আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিয়া মাযহাবের আক্বিদাসমূহ

আসুন সত্য ইসলামকে জানি এবং অন্যদেরকে জানাই ...

ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, মুসলমানদের মধ্যে আক্বাইদ এবং অন্যান্য বিষয়ে মতবিরোধ থাকা সত্বেও শুধুমাত্র বিশ্বাসগত বিষয়েই নয় বরং আমল সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কোরআন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি মুসলমানদের ভালবাসা ও আন্তরিক ভক্তিই হচ্ছে, মুসলমানদের এই ঐক্যের কারণ এবং তাদেরকে একই সত্তার, একই উত্তরাধিকার, একই উদ্দেশ্যের, একই পরিণতির এবং একই ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারী করে গড়ে তুলেছে। ইসলামের শত্রুদের শত্রুতা যারা সর্বদা ইসলাম ধর্মকে উত্খাত করার চেষ্টা করছে এবং বর্তমান যুগের ইসলাম বিরোধী চ্যালেঞ্জসমূহ, মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব জাগ্রত এবং তাদের ঐক্যের অনুভুতিকে শক্তিশালী করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। কোরআন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের আহবান ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের পক্ষ থেকে সর্বদা আগ্রহ এবং গুরুত্ব লাভ করেছে। আক্বাইদের ক্ষেত্রে, সমস্ত মুসলমানরা সর্বজনীনভাবে তৌহিদ, নবীগণ এবং আল্লাহ্ তা'য়ালার প্রতি বিশ্বাস রাখে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর রিসালাত যা মানব জাতির জন্য আল্লাহ্ তা'য়ালার সর্বশেষ বার্তা, তাঁর প্রতি বিশেষভাবে বিশ্বাস রাখে এছাড়া প্রত্যাবর্তন দিবস এবং সমস্ত মানুষের পরজগতে হিসাব গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য রাখে।

এ সমস্ত বিশ্বাসসমূহ হচ্ছে ইসলামের মৌল উপাদান এবং সমস্ত মুসলমানরা এ বিষয়গুলিতে বিশ্বাসী এবং অপরিহার্য জ্ঞান মনে করে। শিয়া ও সুন্নী মাযহাবের মধ্যে পারষপরিক মিল সম্পর্কে অন্যধর্মী এক প্রত্যক্ষকারী এরূপ বলেছে: ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে সবাই জানে যে শিয়া মাযহাবের অনুসারীরাও অন্যান্য মুসলমান এবং আহলে সুন্নতের ন্যায় মৌলিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যেমন, তৌহিদ, পবিত্র গ্রন্থ (কোরআন), পয়গম্বর (হযরত মুহাম্মদ), পরজগত ও শেষ দিবসের শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে সমবিশ্বাসী এবং মৌল কর্তব্যসমূহ যেমন নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ও জিহাদ (প্রবিত্র যুদ্ধ), এ সকল ক্ষেত্রে নিজেদেরেকে দায়িত্ববান মনে করে এবং এ সমস্ত সাধারণ বিষয়সমূহ কিছু বিষয়ে থাকা মতবিরোধ অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তত্ত্বগত দিক থেকে, শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ সুন্নি মাযহাবের ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করা (বা এর বিপরীতে সুন্নীগণ শিয়া ইমামের পিছনে) কোন প্রকার অসুবিধা মনে করে না। যদিও বা অতীতে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন ছিল এবং বর্তমানেও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তার কিছু অংশ বাকি আছে (রিচার্ড, শিয়া মাযহাবের ইসলাম, পৃ.-৫ (সংক্ষিপ্তাকারে))। পরবর্তী আলোচনায় উছুলে দ্বীন এবং শিয়াদের বিশিষ্ট কিছু মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়সমূহ নিয়ে পর্যালোচনা করব।

উছুলে দীন ১-তৌহিদ ইসলামের প্রতি বিশ্বাস, দুটি বিষয়ে স্বীকৃতিদান ও মৌখিক প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকে: এক আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ (অর্থাৎ উপাসনা করার মত যথাযথ কোন সত্তা) নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'য়ালার প্রেরিত নবী, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ'। যে কেউ এ দুটি বিষয়ের সাক্ষ্য দিবে তাকে মুসলমান বলে গন্য করা হবে। সমস্ত মুসলমানরা বিশ্বাসী যে আল্লাহ্ তা'য়ালা এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহর কোন শরিক, জীবন সঙ্গী ও সন্তান-সন্ততি নেই। আল্লাহ হচ্ছেন প্রথম এবং শেষ, আল্লাহ্ তা'য়ালা সমস্ত বিষয়ে জ্ঞানী, পরম ক্ষমতাবান এবং সর্বস্থানে উপস্থিত আছেন।

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, আল্লাহ্ তা'য়ালা মানুষের ঘাড়ের শিরা অপেক্ষা নিকটে কিন্তু তাঁকে দেখা যায় না এবং মানুষের জ্ঞান তাঁকে উপলব্ধিতে অক্ষম। ইমাম আলী (আ.) তাঁর একটি মুনাজাতে আল্লাহ্ তা'য়ালার উদ্দেশ্যে এরূপ বলেন: হে খোদা! আমি তোমার কাছে, তোমার আল্লাহ, রহমান ও রাহীম নামের কসম দিয়ে প্রার্থনা করছি, হে মহিমান্বিত ও উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন, হে স্বয়ং সম্পন্ন অনির্ভরশীল, হে চিরন্তন, তুমি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই। ২-আদল শিয়াগণ আল্লাহ তা'য়ালার বিশিষ্ট গুণাবলীর মধ্যে, তৌহিদের পর ন্যায় পরায়ণতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকে। অবশ্য সমস্ত মুসলমানরাই আল্লাহর ন্যায় পরায়ণতার প্রতি বিশ্বাস রাখে, অর্থাৎ এই বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখে যে আল্লাহ্ তা'য়ালা কখনই তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যাচার করেন নি এবং কোনক্রমেই আত্যাচার করাকে বৈধ মনে করেন না। এই সত্যতা পরিস্কারভাবে কোরআনে প্রকাশ পেয়েছে উদাহরণ স্বরূপ: 'আল্লাহ্ তা'য়ালা তার নিজ বান্দাদের প্রতি কোনরূপ জুলুম করেন না' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৮২), (সূরা আনফাল, আয়াত নং-৫১) ও (সূরা হজ্ব, আয়াত নং- ১০)।

'তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোনপ্রকার অত্যাচার করেন না' (সূরা ফুছছেলাত, আয়াত নং- ৪৬) 'নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'য়ালা তার বান্দাদের প্রতি ন্যুনতম পরিমাণেও অত্যাচার করেন না' (সূরা নিসা, আয়াত নং-৪০) 'নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'য়ালা মানব জাতির প্রতি কোনরূপ অত্যাচার করেন না, তবে এই মানব জাতি নিজেরাই নিজেদের প্রতি অত্যাচার করে থাকে'। (সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ৪৬) সত্তাগত গুরত্ব ছাড়া শিয়া মাযহাবের অনুসারীদের আল্লাহ্ তা'য়ালার ন্যায়পরায়ণতার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের কারণ হচ্ছে; আহলে সুন্নতের এক শ্রেণী এই মতে বিশ্বাসী যে, ভাল এবং মন্দ চরিত্র নির্ণয়ের জন্য বিশিষ্ট কোন মানদণ্ড নির্ধারিত নেই। তাদের দৃষ্টিতে 'ভাল' হল তা যা কিছু আল্লাহ্ তা'য়ালা করেন বা হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং যা কিছু আল্লাহ্ তা'য়ালা করেন অথবা হুকুম দিয়ে থাকেন তাই, ভাল এবং ন্যায় বলে গণ্য করে। এই উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই বলতে হবে যদি আল্লাহ আমাদের কাছে চাইতেন যে আমরা মিথ্যা বলি, তাহলে মিথ্যা বলা একটি ভাল কাজ এবং যদি আল্লাহ্ তা'য়ালা পরহেজগার ও খোদাভীরু ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামে পাঠানোর হুকুম দেন, তাহলে সেটি ন্যায় সঙ্গত কাজ বলে গণ্য হবে।

যদিও বা তারা বিশ্বাসী যে আল্লাহ্ তা'য়ালা সত্য বলতে আদেশ দিয়েছেন এবং কখনই উত্তম ব্যক্তিদের জাহান্নামে পাঠানোর নির্দেশ দিবেন না। তবে এটি শুধুমাত্র এ কারণে যে আল্লাহ্ তা'য়ালা এরুপ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যদি এর ব্যতিক্রম কোন সিদ্ধান্ত নিতেন, তবুও কোনরূপ অসুবিধা থাকত না। (অর্থাৎ মানুষের কোনরূপ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতা নেই) আহলে সুন্নতের এই মতে বিশ্বসীদেরকে 'আশ'আরী' বলা হয়। অনুরূপ এই শ্রেণী বিশ্বাস করে যে মানুষের নিজেদের কর্মের ক্ষেত্রে কোন স্বাধীনতা নেই এবং আল্লাহ্ তা'য়ালার ইচ্ছায়ই তাদের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং তাদের কার্যাবলিতে নিজেদের কোন ভূমিকা নেই ও সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইচ্ছাতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ এবং আহলে সুন্নতের অপর এক দল কালাম শাস্ত্রবিদ যারা 'মো'তাযিলা' নামে প্রসিদ্ধ বিশ্বাস করে যে, ভাল ও মন্দ এবং সঠিক ও ভুল সত্তাগত একটি বিষয় যার কারণে নৈতিক বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে বুদ্ধি বৃত্তির মানদণ্ড রয়েছে।

অন্যার্থে, তারা সত্তাগত ভাল-মন্দ ও বিবেকগত ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাসী। তারা এই মতে বিশ্বাসী যে, ন্যায় এবং জুলুম সত্যিকার অর্থে একে অপরের বিপরীত এবং এরূপ নয় যে অর্থহীনভাবে আল্লাহ্ তা'য়ালা আমাদেরকে নীতিবান হতে বলেছেন এবং কারো প্রতি (যদিও সে শত্রু হয়ে থাকে) জুলুম করা থেকে বিরত থাকতে হুকুম দিয়েছেন। তারা আরো বিশ্বাসী যে প্রত্যেক মানুষ তার নিজ কার্যাবলীর ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং তার কর্মের প্রতি সে নিজেই দায়িত্বশীল। অবশ্য মো'তাযিলারা 'সমর্পণ' অর্থাৎ মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তা'আলা তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মানুষের স্বাধীনকর্মের ক্ষেত্রে মানুষেরই হাতে অর্পণ করেছেন অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষই তার নিজ কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ ক্ষমতাশীল। কিন্তু শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ মানুষের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও, বিশ্বাসী যে মানুষের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা সীমিত এবং কোন মানুষের কর্মই, আল্লাহ তা'য়ালার ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের আওতার বাইরে নয়।

এই সত্য ইমাম সাদিক (আ.)-এর প্রসিদ্ধ এক উক্তিতে বলা হয়েছে: 'না বাধ্য করা না সমর্পণ করা বরং এদুটি বিষয়ের মধ্যবর্তী একটি বিষয়'। প্রত্যেক পদক্ষেপে এই বিষয়ের গুরুত্বের কারণে শিয়ারা আল্লাহর ন্যায় পরায়ণতার উপর অতি গুরুত্বারোপ করেছে এবং ন্যায় পরায়ণতার বিষয়কে তৌহিদ, নবুওয়াত ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসের (যা সমস্ত মুসলমানরা এমনকি অন্যান্য আসমানী ধর্ম বিশ্বাসিগণও বিশ্বাস করে থাকে) সাথে উছুলে দ্বীন হিসেবে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ্ তা'য়ালার ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টি, শুধুমাত্র আক্বাইদ ও তত্ত্বগত দিক থেকেই শিয়াদের নিকট গুরুত্ব রাখে না বরং শিয়ারা ন্যায় পরায়ণতা বিষয়টিকে ইসলামের একটি মূল উপাদান বলে মনে করে থাকে এবং বিশ্বাস করে যে সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই মূলভিত্তিকে একটি সামাজিক রূপ দেওয়া উচিৎ। আর এই কারণেই ইসলামী ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে আদালত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসমূহ শিয়াদের পক্ষ থেকেই বেশী হয়েছে। ৩-নবুওয়াত আল্লাহ্ তা'আলা সমগ্র মানবজাতিকে তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং প্রজ্ঞার ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন (সূরা যারিয়াত, আয়াত নং-৫৬।

আল্লাহ্ তা'য়ালা প্রত্যেক মানুষকে জ্ঞান এবং স্বাধীনতা দিয়েছেন যাতে করে নিজেদের সৌভাগ্য ও পরিপূর্ণতার পথ নিজেরাই নির্বাচন করে এবং আল্লাহ্ তা'য়ালা মানুষের জ্ঞানকে তাঁর ওহীর মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেছেন। আল্লাহ্ তা'য়ালা তার প্রজ্ঞা ও ন্যায় পরায়ণতায় কোন জাতিকে হেদায়াতকারী এবং পথপ্রদর্শক ব্যতীত সৃষ্টি করেন নি। আল্লাহ্ তা'য়ালা প্রত্যেক জাতির প্রতি নবী প্রেরণ করেছেন যাতে করে তাদেরকে শিক্ষাদান এবং তাদেরকে হেদায়াত করে (সূরা রূম, আয়াত নং-৪৭)। সর্বপ্রথম পয়গম্বর হচ্ছে হযরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ পয়গম্বর হচ্ছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) (সূরা রূম, আয়াত নং-৪০)। কোরআন করীমে সর্বমোট ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ সংখ্যার অধিক নবী আছেন বলে ইংগিত করেছে (সূরা গাফির, আয়াত নং-৭৮)।

হাদীসসমূহ অনুযায়ী মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, ১,২৪,০০০ জন নবী আল্লাহ্ তা'য়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছে এবং যে সমস্ত নবীর নাম কোরআনে উল্লেখ হয়েছেন যেমন: হযরত আদম, নুহ, ইব্রহীম, ইসমাইল, ইসহাক্ব, লুত, ইয়াকুব, ইউসুফ, আইয়্যুব, মুসা, হারুন, খিযর, দাউদ, সুলাইমান, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি ইংগিত করা যেতে পারে। নবীগণের মধ্যে পাঁচজন পয়গম্বর শরীয়তের অধিকারী এবং নবুওয়াতর বিশ্বজনীন দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন: হযরত নুহ, ইব্রাহীম, মুসা, ঈসা এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। এই পাঁচজনকে 'উলুল আযম' অর্থাৎ দৃঢ় সিদ্ধান্ত এবং ইচ্ছাশক্তির অধিকারী বলা হয়। কোরআনের অনুরূপ, চারটি আসমনী কিতাবের নাম কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে: 'সহিফা' হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কিতাব, (সূরা আ'লা, আয়াত নং-১৯) 'যাবুর' হযরত দাউদ (আ.)-এর কিতাব, (সূরা নিসা, আয়াত নং-৬৩, সূরা ইসরা, আয়াত নং-৫৫) 'তওরাত' হযরত মুসা (আ.)-এর কিতাব, (সূরা বাকারা, আয়াত নং-৮৭, সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৩-৪) 'ইনজিল' হযরত ঈসা (আ.)-এর কিতাব (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং-৪৬)। প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই প্রত্যেকটি আসমানী কিতাবের (সূরা বাকারা, আয়াত নং-৪,২৮৫) এবং সমস্ত পয়গম্বরের (সূরা নিসা, আয়াত নং-১৫২) প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।

ঠিক পরবর্তীতে যেরূপ উল্লেখ করা হবে যে, শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ বিশ্বাস করে যে, সকল নবীগণ মা'ছুম অর্থাৎ নিষপাপ ছিলেন। শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণও অন্যান্য মুসলমানদের ন্যায় ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর চিরন্তন রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে থাকে। শিয়া মাযহাবের অনুসারীদের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পরিপূর্ণ একজন আদর্শ ব্যক্তি, এবং সুগভীরভাবে আল্লাহ রাববুল আলামিনকে জানার নমুনা, আল্লাহ্ তা'য়ালার প্রতি বশ্যতা এবং সম্পূর্ণরূপে আত্মোসমর্পণের প্রতীক, আল্লাহ্ তা'য়ালার ইচ্ছার প্রতি আন্তরিকভাবে আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন, সত্তাগত মর্যাদা ও অনুগ্রহ এবং অন্যান্য বহুদিক থেকে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য হচ্ছেন রহমত স্বরূপ। আল্লাহ রাববুল আ'লামিনের পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সমস্ত মানুষের জন্যে, সর্বশেষ বাণী এবং আল্লাহ তা'য়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে মনোনীত হওয়ার বিষয়টি কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। ওহী প্রাপ্তি এবং আল্লাহ্ তা'য়ালার শ্রোতা ও মুখপাত্র হওয়ার জন্য অবশ্যই বিশেষ যোগ্যতা এবং ধারণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া উচিত্ অতএব স্বাভাবিকভাবেই পরিপূর্ণ ওহী প্রাপ্তির জন্য অবশ্যই সর্বপ্রকারের যোগ্যতা এবং উপযুক্ততার অধিকারী হতে হবে।

হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নৈতিক চরিত্র এবং ব্যবহার ইসলামের অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শিশুকাল থেকেই আমানতদারী, বিশ্বস্ততা ও আত্মসংযমে প্রসিদ্ধ ছিল। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) রিসালাতের সময়কালের পুরোটাই ইসলামের মূলনীতি এবং মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সহজ ও কঠিন পরিস্থিতিতে, নিরাপত্তা ও ভয়ে, যুদ্ধে ও সন্ধিতে, জয়ে ও পরাজয়ে সর্বদা বিনয়ের প্রতীক, ন্যায় পরায়ণ ও প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এতই বেশী নম্রতা ও বিনয়ের অধিকারী ছিলেন যে, কখনই আত্মোগর্ব করেন নি ও নিজেকে বড় বলে পরিচয় দান করেননি এবং কখনই তিনি নিজেকে অন্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন না এবং কখনই বিলাসিতা ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনকে পছন্দ করতেন না।

হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের সকল অবস্থায় একরূপ ছিলেন অর্থাৎ যখন বাহ্যিকভাবে (দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে) অক্ষম এবং একাকি ছিলেন এবং যখন সমস্ত আরবদের উপর হুকুমাত করতেন ও সমস্ত মুসলমানরা আন্তরিকভাবে তার অনুসরণ করত এমনকি তার ওজু করা পানিকে বরকতময় বলে নিয়ে যেত তার জীবন পদ্ধতি, একরূপ ছিল এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পূর্বের ন্যায়ই জীবন যাপন করতেন এবং তাঁর জীবন পদ্ধতিতে কোন পরিবর্তন করেন নি। হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন অতি অনাড়ম্বর ও মানুষের পাশে থেকে বিশেষ করে অভাবিদের সাথে থেকে কাটাতেন। তার কোন অমাত্য ও দরবারী ছিলনা এবং সৈন্যদল তাকে হেফাজত করত না। যখন তার সঙ্গী ও সাহাবাদের সাথে একত্রে বসতেন তখন নবাগত কেউ কখনই তার স্থান, বসার ভাব বা পরিধানকৃত পোশাক থেকে, বুঝতে পারত না যে কোন ব্যক্তি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বক্তৃতা এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বই ছিল অন্যান্যদের থেকে পৃথক করার পন্থা।

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এতই বেশী ন্যায় পরায়ন ছিলেন যে কখনই কারো হক্বের প্রতি এমনকি তার শত্রুদের প্রতিও অত্যাচার করাকে বৈধ মনে করতেন না। তিনি তার নিজ জীবনে কোরআনে উল্লেখিত এই সত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন: 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্য সাক্ষ্য প্রদান কর এবং কখনই যেন কোন গোত্রের শত্রুতা তোমাদের ন্যায় প্রতিষ্ঠা হতে বিরত না রাখে, ন্যায় বিচার কর যা ধর্মানুরাগের অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহ্ তা'য়ালাকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ রাববুল আলামিন তোমাদের সমস্ত কৃতকর্মের বিষয়ে অবগত আছেন' (সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং-৮)। যুদ্ধের পূর্বে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বদা তার সৈন্যদের নির্দেশ দিতেন যে নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ এবং যারা আত্মোসমর্পণ করেছে, তাদের প্রতি যেন অত্যাচার না করে, চাষাবাদের জমি ও বাগানসমূহের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না করে, যুদ্ধ ময়দান থেকে পলায়নরতদের পশ্চাদ্ধাবন না করে এবং বন্দীদের প্রতি সহৃদয় থাকে। হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওফাতের কিছু পূর্বে মসজিদে সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্যে এরূপ বলেন যে, তার কাছে যদি কারো হক্ব থে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.