আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরে এলেন ইতিহাসের মহানায়ক

mojnu@ymail.com

১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালির জীবনে স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবন কাটিয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বীরের মতো, মহানায়কের মতো ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নির্দেশে এবং যার নামে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, সেই অবিসংবাদিত নেতাকে বরণ করে নেয়ার জন্য এই দিনে তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভেঙে বেরিয়ে আসা এই দেশের মানুষ তাদের মাঝে প্রিয় নেতাকে পেয়ে আবেগে-আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন।

খুশির বন্যা বয়ে যায় সারাদেশে। বাঙালির স্বাধীনতার জন্য এই অকুতোভয় নেতা দীর্ঘ ২৪ বছর একটানা কারাভোগ, অত্যাচার, নির্যাতন ও হুলিয়া সহ্য করে বিরামহীন আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ৫২, ৫৪, ৬২ ও ৬৬ সালে গণআন্দোলনের পর সৃষ্টি হয়েছিল ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। তাঁর একক নেতৃত্বে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি, প্রকারান্তরে তারা বাঙালিকে বঞ্চিত করেছিল, এই জাতির অর্জনকে অসম্মান করেছিল।

বঙ্গবন্ধু তা মেনে নেননি। সেই সাহসী, জনদরদি ও নন্দিত নেতা স্বাধীনতার জন্য সারা দেশের মানুষকে প্রস্তুত করে ৭১-এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানের পর থেকেই সারাদেশেই পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। টানা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গোটা বাংলাদেশ যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের উন্মাদনায় টগবগ করে যখন ফুটছে সমগ্র জাতি, ঠিক তখনই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পৈশাচিক নৃশংসতায় ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর হামলে পড়ে বর্বর পাক বাহিনী। গ্রেফতারের জন্য আসছে পাক বাহিনী, এ সংবাদ পেয়েই ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাসা থেকে মধ্যরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এর পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার এবং এ সরকারের নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির এই প্রাণপণ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (রাশিয়া) প্রকাশ্য সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতাসহ প্রায় সব দেশের সমর্থনে মাত্র নয় মাসেই দুর্ধর্ষ নিয়াজি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আয়োজন করে পাশেই কবর খনন করা হলেও মাথা নত না করে তিনি নির্ভীক ও দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর লাশ যেন বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর প্রবাসী সরকারের আহ্বান, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তির পর লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় স্বদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। সংবাদ সূত্র : Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.