অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...
। । ১ । ।
সেই ছোট বেলার ঈদগুলো অন্যরকম ছিল; বড় হওয়ার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবাই একথা বলে ।
নতুন জামার মজা তখন অন্যরকমই ছিল। শপিং সেন্টারগুলোর সব দোকান চষে ফেলতাম আব্বা-আম্মার হাত ধরে। গরমে ঘেমে-নেয়ে গেলে একটা দোকানে ঢুকে পরে ঠান্ডা বরফ কুচি মেশানো লাস্সি । তারপর যা হবার তাই হতো, প্রতি ঈদে ঝাঁপিয়ে জ্বর।
একটু একটু করে বড় হওয়া আর মজাগুলোর রং-চেহারা পাল্টে যায় ।
দ্বায়িত্ব আসে; খুব বেশী বাউন্ডেলেপনা করলে ব্যাপারটা ভাল দেখায়না; আম্মা একা হাতে পারে না সামাল দিতে, কাজের ভাগাভাগি হয়; ঈদের দিনগুলো তখন বাড়ির ছেলেদের জন্যই উতসব হয়ে উঠে।
ঈদের জামা-শাড়ী এখনও খুব ঘুরে ঘুরে কিনি; এখন বিপনীবিতান গুলোতে কত পরিবর্তন; তবে ঠিক ঈদ বলেই যে একটা নতুন জামা, সেই অনুভুতিটুকু আর নেই। পরিস্থিতিও পাল্টেছে; আম্মার জন্য শাড়ী কিনতে কিনবা ভাইয়ের জন্য খুঁজে খুঁজে পাঞ্জাবী কিনাতেও একটা মজা খুঁজে পাই।
সেই ছোট বেলায় বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ হত ল্যান্ড ফোনে । তাও একটু সময় মেপে; আর এখন হাতে এসেছে নিজস্ব মুঠোফোন; ল্যান্ডফোনটা আর আজকাল ধুলো মোছা ছাড়া ছুঁয়ে দেখা হয়না।
বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বেড়েছে, পরিধি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ পর্যন্ত গড়িয়েছে । যোগাযোগ কি দ্রুত, কত যান্ত্রিক ! এক হাতে মোবাইলের একটার পর একটা এস.এম.এস এর উত্তর দেয়া ; ওদিকে আবার ব্লগ, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার- ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে যায় দূর-দূরান্তে, নিমিষেই। এস.এম.এস কি অনুভূতিগুলো ঠিক মত পৌছে দেয় ওপাশে ? ওপাশের বার্তা গ্রাহক কি বুঝতে পারে প্রেরক খুশিতে ঢগমগ, নাকি রেগে আছে, নাকি অভিমানে ডুবে আছে? টেকনিক্যাল ডিভাইসগুলো ইমোশনকে কতটা নিখুঁত করে তুলে ধরতে পারে আসলে ? নাকি এটা নির্ভর করে আমাদেরই হাতে ?
। । ২ ।
।
ছোট বেলা থেকে কোরবানীর ঈদটা ভালো লাগতোনা; আগের রাতে গরুর নিরীহ চেহারা, বিশাল শান্ত চোখ দেখে পরদিন ওটার পরিণতি পীড়াদায়ক ছিল বরাবরই কোমল মনে। তারপর আবার ঈদের দিন সকালে পশু কোরবানীর দৃশ্য, কষাইদের বিশাল বিশাল ধারাল দা-ছুরি নিয়ে ঘোরাফেরা আতংকিত করত।
ঈদ একটা ধর্মীয় এবং সামাজিক রেওয়াজ। কোরবানী ঈদের একটা বিশেষত্বও আছে।
আমরা কতটা সেটা মেনে এবং জেনে পশু কোরবানী দেই তা জানি না। এবার শুনেছি দুটো কারনে কোরবানীর হাট তেমন জমেনি- ১. সিডর এবং ২. দুদক । ব্যাখ্যা নিস্প্রয়োজন ।
অবশ্য ঈদ এখন অনেকটাই নিজের স্ট্যাটাস তুলে ধরার একটা মোক্ষম সুযোগ; তাই আগে যেটা দেখা যেত পত্রিকার পাতায়- লাখ টাকার শাড়ী, হাটে বিশাল সৌদি উট, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যাকাত আর ভিড়ে চাপা পরা হতাহতের খবর। এবার দেখলাম না কেন ? আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে ? নাকি আমাদের আত্ম-সচেতনতা, মূল্যবোধ নামক সুকুমার বৃত্তিগুলো জাগ্রত হয়েছে ?
।
। ৩ । ।
কোরবানী ঈদের সময় এতো বেশী গরুর মাংস খাওয়া হয়ে যায় যে, দু'দিন পর মাংস বিশেষ করে গরুর মাংস দেখলেই পিলে চমকে ওঠে। মাস খানেকের জন্য গরুর মাংস থেকে একশ হাত দূরে থাকার কঠিন প্রতিজ্ঞা করে ফেলা হয়।
তবে কোরবানীর মাংস অনেকটা একসাথে রেঁধে ফেলে প্রতিদিন সেটাকে চুলায় জ্বাল দিতে দিতে ঝুরি ঝুরি করে ফেলা, পারলে একটু বেশী করে পেঁয়াজ কুঁচি যোগ করা; উফ ! ওটা রুটি দিয়ে খাওয়ার যে স্বাদ- অমৃত !!!
। । ৪ । ।
বুধবার সন্ধ্যায় বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি; এমন সময় পেছন থেকে ধাক্কা মেরে কে যেন হুড়মুড় করে পার হতে লাগল ।
মেজাম গরম করে, ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকালাম একটা রাম ঝাড়ি দেয়ার জন্য । ওম্মাহ ! দেখি ওটা কোরবানীর গরু; লাইনের মাঝ দিয়েই ব্যাটা গরু নবাবের মত চলা শুরু করেছিল । গরুর বিশাল, ফোলা ফোলা ভুঁড়ির সাথেই ধাক্কা খেয়েছিলাম; আমি মনে মনে হাসি , তাইতো এতো নরম, আরামদায়ক ধাক্কা মনে হয়েছিল।
। ।
৫ । ।
যাদের জন্য আজকের দিনটি সুখের তাদেরকে ঈদ মুবারক ,
যাদের জন্য কষ্টের তাদেরকেও ঈদ মুবারক;
যারা খুব ধুম-ধাম করে ঈদ পালন করছেন তাদের ঈদ মুবারক,
যারা অনেক কষ্টেসৃষ্টেও ঈদ পালন করতে বেসামাল তাদেরও ঈদ মুবারক;
যারা খুব ঘুরলেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলেন তাদের ঈদ মোবারক,
আর যারা সারাদিন ঘরেই কাটালেন তাদেরও ঈদ মোবারক;
যারা এস.এম.এস/ফোন করলেন তাদের ঈদ মোবারক,
যারা করলেন না তাদেরও ঈদ মোবারক;
যারা সারাদিন অনলাইন ছিলেন তাদের ঈদ মোবারক,
যারা অফলাইন ছিলেন তাদেরও ঈদ মোবারক;
যাদের উপর খুশি তাদের ঈদ মোবারক ,
আর যাদের উপর রাগ/অভিমান তাদেরও ঈদ মোবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।