চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
জাপানে হার্ড রক ক্যাফেতে পার্টটাইমে কাজ করতাম জীবিকা নির্বাহের জন্য। তখন হলরুমে সবচাইতে বড় ছবিটি ছিল তা আমার নজর কাড়ে এইজন্য যে ছবিটি ছিল এক ভারতীয়ের, নাম তার সাই বাবা। তখন এর ব্যপারে কিছুই জানতাম না।
বেশ কয়বছর পর জাপানীজ একটি টিভি অনুষ্ঠানে দেখলাম বেশ কিছু জাপানীজ সাংবাদিক গেছে সাই বাবার আশ্রমে সাই বাবার অদ্ভুত সব কাজ কারবারের রহস্য উদঘাটনের জন্য।
তারা শেষ পর্যন্ত এটুকুই বলতে পেরেছিল সাই বাবার ছবির উপর যে বিভুতি পাউডার জমে তা কোন এক কেমিকেলের বাতাসের সাথে বিক্রিয়ার কারনেই ঘটে থাকে।
যাহোক আবার সাইবাবার নাম শুনতে পেলাম যখন এককালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সাইবাবার সান্নিদ্ধ লাভে ধন্য হওয়ার খবরটি নিউজে আসে। আরেকবার সচীন টেনডুলকারের ব্যটে রানের খরা দেখা দেওয়ার তিনি সাইবাবার আশীর্বাদের সরনাপন্ন হন।
নোবেল প্রাইজের প্রবর্তক নোবেলের ছেলে তার এলাকায় তার একটি হাসপাতাল উদ্ভোদনের সময় সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী সাথে উপস্থিত ছিলেন। নেপাল, শ্রীলংকা, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীরা তার আশ্রম পরিদর্শন করেন। একজন মুসলমান প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদও এই দলে আছেন, যদিও উনি একজন বিগ্গানী।
পরে জানলাম ভারতের নামকরা পলিটিশিয়ান, বুদ্ধিজীবি, পুলিশ অফিসারসহ প্রসাশনের উচ্চ কর্মকর্তা তার শিষ্যের কাতারে ছিলেন। ঐ রাজ্যের একপুলিশ প্রধান তার গাড়ির সোফার ছিলেন।
সারা পৃথিবীতে তার কয়েককোটি ভক্ত আছে।
শেষবার সাইবাবার উপর একটি প্রামান্য অনুষ্ঠান দেখলাম বিবিসিতে। অনুষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে ইয়াং ছেলে ভক্তদের বিরুদ্ধে
সেক্সুয়াল এবিউজের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।
তার এককালীন শিষ্যরাই তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন। প্রধানমন্ত্রী তার অফিসিয়াল পেপারে এইসব অভিযোগ ভিত্তহীন বলে বিবৃতি দেন।
মজার ব্যপার ইউ এস ডিপার্টমেন্ট ঐ এলাকায় তরুন একদল আমেরিকান ছেলেদের ভ্রমনের সময় এক ভারতীয় গুরুর আশ্রমের ব্যপারে সতর্ক করে দেয়, ইউ এস অফিসিয়াল ডিপার্টমেন্ট স্বীকার করে তারা তাদেরকে সাইবাবার ব্যপারে সতর্ক করতে চেয়েছিল। ইংল্যান্ডের স্কুলের একটি ছেলেদের ব্যপারে এভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও এক রাত্রিতে তার বেডরুমে তার চারজন শিষ্য পুলিশের গুলিতে নিহত হয়, অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ প্রধানের বক্তব্য সাইবাবার গোপন অনেককিছু ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এদেরকে হত্যা করা হ্য়।
সাইবাবার তেলেসমাতির মধ্যে ছিল শুন্য থেকে বিভিন্ন জিনিষ হাতে নিয়ে আসা (স্বর্ন, রসগোল্লা, ঘড়ি)। পানিকে বিভিন্ন জুসে পরিনত করা। বিভিন্ন রোগ ব্যাধি সারানো। গতমাসে উনি ঘোষনা দিয়েছিলনে চাদের উপর তার কেরামতি দেখাবেন, কিন্তু মেঘ থাকায় এবং ট্রাফিক জ্যাম হওয়ার তিনি তা করতে পারেননি।
অনকে বিগ্গান মনস্ক ভারতীয়দের মত পিসি সরকার জুনিয়র সাইবাবাকে আখ্যায়িত করেছেন একজন প্রতারক আর জুচ্চোড় হিসাবে।
সাইবাবার ভক্তরা মনে করে উনি একজন ভগবানের অবতার।
অর্থাত ভগবান মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে এসেছেন। আমি ভারতীয়ের খবর পড়েছিলাম যে কিনা শচীন, সৌরভ আর দ্রাবিড়ের ছবি পুজা করত, পরে বৌকেও পেটায় তাদের পুজা করার জন্য। পরে তাকে অবশ্য পুলিস পাকড়াও করে। ভগবান রজনীশের ব্যপারেও অনেকে যানেন, যাকে আমেরিকা জেলে পুড়েছিল, এখন এই ভগবান বিভিন্ন রোগে কাতর।
আমাদের দেশেও পীর পুজা চলে, যা ইসলামে দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় পাপের একটি। বলা হয়েছে শিরককারীকে কখনোই ক্ষমা করা হবে না। আমাদের দেশের এক প্রেসিডেন্টও একসময় এক পীরকে নিয়ে খুব হৈ হল্লা করেছিলেন। আমি একসময় বনানীতে একটি অফিসে চাকরী করতাম, তখন দেখতাম এক পীরকে তার গাড়ি আর হোন্ডার বহর নিয়ে যাতায়ত করতে, তার মধ্যে একজন নামকার ফুটবলারও ছিলেন। একদিন একবুড়ো লোককে দেখলাম রাস্তার পাশে দাড়িয়ে পীরের দিকে তাকিয়ে দুহাত তুলে কান্নাকাটি করতে, এর সবই ইসলাম বিরুদ্ধ।
ইসলামে সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহ করা হয়েছে, অন্য কাউকে নয়। একটি হাদিস আছে এক পাপী তার পাপের কথা সাহাবীদের কাছে স্বীকার করলে তারা সবাই তাকে তাড়িয়ে দিলে সে নবীজির সা: কাছে আসলে তিনিও মুখ ফিরিয়ে নেন। তখন আল্লাহ তালা নবীজি সা: প্রশ্ন করেন, তুমি তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কে। এই একটি হাদিসে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় একত্ববাদে একজন মানুষের দেনাপাওনা কিংবা জবাবদিহিতার স্থান একটি আর সেটি হল মহান সৃষ্টকর্তা। যার ফলে অন্য একজন মানুষ দ্বারা প্রতারিত বা শাষিত হওয়ার সুযোগ একত্ববাদে নেই।
একত্ববাদ একজন ব্যক্তিমানুষকে তার ব্যক্তিত্বকে সর্বোচ্চ সম্মান করতে শেখায়। তুমি যে কেউ হও তুমি তোমার স্রষ্টার কাছাকাছি চলে আসতে পারবে শুধুমাত্র তোমার ব্যক্তিত্বের ক্রমাগত উতকর্ষতা ঘটিয়ে। তোমার আর তোমার স্রষ্টার মাঝে যোগাযোগের আর কোন মাধ্যমের প্রয়োজন পড়বে না।
অন্য কারো ধর্মের অনুভুতিতে পোষ্টটি আঘাত করে থাকলে আমি দু:খিত বোধ করব। কিন্তু আমি নিশ্চিত এসব প্রতারকদের প্রতি কারো সহানুভুতি থাকার কথা নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।