তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে গনহত্যার মধ্য দিয়ে শুরু যে যুদ্ধের, ১৬ ডিসেম্বর বিকেল বেলা হত্যাকারীদের নিঃশর্ত আত্নসমর্পনের মাধ্যমে শেষ যে যুদ্ধের,৩০ লক্ষ প্রান আর দু লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের মুল্যে স্বাধীন দেশের জন্ম দিলো যে যুদ্ধ- সে যুদ্ধ কোনো বিমুর্ত কিছু ছিলোনা, অলৌকিক কিছু ছিলোনা,সুফীবাদী,মারফতী কিংবা যাদুকরী কিছু ছিলোনা । ছিলো নিরেট বাস্তবতা,ছিলো খাঁটি করুন সত্য ।
২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত রাজনীতি ছিলো,আলোচনা ছিলো,সমঝোতা ছিলো,গোলবৈঠক ছিলো । কিন্তু গনহত্যা শুরু হয়ে যাবার পর আর কিছু নেই । একপক্ষে আক্রমনকারী,হন্তারক,লুটেরা,ধর্ষক আরেকপক্ষ আত্নরক্ষার প্রয়োজনে সশস্ত্র ।
এর মাঝামাঝি কিছু ছিলোনা, থাকতে পারেনা ।
যারা মাঝামাঝির ভান ধরেছিলো,শান্তি ও সেবার নামে মুলতঃ তারা আক্রমনকারী ঘাতকদের সেবাদাস ছিলো- এ ঐতিহাসিক সত্য, খন্ডানোর সুযোগ স্বয়ং বিধাতার ও নাই । ইতিহাস বিজয়ীর দ্বারা লিখিত এইসব কথা বলে সেই সত্যকে মুছা যাবেনা, এই ইতিহাসের কোন বিকল্প পাঠ ও হবেনা ।
গোলাম আজম গং ও তাদের দল জামাত গঠন করেছে রাজাকার,আলবদর বাহিনী । এই বাহিনী কাজ করেছে পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে ।
৭১ এর প্রতিটি দিন,প্রতিটি ঘটনা,প্রতিটি দলিল স্বাক্ষ্য দেয়-রাজাকার আল বদররা পাক বাহিনীকে সহায়তা করছে, গোলাম আজম গং দের কয়েক হাজার বক্তৃতা বিবৃতি আছে যেখানে তারা আহবান জানাচ্ছে পাকবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য আর মুক্তিবাহিনীকে খত্ম করার জন্য ।
হ্যাঁ,গোলাম আজম তার নেতা কর্মীদের পাক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য আহবান জানাচ্ছে, অর্থ্যাত পাক বাহিনীর কাজে সহায়তা করার জন্য । ২৫ মার্চের রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত এই জনপদে পাক বাহিনীর কাজ কি ছিলো? হত্যা,নির্যাতন,লুটতরাজ,নারী ধর্ষন ছাড়া আর কোন মহান কাজ করছিলো পাক বাহিনী? কোন কাজে সহায়তা করার জন্য তাহলে গোলাম আজমের আহবান? নয় হত্যায়, নয় ধর্ষনে?
পাক বাহিনী ৭১ এ হত্যা ও ধর্ষন করেছে-এ যদি মিথ্যা না হয়, আর পাক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য গোলাম আজমের আহবান যদি মিথ্যে না হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে মিথ্যে হয় যে এই গোলাম হত্যা ও ধর্ষনে সহযোগীতা করেছে ।
এইবার আসা যাক আসল কথায় ।
মানুষ নামের দ্বিপদ প্রানী মহান কিংবা ইতর হিসেবে চিহ্নিত হয় তার কাজ দ্বারা ।
কেউ যখন আরেকজনকে মহান বলে ঘোষনা করবেন তার মানে দাঁড়ায় তিনি ঐ ব্যাক্তির কাজকে মহান ঘোষনা করছেন ।
যিনি স্পষ্ট ভাষায় বলছেন- 'গোলাম আজম মহান নেতা', তিনি সুস্পষ্ট ভাবে গোলাম আজমের কাজকে মহান চিহ্নিত করেছেন ।
কোন কাজ? '৭১ এ হত্যা ও ধর্ষনে সহযোগীতার কাজ ?
তাহলে গোলাম আজম কে যিনি মহান ঘোষনা করেন তিনি আদতে সেই হত্যা ও ধর্ষনকেই মহান(!) ঘোষনার স্পর্ধা দেখান !
এই স্পর্ধা যখন কেউ দেখাবেন মানুষের সমাজে এসে-সে তিনি ১৯ বছরেরই হোন অথবা ৭৯ বছরেরই হোন, সে তিনি নারী কিংবা পুরুষই হোন, সে তিনি ধর্মপ্রান কিংবা ধর্মহীনই হোন- তাকে তার সম্ভ্রম খোয়াতে হবে । কারন হত্যা ও ধর্ষনে সহযোগীতাকারী মহান ঘোষনা করে আদতে তিনি সমগ্র মানবাজাতির সম্ভ্রমহানী ঘটিয়েছেন । বাস্তবে হলে কমপক্ষে জুতা পেটা(বায়তুল মোকাররম স্টাইওল),ভার্চুয়ালী হলে গালিগালাজ অথবা যার যা খুশী ।
এ ক্ষেত্রে সুশীল,অশীল,ভদ্র,অভদ্র নাকি কান্না কেঁদে কোন লাভ নাই ।
খুন ও ধর্ষনে সহযোগীতার আহবান জানিয়ে গোলাম আজম মানবতার বিরুদ্ধে পাপ করবে,সে পাপীকে মহান ঘোষনা করে কেউ ধর্ম,মানবতা,ভদ্রতার দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবেন-তা হতে পারেনা ।
হিটলার ভালো ছবি আঁকতো,তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা । হিটলারের প্রশংসা করা মানে একটা ফ্যাসিস্ট খুনীকে প্রশংসা করার দায় নেয়া । গোলাম আজমকে মহান ঘোষনাকারী/কারিনীর ও অনেক গুন থাকতে পারে ।
কিন্তু তার সেইসব গুন নিয়ে মাতোয়ারা হওয়া মানে একটা খুনী ও ধর্ষককে জাস্টিফাই করার দায় নেয়া ।
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য-ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা ।
২৫ মার্চের রাতের পর থেকে মাঝামাঝি বলে যেমন কিছু ছিলোনা, আজ ও নেই । হয় আপনি শুভ,সুন্দর,মানবতার পক্ষে থাকবেন,থাকবেন সেই স্বপ্নের পক্ষে যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনার বাবা শহীদ হয়েছেন , মা দিয়েছেন তার শ্রেষ্ঠ বিসর্জন- নতুবা আপনি অশুভ, অন্ধকার ঘাতকদের পক্ষে যাবেন । আপনি গোলাম আজমকে মহান বলবেন,গোলাম আজমকে যারা মহান বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারা আটকে গেলে নানা ছুঁতায় এসে উদ্ধারের চেষ্টা করবেন ।
সিদ্ধান্ত আপনার ।
আমরা জানি অশুভ ,অন্ধকার,গোলাম আজমেরা সেদিন ও পরাজিত হয়েছিল- আবারো পরাজিত হবে-বারবার পরাজিত হবে অন্ধকার পশুদের দল ।
মানুষের জয় হয়েছে হবেই সবসময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।