আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুছে যাচ্ছে বেগম রোকেয়ার বাড়ির শেষ চিহ্ন

৫ বছর শেষ করে স্থপতি হতে যাচ্ছি,আর কিছু না হলেও শিখেছি আমরা দরিদ্র জাতি না। দারি্দ্রতা অাছে স্বপ্

যার হাত ধরে এ ভূ-খণ্ডের নারীদের সচেতন হয়ে ওঠা, নীরবতা ভেঙে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখা, সেই মহিয়সী বেগম রোকেয়ার পায়রাবন্দ গ্রামের বসত বাড়ির শেষ চিহ্নও মুছে যেতে বসেছে। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত 'বেগম রোকেয়া স্মৃতি কমপ্লেক্সটি' সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ। অথচ ৯ ডিসেম্বর তার আরেকটি জন্মদিন পালন করবে বাংলাদেশ। রোকেয়ার গ্রাম ঘুরে এসে লিখছেন লিয়াকত আলী বাদল।

পায়রাবন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটার ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই। কিছু ইটের গাথুনী দাঁড়িয়ে আছে। বাস্তভিটার অস্তিত্ব অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইটের যে কয়টি দেয়াল এখনো টিকে আছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণেও কোন পদক্ষেপ নেই। এ স্মৃতিচিহ্ন টুকুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন প্রতœতত্ত্ববিদরা।

রংপুর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বেগম রোকেয়ার বাস্তভিটার ধংসাবশেষ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিলেও সেখানে একটি সাইন বোর্ড লাগানো ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। এ ব্যাাপারে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, এমনিতেই বাড়ির কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু যতটুকুই ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তাও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে । সেখানে কর্মরত দারোয়ান হবিবর জানালেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে কাজ করেছেন। কিছুদিন হলো জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, "যে দুটি ইটের গাঁথুনী দাঁড়িয়ে আছে তা যে কোন মুহূর্তে ধসে যেতে পারে। " স্মৃতি কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে তালা ঝুলছে। বেগম রোকেয়ার বাড়ির পাশেই ২০০১ সালের ১ জুলাই প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স। এ কমপ্লেক্সে দুস্থ মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গান শেখা, বেগম রোকেয়ার বিভিন্ন সাহিত্য কর্ম নিয়ে গবেষণা করার জন্য রয়েছে গ্রন্থাগার ও একটি মিলনায়তন। এ ছাড়াও বিদেশি পর্যটকসহ গবেষণা করতে আসা অতিথিদের আছে আধুনিক গেষ্ট হাউজ, কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট ডরমেটরি।

বাংলা একাডেমির সরাসরি তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হয়ে আসছিলো। কমপ্লেক্স পরিচালনায় নিয়োগ করা হয়েছিল একজন উপ-পরিচালকসহ ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি। কিন্তু ২০০৪ সালের জুন মাস থেকে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে কর্মকর্তা- কর্মচারিরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। সেই থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে স্মৃতি কমপ্লেক্সটি বন্ধ।

বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতি কেন্দ্রটি চালু করার উদ্যেগ নিয়েছিলো। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র পরিদর্শন করে সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। চলতি বছর রোকেয়া দিবসের আগেই কেন্দ্রটি চালু করা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেয়া হবে। এ ব্যাাপারে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্লোল কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কমপ্লেক্সটি চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা যাবে" রংপুর রোকেয়া ফোরামের সহসভাপতি কবি এম এ বাশার বলেন, "আমরা কথা অনেক বলি, প্রতিশ্র"তি দেই কিন্তু বাস্তবায়ন করি না। " তিনি বলেন, "বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক রংপুরে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন চলতি বছরেই এটি চালু হবে কিন্তু হলো না। তিনি অবিলম্বে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করে স্মৃতি কমপ্লেক্সটি চালু করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। বেগম রোকেয়া রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর।

তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ বানী দিয়েছেন। তারা বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নারী জাগরণে তাঁর অসামন্য অবদানের কথা বলেন। এদিকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম সাইফুর রহমান ও অস্থায়ী মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং দলের কারা অন্তরীন চেয়ারপার্সনের মনোনীত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন পৃথক পৃথক বানীতে উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। রোববার বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রংপুরের জেলা প্রশাসন।

এর মধ্যে রয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.