"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"
'প্রোষিতভর্তৃকা' অর্থাত যে নারীর স্বামী বিদেশে থাকেন। এমন একটা এক কথায় প্রকাশ আমরা ছোটবেলায় সবাই মোটামুটি পড়েছি। বিদেশী প্রবাসী স্বামীদের স্ত্রীরা দেশে কেমন থাকেন? স্বামীরাই বা বিদেশে কেমন থাকেন? তা নিয়ে ভালোই লেখালেখি হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। বর্তমানে এসব প্রবাসী মানুষদের সাথে একটা জিনিস বেশ ভালোভাবেই যুক্ত হচ্ছে তা হলো বিদেশ থেকে বয়ে নিয়ে আসা রোগের সম্ভাবনা।
যে কোন দেশে যাবার আগে আমরা দেখি সংক্রামক কোন ব্যাধি আছে কি না তা পরীক্ষা করে নেয়া হয়। আমি শ্রম বিক্রি করতে যাচ্ছেন এমন মানুষদের কথা বলছি। এই গোষ্ঠী যখন আপন দেশে ফিরছেন তখন আর কোন পরীক্ষার সম্মুখীন না হওয়াতে, ফেরত আসা, বা ছুটিতে আসা মানুষদের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর এমন ই একটা রোগ হচ্ছে 'এইডস'। এইডস এর সংক্রমণ যে ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায় তার নাম হলো 'এইচআইভি'।
২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সময় বাংলাদেশে ৮৭৪ জন মানুষ 'এইডস' এর ভাইরাস 'এইচআইভি' বহন করছিলেন যার মধ্যে ২৪০জন এইডস এ আক্রান্ত। অর্থাত এইচআইভি ভাইরাস এই ২৪০জন মানুষের শরীরে সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করেছে।
অনেকেই বলে থাকেন বাংলাদেশে এইডস এর সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারেই নেই। এখানকার মানুষ ধর্মভীরু। অনাচারের জীবন কম যাপন করে।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে কম মাত্রায় হলেও আমাদের দেশে এইডস ছড়াচ্ছে। এবং আমাদের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের তেমন কোন সমন্বিত উদ্যোগ না থাকাতে সংক্রমণ ব্যাপকহারে দেখা দিলে তা মহামারীর আকার ধারণ করবে।
আইসিডিডিআর,বি কয়েকটি জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করেছে যাদের মাধ্যমে এইডস ছড়ানোর আশংকা বেশি। যৌনকর্মী, ট্রাক ড্রাইভার, মাদকসেবী, পেশাদার রক্তবিক্রেতা, প্রবাসে কর্মরত শ্রমিক ও অন্যান্য পেশাজীবি তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ছয় বছরে শহরাঞ্চলে মাদকসেবীদের মাঝে এইচআইভি ভাইরাসের দৌরাত্ম্য ১.৭% থেকে বেড়ে ৭% দাঁড়িয়েছে।
এই পরিসংখ্যানই আমাদের বুঝিয়ে দেয় কতটা ঝুঁকি আসলে প্রতিদিন বাড়ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এইডস আক্রান্ত মায়েদের মাত্র নয় শতাংশ চিকিতসা সুবিধার আওতাভুক্ত বাকী একানব্বই শতাংশ জানেনই না তারা এ রোগের কোন চিকিতসা আদৌ পেতে পারেন। আক্রান্ত মায়ের দুধ পানে শিশু সংক্রমিত হয়ে থাকে। সেদিক থেকে নারীর ঝুঁকি দুদিকেই। যৌনকর্মী হিসেবে নারীরাই বেশি কাজ করছেন, আবার সন্তান ধারণের একক দায়িত্বও নারীর উপরই অর্পিত।
মূলত: নারী যৌনকর্মীদের সাথে অধিকাংশ ক্রেতাই কোন প্রতিরোধক যেমন কনডম ব্যবহার ছাড়াই মিলিত হন বলে যৌনকাজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এমন অসুখ নারীকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পারিবারিক জীবনে ও অনেক স্বামীই কনডম ব্যবহারকে অসুবিধাজনক বলে চিহ্নিত করেন বিধায় নারী ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যান।
বেসরকারী গবেষণা থেকে দেখা যায় নারীর পরেই যে জনগোষ্ঠী সবচাইতে ঝুঁকির মধ্যে আছে তারা হলো হিজড়া এবং সমকামী। এই দুই জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজে একেবারে অচ্ছুত জীবন যাপন করতে বাধ্য হওয়ায় তাদের সম্পর্কে সরাসরি পরিসংখ্যান প্রাপ্তি কিংবা তাদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদানও দুরূহ হয়ে পড়ে। কিন্তু সত্য হলো ব্যাপক সংখ্যায় হিজড়ারা যৌনকর্মী হিসেবে নিযুক্ত।
তারা কোন রকম সচেতনতা ছাড়াই যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন, ব্যবহৃত হচ্ছেন; নিজের জন্যে যেমন তেমনি তার ক্রেতার জন্যেও সমপরিমাণ বিপদ ডেকে আনছেন অজ্ঞানতার কারণে।
পুরুষ সমকামীদের মাঝে এইডস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। তাদের যৌন জীবন যাপনের পদ্ধতি ই তাদের ঝুঁকির সম্মুখীন করে তোলে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়ানোর এখন পর্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ হলো 'কনডম' ব্যবহার। নারী সমকামীদের ভেতর এইডস সংক্রমণের শঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম হলেও একেবারে উড়িয়ে দেবার মতো নয়।
নিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন 'এসটিডি' (সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিসেস) এড়ানোর অন্যতম কার্যকরী উপায়।
প্রবাসী শ্রমিক এবং পেশাজীবিদের দেশে ফেরার সময় আলাদাভাবে দ্রুত একটি পরীক্ষ করানোর ব্যবস্থা সরকার থেকেই করানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের পিসকোরে যেসব সামরিক কর্মী বা পুলিশরা অংশগ্রহণ করে থাকেন তাদের দেশে ফেরার সাথে সাথেই নিজেদের বাহিনীর করা ডাক্তারী ব্যবস্থায় পরীক্ষা হয়ে থাকে। তারা কোন সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে দেশে ফিরেছেন কি না তা জানতেই এই পরীক্ষর ব্যবস্থা। কারণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন সুদান. কঙ্গো, উগান্ডা এসব দেশে বিশ্বের মোট আক্রান্ত এইডস রোগীর অর্ধেকের বেশি বাস করে।
হু ,আইসিডিডিআর, বি সহ অন্যান্য সংস্থাগুলো জোর দিচ্ছেন অল্পবয়সী এবং তরুনদের মাঝে যৌনশিক্ষার প্রসারে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উপর। দেখা যায় যে অল্পবয়সীরা সবচাইতে বেশি অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে অজ্ঞতার কারণে।
আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ হচ্ছে মায়ানমার, ভারত। এসব দেশে ইতিমধ্যে এইডস ছড়িয়েছে। আমরা প্রতিদিন এই দুটি দেশে যাতায়াত করছি।
তার উপর রয়েছে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। এসব বন্দরে প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের নাবিকরা এসে ভীড় করছেন। যৌনমিলন এখনো অন্যতম বিনোদন হওয়াতে এসব বন্দরের কাছে যৌনকর্মীরা কাজে করে যাচ্ছেন এবং হয়তো নিজেদের অজান্তেই সংক্রমিত হচ্ছেন কোন না কোন সংক্রামক ব্যাধিতে। তাই বাংলাদেশে এইডস এর বিস্তারের সম্ভাবনা কম এধরনের স্বপ্ন না দেখে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা এখন থেকেই নিতে হাবে। আর নারী নিজেকে নিরাপদ করতে, আগত বা অনাগত সন্তানকে নিরাপদ করতে সঙ্গীকে কনডম ব্যবহারে উতসাহিত করুন।
এখনো সহজলভ্য এবং ব্যবহারে সুবিধাজনক না হলেও ফিমেল কনডম ও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। নারীরা সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি একজন ব্যবহারকারী, উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ফিমেল কনডমের অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে জানালে সেই প্রতিষ্ঠান তার উন্নয়নে সচেষ্ট হবেন।
কেন যাবেন অনর্থক ঝুঁকির মাঝে যা আসলে একটু কষ্ট করলেই এড়ানো যায়? এই বিশ্ব এইডস দিবসে তাই আসুন সবাই মিলে নিরাপদ যৌনসম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। সেই সাথে মাদকসেবী, যৌনকর্মী, রক্তবিক্রেতা, সমকামী,হিজড়া,প্রবাসী শ্রমিক পেশাজীবি এদের ভিতরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করি।
নিজেকে বাঁচাই, অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করি। নিজের চেষ্টায় নিজে এইডস প্রতিরোধে একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে উঠি, দেই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।