আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হালার চল্লিশ বছর হইয়া গেল, মাংস ভাত খাওয়া হইল না। হালা দাদু।



আমাগো পিছনের বাড়ীর দাদুর দেশের বাড়ী আছিল গাইবান্ধায়। আমি মাঝে মাঝে দাদুর বাড়ি গেলে কইতো - হালায় বাবুর বাড়ীর ছোটো পোলায় আইছে, হালায় পিড়ি পাইত্যা দে। দিদিমা পিড়ি পাইতা দিতো । আমিতো একাই যাইতাম, হালা পায় কই । আমাগো এইখানে "হালা" মানে চাইরখান, এক হালা ডিম মানে চাইরখান ডিম।

এক হালা কমলা মানে চাইরখান কমলা । দিদিমারে কইতাম, দাদু হালা কয় ক্যান? দিদিমা কইতো, তর দাদু হালায় ঐরকমই । মুড়ি খা । দিদিমা খেজুরের গুর দিয়া মুড়ি খাইতে দিতো। নাড়কেলের নাড়ুও দিতো ।

দিদিমাও হালা কইতো । আমি ভাবতাম দাদুগো দ্যাশে বুঝি শুধু হালাই আছে। "একখান" বইলা কিছু নাই। দাদুর মেজাজ আছিল । শুনতাম দ্যাশের বাড়িতে নাকি দাদুর দাপট আছিল।

বড় ব্যবসা ছিল । নৌকায় কইরা মাল আমদানি রপ্তানি করতো । বড়লোক ছিল । প্রথম পাকিস্তান যুদ্ধের পর আমাগো এইখানে আইসা বাড়ী বানাইয়া বসবাস করতো। দাদুর ছেলেরে (একই ছেলে) আইননা ব্যাবসা খুইলা দিছিল।

দাদুই দেখাশুনা করতো । দাদুর কথামতো ছেলে ব্যাবসা দেখাশুনা করতো। বাচ্চু, দাদুর সেজো নাতি, আমার লগে একই ক্লাসে পড়তো, হেয় একদিন স্কুল থেইকা ফেরার পথে কইলো, বাজারে যাবি? আমার দাদু হালায় বাজারে বাড়ী বানাইতাছে । জবর বাড়ী। আমি কইলাম চল, দেইখা আসি।

আমরা বাজারে গিয়া দেখি, হ' একখান বাড়ী বানাইতেছে বটে । দুইতলা বাড়ী । নিচ দিয়া দুকানের সারি, উপরের তলায় হোটেলও হইবো, আবার থাকাও যাইবো। আমারে দেইখা দাদু কইলো, হালায় বাবুর বাড়ীর ছোটো পোলা আইসে, হালারে বইতে দেই কই! এইখানে যা ধুলা বালি উড়তাসে। আমি কইলাম - আমি বসুমনা, দেখতে আইলাম ।

দাদু কইলো, দ্যাহো, ঘুইরা ঘুইরা দ্যাহো। দাদু আমারে ঘুইরা ঘুইরা সব দেখাইল, কোথায় দোকান হইবো, কোথায় হোটেল হইবো । সব দেইখা আমি কইলাম - দাদু আপনে জবর বাড়ী বানাইতাছেন। একখান দেখার মতোন বাড়ী হইবো। দাদু কইলো, হ' হ', বাড়ী বানামুতো হালায় এইরকমই বানামু ।

হক্কলের দেইহা হালায় তাক লাইগা যাইবো । আর তিন মাসের ভিতরে হালায় শ্যাস হইয়া যাইবো। তখন হালায় আইয়ো। আমি কইলাম - আমু । আমাগো কিন্তু মাংস ভাত খাওয়াইতে হইবো ।

দাদু খোশ মেজাজে ছিলো, কইলো খাওয়ামু, তোমারে হালায় খাওয়ামু । কয়েকমাস পড়ে একদিন বাচ্চুরে কইলাম, তগো বাজারের বাড়ীর খবর কি? শ্যাস হইছে? বাচ্চু কইলো, হ', হালায় শ্যাস হইয়াও শ্যাস হয় নাই। আমি কইলাম, ক্যান, শ্যাস হয় নাই ক্যান? বাচ্চু কইলো, হালায় দাদু বানাইবো বাড়ী ! হালায় চিরজীবন ব্যাবসা কইরা আইলো, এইখানে আইয়া বাড়ী বানাইবার শখ হইছে। আমি কইলাম, বাড়ীখানাতো জবর। হ', জবর! দুইতালা শ্যাস হইবার পর দেখা গেলো, হালায় দাদু, দোতালায় উঠার সিড়িই হালায় বানায় নাই ।

পৌরসভা বাড়ী আটকাইয়া দিসে। হালায় লাইসেন্স দেয় নাই । এখন একখান দোকান ভাইঙ্গা হালায় সিড়ি বানাইবার জন্য পৌরসভার কাছে আর্জি জানাইছে হালায়। পৌরসভা কইছে হালায় দোকান ভাইঙ্গা সিড়ি বানানো যাইবোনা । এখন দাদু এরে ওরে ধইরা বেড়াইতাছে ।

বহুদিন পরে পিছনের দিকের একখান দোকান ভাইঙ্গা পৌরসভা সিড়ি বানাইবার অনুমতি দিছিল। দাদু মইরা গেছে কবে । আইজ চল্লিশ বছর পরও দাদুর বাড়ীর উপর তলা ভাড়া হয় নাই । নিচের দোকানগুলা ভাড়া হইছে। চলতাছে কোনোমতে।

দাদুর ছেলে বাড়ীখান বিক্রি করার বহু চেষ্টা করছিল, বিক্রি হয়নাই । আমার আইজও মাংস ভাত খাওয়া হয়নাই । হালা দাদু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.