ণভ্রমর। কিশোরী বধূ রাঁধিকা সাজে বসে আছে পানসি ঘাটে। কৃষাণের বুক জুড়ে সোনালি স্বপ্ন উঁকি দেয়। কুটির উঠানে নবান্ন আনন্দ দানা বাধে।
শহুরে ইটের দেয়ালে বনসাই পাকুরের দেখা মেলে।
তাতে ঠাঁই নেয় বিষন্ন দাঁড়কাক। যার চোখে যুগল চন্দ্রমল্লিকার স্বপ্ন।
কিন্তু ঈশান কোণ কালো হয়ে ওঠে। প্রেতপুরীর কথিত অসুর জমায়েত হয় কাপালিক গর্জনে। হুঙ্কার ছাড়ে।
মরিচিকা ভয়ে কেঁপে ওঠে চারপাশ।
কদম কেশর ঝরে পড়ে বৃষ্টির অনাদরে। তবুও কাঁদে না অভিমানী মেঘ। অম্বর কুমার চুমু দেয়নি বিরহী গালে। কামনার গান শোনে না তৃষ্ণার্ত ব্যাঙ্গমি।
ছাতিমের পাতায় খেলে না বর্ষাজল।
ঘুণে খাওয়া হরিৎ চাদরে কৃষাণী মোছে নোনা জল। ছিন্ন আঁচল টেনে অনাহারী বুকে আবার নকশি বুনে। সজনে ডালে গড়ে ওঠে চড়ুই সংসার।
পিয়ালের বনে পিউ পাপিয়া পড়শী খোঁজে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।