আসুন সত্য ইসলামকে জানি এবং অন্যদেরকে জানাই ...
১- নামায
প্রত্যেক মুসলমানই (বালেগ) প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে থাকে। নামায আদায়ের জন্য অবশ্যই প্রথমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ওযু করতে হবে অতঃপর কেবলামুখি হয়ে নিয়ত এবং নামাযের প্রকারটি নির্ধারণ করে তাকবির বলে নামায শুরু করতে হবে। নামাযের নিয়ত নামায সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্যের জন্য হতে হবে এবং এ ব্যতীত অন্য কোন চিন্তা যেন তার সাথে মিশ্রিত না থাকে। যদি নামাজরত অবস্থায় নামাযি নিয়ত ভুলে যায় অথবা লোক দেখানোর জন্য বা প্রদর্শনেচ্ছা থাকে, তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ তাকবির বলা থেকে শুরু এবং তাসলিম (সালাম) দিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যেক নামায দুই, তিন অথবা চার রাকাত বিশিষ্টি (সকালের নামায দুই রাকাত যা ফজরের পর এবং সূর্য উদেয়ের পূর্বে আঞ্জাম দেওয়া হয়। যোহর ও আছরের নামাজ প্রত্যেকটি চার রাকাত করে এবং যোহরের সময় থেকে শুরু করে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত একের পর এক আদায় করা হয়। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত এবং ঈশার নামায চার রাকাত যা মাগরিবের থেকে শুরু করে মধ্যরাতের আগ পর্যন্ত একের পর এক আদায় করা হয়)।
প্রত্যেক রাকাত নামায, কেরায়াত বা যিকির করা, রুকু ও সুজুদের সমষ্টি যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
• প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং কোরআনের অন্য যে কোন একটি সূরা, যেমন তৌহিদ (ইখলাস) বা কদর পাঠ করা হয়। তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা অথবা তিন বার ুতাসবিহাতে আরবাআহ” (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহে ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) পাঠ করা হয়।
• সূরা পাঠ করার পর, নামাযিকে আনত হয়ে রুকু করতে হবে। নামাযি রুকুরত অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও তসবীহ বলে থাকে।
• রুকু শেষে নামাযি কে দাড়াতে হবে অতপর দুটি সেজদা আদায় করতে হবে এবং পূর্বের ন্যায় আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা এবং তসবীহ পাঠ করতে হবে।
• দ্বিতীয় রাকাতে দুই সেজদা আদায় করার পর আল্লাহ তা’আলার একত্বের ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াতের সাক্ষ্য দিয়ে দরুদ অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠ করতে হবে। তিন রাকাতের নামাজগুলির তৃতীয় রাকাতে এবং চার রাকাতের নামাজগুলির চতুর্থ রাকাতে পুনরায় তাশাহুদ পাঠ করতে হবে।
• প্রত্যেক নামাজের শেষ রাকাতগুলিতে তাশাহুদ শেষে হযরত মুহাম্মাদ (সা.), আল্লাহর উপযুক্ত বান্দাদের এবং সমস্ত নামাজিদের প্রতি সালাম প্রেরণ করতে হবে।
প্রত্যহের নামাযগুলিকে ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার স্মরণ করার একটি মূল পদ্ধতি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। আল্লাহ্ তা’য়ালা কোরআন করিমে বলেন: “সত্যিই নামায (মানুষকে) অশোভনীয় ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বোচ্চ উপকারিতা রয়েছে এবং আল্লাহ্ তা’য়ালা যা কিছু আঞ্জাম দেন সে বিষয়ে তিনি সর্বাপেক্ষা অবগত” (সূরা আনকাবুত, আয়াত নং-৪৫)।
২- রোযা
ওয়াজিব ইবাদত সমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে রমজান মাসে (আরবীর নবম মাস) রোজা রাখা। রমজান মাসে প্রত্যেক (বালেগ) মুসালমানই ফজর থেকে মাগরিবের সময় পর্যন্ত খাওয়া, পান করা স্বামী-স্ত্রীর সহবাস এবং অন্যান্য কিছু আমল থেকে বিরত থাকে (কিছু ব্যক্তির জন্য যেমন অসুস্থ ব্যক্তিরা এবং মুসাফিরদের জন্য ফিকাহ শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে রোজা রাখা যাদের জন্য ক্ষতিকর, তাদের জন্য রোজা রাখা জায়েয নয়)।
অন্যান্য ইবাদতসমূহের ন্যায় রোজা অবশ্যই খালেস ও আন্তরিকতার সাথে হতে হবে অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের জন্য আঞ্জাম দিতে হবে। অবশ্য রোজা রাখাতে আল্লাহ্ তা’য়ালার নৈকট্য ছাড়াও অন্যান্য আরো উপকার রয়েছে যেমন, মনস্থির হওয়া এবং দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে মন কে শক্তিশালী করা, আল্লাহ তা’য়ালার দেওয়া নিয়ামতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করা যেমন খাবার যা প্রত্যহ কোন বিবেচনা ছাড়াই ব্যবহার হচ্ছে, দরিদ্র ও অসহায়দের কষ্টগুলি অনুভব করার সম্পদহীনদের সাহায্য করা, যার ফলে ভালবাসা এবং সহযোগিতার অনুভূতিগুলি দৃঢ় হয়, কিয়ামতের দিনের ক্ষুধা ও পিপাসাকে স্মরণ করা, তীব্র আকাঙখা ও জৈবিক চাহিদাগুলিকে দুর্বল করা, যার কারণে বুদ্ধি বৃত্তিক বিকাশ, পরিপক্কতা ও জ্ঞানগত হয় উৎকর্ষ সাধিত এবং নৈতিক গুনাবলী অর্জন করা যায়। রোজার গুরুত্ব সম্পকে কোরআন করীমে বলা হয়েছে: ুতোমরা যারা ঈমান এনেছো! রোজা তোমাদের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে, যেরুপ তোমাদের পূর্ববর্তিগণের জন্যও ওয়াজীব ছিল, যাতে করে খোদাভীরু হও (সূরা বাকারাহ, আয়াত নং-১৮৩)। ”
৩- হজ্ব
প্রত্যেক মুসলমান বালেগ ব্যক্তি যদি আর্থিক এবং শারিরিক ভাবে সক্ষম (মুসতা’তি) হয়ে থাকে অর্থাৎ হজ্ব করার সমস্ত শর্তগুলির অধিকারী হয়ে থাকে, তবে জীবনে অবশ্যই তাকে একবার জিলহজ্ব মাসে (আরবি বারতম মাস) হজ্ব আঞ্জাম দিতে হবে। মক্কা শহরে, মসজিদুল হারাম নামে একটি মসজিদ আছে যা পৃথিবীর সমস্ত মুসালমানদের নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ বলে পরিচিত।
সমস্ত মুসলমান নামাজের সময়, মুখমন্ডল এবং দেহকে চতুষ্কোনবিশিষ্ট) এই কাবাঘর যা মসজিদুল হারামের ভিতরে অবস্থিত, সেদিকে করে নামাজ আদায় করে।
কাবা, পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানের ক্বিলা যা হযরত ইব্রাহীম ও তার সন্তান ইসমাইল (আ.), প্রথম যুগে হযরত আদম (আ.)-এর তৈরি করে রাখা অবশিষ্ট স্তম্ভের উপর, তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে, এই স্থানে (কাবাঘর) চার হাজার বছর পূর্বে তৌহিদের নেতা হযরত ইব্রাহীম খলীল (আ.) উপর ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রতীক রূপ হচ্ছে হজ্ব। হযরত ইব্রাহীম (আ.) একটি দীর্ঘ সফরের পর, মক্কায় ফিরে আসেন, অতঃপর আল্লাহ্ তা’য়ালা তাকে সমস্ত মানুষের জন্য হজ্ব পালন করার সুব্যবস্থা করতে বলেন।
কোরআন এই বিষয়ে বলে: ুএবং যখন ইব্রাহীমের জন্য ঘরের (কাবাঘর) স্থান নির্দিষ্ট করলাম তাকে বলেছিলাম যে আমার সাথে অন্য কিছুর শরিক করোনা এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, নামাজে দণ্ডায়মান ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর এবং মানুষের মাঝে, হজ্ব আদায়ের ঘোষণা দাও যাতে করে হাজ্বিগণ, পদব্রজে ও প্রত্যেক দুর্বল উটের পিঠে আরোহন করে, যারা দূরপথ হতে আসবে- তোমার দিকে আগমন করে এবং নিজেদের কল্যাণসমূহকে লক্ষ্য করে... (সূরা হজ্ব, আয়াত নং-২৬-২৭)।
সেই প্রথম যে ঘর মানুষের জন্য তৈরি হয়েছিল, তা প্রবিত্র মক্কা শহরে এবং পৃথিবীর সমস্ত মানুষের পথপ্রদর্শনের উৎস। যার মাঝে উজ্জল আলোর নিদর্শনসমূহ রয়েছে যেমন, হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর পদমর্যাদা (দণ্ডায়মান হওয়ার স্থান) এবং সেখানে যে প্রবেশ করবে, নিরাপদে থাকবে এবং শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য, ঐ ঘরের (কাবাঘরের) হজ্ব আঞ্জাম দেওয়া মানুষের দায়িত্ব; (অবশ্য), যদি কারো পক্ষে সম্ভব হয় আল্লাহর ঘর জিয়ারত করার (হজ্ব করার) কিন্তু তা থেকে বিরত থাকে এবং অবিশ্বাস করে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’য়ালা বিশ্ববাসীর থেকে অমুখাপেক্ষি (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৯৬-৯৭)।
হজ্ব, স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতাসমূহে পরিপূর্ণ যা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এ সমস্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে হয়তবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এ রকম অভিজ্ঞতা অর্জন করা, নিজেকে মুক্ত করা, ভ্রাতৃত্ব, সমতা ও অনাড়ম্বরতা। প্রত্যেক বছরে, মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলমান পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে, বাড়ি-ঘর, পরিবারবর্গ, কাজ-কর্ম এবং পছন্দনীয় যা কিছুই আছে তা সবই ত্যাগ করে শুষ্ক উত্তপ্ত এই মরুভুমির মাঝে অবস্থিত মক্কার উদ্দেশে রওনা দেয়।
সমস্ত হাজিগণ একই সময়ে একই পোশাকে একই স্থানে সমবেত হয় এবং অনুরূপ আমল আঞ্জাম দেয়। অভাবি ও সম্পদশালী, বাদশাহ ও প্রজা, বিশিষ্ট ও সাধারণ সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং দুখণ্ড সাদা কাপড় পরিধান করে থাকে। হজ্ব এমনই এক অভিজ্ঞতা যা প্রত্যেক মানুষেরই অন্ততপক্ষে একবার অর্জন করা এবং এই অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ বাণী ও শিক্ষাগুলিকে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করা উচিত।
৪- যাকাত
কোরআন এবং সুন্নতে ছদকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক উপদেশ ও উৎসাহ করা হয়েছে এবং অনেক ছওয়াব এই কাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বা সমস্ত কিছুই বিশেষ করে ধন-সম্পদ আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত, তথাপিও কোরআন শরীফে ছদকা দেওয়া এবং আল্লাহর রাস্তায় অর্থ ব্যয় করাকে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার সাথে তুলনা করেছে: “কে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয় ও তার পরিবর্তে আল্লাহ্ তাকে দ্বিগুণ দেন এবং তার জন্যে উত্তম পুরস্কার নির্ধারন করেন?” (সূরা হাদীদ, আয়াত নং-১১)।
মুস্তাহাব ছদকাগুলি ছাড়াও কিছু ছদকা এবং দান ওয়াজিব যেমন: যাকাত, যা ধন-সম্পদের একপ্রকার কর স্বরুপ। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে কোরআন করীমের দৃষ্টিকোণ থেকে, যাকাত দান করা, অভাবি ও দরিদ্রদের জন্য একটি পুরস্কার নয়, বরং সম্পদশালীদের তাদের অধিকার বলে গণ্য হয়েছে। কোরআনে এই বিষয়ে বলা হয়েছে: “এবং তাদের ধন-সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদেরও অধিকার রয়েছে (সূরা যারিয়াত, আয়াত নং-১৯)। ”
ইমাম আলী (আ.) এইরূপ বলেন: আল্লাহ তা’আলা দরিদ্রদের রুজি ধনীদের সম্পদে রেখেছেন। অর্থাৎ যখনই কোন অভাবি ক্ষুধার্ত থাকবে, নিশ্চয়ই কোন ধনীব্যক্তি তার অংশটি প্রদান করেনি (ইমাম আলী (আ.), নাহজুল বালাগাহ, ফেইযুল ইসলাম, হিকমত ৩২০)।
যারা নির্দিষ্ট পরিমাণে গম, যব, খোরমা, কিসমিস, সোনা, রোপা, উট, গরু এবং ছাগলের অধিকারী, দ্বীনি আহকামের শর্ত অনুযায়ী (যা ফিকাহ শাস্ত্রে বলা হয়েছে) অবশ্যই প্রত্যেক বছরে তাদের ধন-সম্পদের কিছু অংশ (সাধারণত ২.৫%), নিজের অভাবগ্রস্ত আ্তীয়-স্বজনদের, এতিমদের, অভাবিদের, বিপদে পথে রয়ে যাওয়া এমন কাউকে (ইবনুছ্ ছাবিল) দিতে হবে অথবা সর্বসাধারণের কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে যেমন স্কুল, রাস্তা নির্মাণ বা এরূপ কোন কাজে ব্যবহার করতে হবে।
এই বিষয়টি খুবই আকর্ষণীয় যে কুরআনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যাকাত দেওয়ার কথাটি নামায প্রতিষ্ঠার পাশে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং ঈমানের একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেরূপ পূর্বেও বলা হয়েছে যাকাত দান করা ইবাদতের অন্যতম রূপ, আর সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এবং খালেস নিয়তে আঞ্জাম দিতে হবে। সুতরাং যাকাত, নিঃস্ব ও অসহায়দেরকে একপ্রকার সাহায্য করে। এছাড়া সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বরং যাকাত প্রদানকারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যেমন তাদেরকে হীনতা ও দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে বিরত রাখে।
কোরআনে বলা হয়েছে: “তাদের ধন-সম্পদ থেকে ছদকা গ্রহণ কর যাতে করে ঐ উছিলায় তাদেরকে সংশোধন ও পবিত্র করা যায় এবং তাদের জন্য দোয়া কর, কেননা তোমার দোয়া তাদের জন্য শান্তিদায়ক, আল্লাহ্ তা’য়ালা বিজ্ঞ এবং সর্বশ্রোতা (সূরা তওবা, আয়াত নং- ১০৩)।
৫- খুমস
শিয়া মুসলমানরা যাকাত ব্যতীত, আরেক প্রকার ওয়াজীব ছদকা দিয়ে থাকে যাকে “খুমস” বলা হয়। আরবি ভাষায় খুমস শব্দের অর্থ হচ্ছে এক পঞ্চমাংশ। এখানে খুমসের অর্থ, একপ্রকার “কর” যার পরিমান এক বছরের আয়ের অতিরিক্ত হতে এক পঞ্চমাংশ দান করা; অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তি তার আর্থিক বছরের শেষে, নিজ খরচপাতি হিসাব করার পর তা থেকে অবশিষ্ট অর্থ যা নিজ ব্যবসা বা পেশা থেকে উপার্জন করেছে তার পাঁচের এক অংশ দান করাকে খুমস বলা হয়।
অবশ্য খুমস আদায়ের জন্য অন্যান্য আরো বিষয় আছে যা ধর্মীয় ফিকাহ গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে।
খুমস ওয়াজীব হওয়ার বিভিন্ন দলিলগুলি কোরআন এবং হাদীস সমূহে বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কোরআন শরীফে বলা হয়েছে: “এবং জেনে রেখ যা কিছুই গনিমতস্বরুপ তোমাদের হস্তগত হয়েছে, তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তার পয়গম্বর ও তার পরিবারবর্গ, এতিমদের, দরিদ্রদের এবং (মুসাফির) বিপদে পতিত ব্যক্তিদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহ তা’আলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখ এবং যা কিছু তার বান্দাদের উপর সেই পৃথক (হক্ব ও বাতিল) করার দিনে -যেদিনঐ দুই দল পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল- নাযিল করেছি, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান” (সূরা আনফাল, আয়াত নং-৪১)।
আহলে সুন্নতের মুসলমানরা, এই আয়াতটি এবং খুমস প্রদান করার ওয়াজীব হুকুমটিকে শুধুমাত্র যুদ্ধে শত্রুপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের উপর প্রযোজ্য মনে করে এবং যাকাতের আরেকটি সূত্র বলে গণ্য করে। শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ বিশ্বাস করে যে গনিমত এবং লভ্যাংশ, শুধুমাত্র যুদ্ধের গনিমতের জন্য নির্ধারিত নয় বরং সর্বপ্রকার আয় (পেশা বা ব্যবসার মুনাফা) এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যার বিস্তারিত বর্ণনা আহকামের গ্রন্থগুলিতে দেওয়া হয়েছে।
অবশেষে এই বিষয়টি বলা প্রয়োজন যে শিয়া মাযহাবের অনুসারীদের ফিকাহ মতে, খুমসের অর্ধেক অংশ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একমাত্র স্থলাভিষিক্ত ও তার পরিবারের সদস্য ইমাম মাহদী (আ.)-এর, বাকি অর্ধেক অংশ দরিদ্র সৈয়্যদদের দিতে হবে।
খুমস শুধমাত্র ধর্মীয় নেতা অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য ও পরিপূর্ণ যোগ্যতার অধিকারী ধর্মীয় নেতার অর্থাৎ ধর্মীয় কাজগুলি সম্পাদন করতে যাকে সেই ব্যক্তি অনুসরণ করে, তার অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারে। এই অর্থে খুমসের অর্ধেক যুগের ইমাম, ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অংশ, ধর্মীয় নেতার তত্ত্বাবধানে এবং তার নির্দেশনায়, এমন কিছু কাজে যাতে ইমামে জামান অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন যেমন; ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মূল্যবান বইগুলি ছাপানো, আলেমগণের প্রশিক্ষণ এবং ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে মুসলিম ধর্মপ্রচারকদের খরচাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।
৬- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজের ও সকল মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্যে চেষ্টা ও সংগ্রাম করা। আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেন: “তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে তৈরি করেছেন এবং তোমাদের কাছে চেয়েছেন যে তোমরা সেটিকে আবাদ কর” (সূরা হুদ, আয়াত নং-৬১)।
পবিত্র কোরআন ও হাদীস গ্রন্থ সমূহে মানুষের সমস্যাদির প্রতি অমনোযোগী থাকা বা নিজ জীবনের প্রতি নিস্পৃহ ও অলসতাকারীকে তিরস্কার করা হয়েছে।
অপরদিকে, যারা জীবনের অবস্থার উন্নতির জন্য, নিজ এবং আ্তীয়-স্বজনের খরচাদির জন্য চেষ্টা করে, তাদেরকে উৎসাহ দান করে আল্লাহর পথে জিহাদকারী উপাধিতে ভুষিত করেছে। জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি চেষ্টা ও সংগ্রাম হচ্ছে, আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের অধিকারকে প্রতিরক্ষা করা যেমন; স্বাধীনতা, মূল্যবোধ সমূহ যেমন, ন্যায়, আত্মসম্মান ও সার্বভৌমত্ত্ব ইত্যাদি। যখনই এরূপ কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার এবং মূল্যবোধ ক্ষতি অথবা হুমকির সম্মুখীন হয়, তখনই তা পুনর্জাগরণের জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, বিশেষত: যখন কোন মূল্যবোধ ব্যক্তি স্বার্থের সীমা পেরিয়ে একটি উম্মত ও জাতির স্বার্থ ও অধিকারের আগ্রাসীদের পক্ষ থেকে ধবংসের মুখোমুখি হয় তখন তা রক্ষায় সংগ্রাম করা অপরিহার্য্য।
কোরআন করীমে বলা হয়েছে: “যাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে (তাদের) অনুমতি দেওয়া হয়েছে; কেননা তারা নির্যাতিত হয়েছে এবং অবশ্যই আল্লাহ্ তা’য়ালা তাদের জয়ী করাতে সর্বশক্তিমান”। “যারা অন্যায়ভাবে নিজ বাসস্থান থেকে বহিষকৃত হয়েছে, তাদের “আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতিপালক” এই কথা বলা ব্যতীত কোন অপরাধ ছিল না, আর যদি আল্লাহ্ তা’য়ালা এক গোষ্ঠীর দ্বারা অপর একটি গোষ্ঠীকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিভিন্ন প্রার্থনার স্থানগুলি যেমন; সন্ন্যাসীদের আশ্রম, খৃস্টানদের গীর্জা, ইহুদীদের উপাসনালয়ে এবং বিভিন্ন মসজিদে যেখানে খুবই বেশী আল্লাহর স্মরণ করা হয়, বিধবস্ত হয়ে যেত; অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালা সহায়তা দেবেন যে তার দীনকে সহায়তা করবে; কেননা আল্লাহ্ তা’য়ালা অপরাজেয় এবং শক্তিমান” “তারা এমন যে, যদি পৃথিবীতে তাদেরকে ক্ষমতা দেয়া হয় তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত প্রদা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।