আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেলিম আল দীনের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি

mojnu@ymail.com

বাংলার পুরনো ও হারিয়ে যাওয়া নাট্যধারার আধুনিক রূপকার সেলিম আল দীন অকালেই চলে গেলেন। রেখে গেলেন তার অজস্র নাট্যকীর্তি। কেরামতমঙ্গল, হাতহদাই, প্রাচ্য, বনপাংশুল, হরগজ, নিমজ্জন, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, চরকাঁকড়ার ডক্যুমেন্টারি, মশারী-৭৩, সংবাদ কার্টুন, মুনতাসীর ফ্যান্টাসী, যৈবতী কন্যার মন, শকুন্তলা তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী টিভিতে প্রচারিত তাঁর ১১টি নাটক পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে নীল নীল যন্ত্রণা, মশারী-৭৩, শ্যামল ছায়ায়, মাঠের পর মাঠ দর্শকনন্দিত হয়েছে।

তাঁর লেখা গল্প লিব্রিয়ামকে আতিকুল হক চৌধুরী ঘুম নেই নামে টেলিভিশন নাট্যরূপ দেন ১৯৭০ সালে। এছাড়াও নাট্যজীবনের দীর্ঘ চার দশকে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নাট্যদল ঢাকা থিয়েটারের হয়ে অন্তত ত্রিশটি নাটক রচনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি তৈরি করেছেন অনেক নাট্যকর্মী, যারা মঞ্চ, টিভি, চলচ্চিত্রসহ মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গনে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এই মেধাবী নাট্যব্যক্তিত্ব চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের মঞ্চ নিষ্প্রভ হয়ে গেল। যিনি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজস্ব একটি নাট্যধারা।

এতেই সাম্প্রতিক বাংলা নাটকে ঘটেছে পরিবর্তন। নাট্যসাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদকে সম্মানিত হন। বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। এছাড়া অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার কলকাতা, শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট, ফেনীর সোনাগাজী থানার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের সেনেরখিল গ্রামে।

তাঁর পিতা মফিজউদ্দিন ছিলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস। মাতা ফিরোজা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালে মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল করটিয়া সাদত কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

মূলত তাঁর চিন্তাধারায় গড়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। ১৯৭৪ সালে করটিয়া সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোকসেদ আলী খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা মেহেরুন্নেসার সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। একমাত্র পুত্রসন্তান মইনুল হাসানের অকালমৃত্যুর পর তিনি শ্যালিকার মেয়ে শাকিলা তাসমিন কাজরীকে সন্তানের মর্যাদায় নিজের কাছে নিয়ে আসেন। নাম রাখেন অন্বিতা।

তাঁর বয়স এখন ৯, সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মধ্যযুগের বাংলা নাট্য অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণা ও তত্ত্ব এখন বাংলাভাষী প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। তিনি ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম কারিগর। শেকড় সন্ধানী এবং বিশেষ নাট্যকৃতির স্রষ্টা সেলিম আল দীন বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে, বাংলা নাটকের ইতিহাসে।

বাংলা নাটকের এই অসামান্য কৃতি মানুষটির প্রতি আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা রইল। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।