সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
আমেরিকার উপকুলে আঘাত হেনেছিল এনড্রু। একসপ্তাহ আগে থেকেই একানকার প্রত্রিকাতে এন্ড্রুর গতিবিধি নিয়ে খবরাখবর, সম্ভাব্য ধ্বংসস্থল নিয়ে জল্পনা কল্পনা, ঘুর্ণি্ঝড় নিয়ে নানাবিধ প্রামান্য চিত্র এখানকার টেলিভিশনে। দুর্গত মানুষদের পাশাপাশি কি ধরণের সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানো যেতে পারে, তার ছক আকা শুরু হয়েছিল এনড্রু আঘাত হানার আগেই।
হায়রে অবহেলিত গরীব দেশ আমাদের। ঝড়ের আগে এখানকার টিভিতে, এ ধরণের জল্পনা কল্পনা ও প্রস্তুতি তো দুরের কথা, সামান্য কোন খবরও ছিলনা।
এমনভাবেই এরা অবহেলা করে এসেছে আমাদের। আর 'ফরেন এইডস্' এর নামে টিকিয়ে রেখেছে এক ধরনের নির্ভরশীলতা, যাকে 'এইডস্' বললেই হয়তো নামকরণ সার্থক হবে।
অবশেষ ঝড়ের পর মুখ খুলেছে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন। ছবি সহ নানা খবরও ছাপা হয়েছে। সাহায্যের হাতও খোলা হয়েছে।
একটু সাহায্য তো করতেই হবে, মানুষগুলো একেবারে মরে গেলে বিশ্ববাজারতো টিকে থাকবে না! এদেরকে কোনভাবে টিকিয়ে রাখলেই এরা আবার কোনভাবে উঠে দাঁড়িয়ে আবার দ্রব্যাদি কেনা শুরু করবে। এদেরই কেউ কেউ বা এদের শ্রমকে ব্যাবহার করে কেউ কেউ টিভি কিনবে, ফ্রিজ কিনবে, গাড়ী কিনবে। তবে সে সাহয্যের পরিমান দেখলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়। এক পত্রিকা লিখেছে, জার্মান সরকার দ্রুত সাহায্য হিসেবে দুই লক্ষ ইউরো পাঠিয়েছে। তুলনামূলক বিচারের জন্যে বলছি, দুই লাখ ইউরো দিয়ে তিন কামরার একটা এপার্টমেন্টও কিনতে পাওয়া যায়না।
আরেক পত্রিকা লিখেছে সাত লাখের কথা। এটাও খুবই ছোট পরিমাণ ভিক্ষে। বৃটেনে গতবছর সামান্য বন্যা হয়েছিল, এখানে এরা যে সাহায্য পাঠিয়েছিল, তার পরিমান ছিল এর আরো কয়েক গুন বেশী। আমেরিকা পাঠাচ্ছে পনেরো লাখ ডলার। বিশ্ব ব্যঙ্ক এখনো হিসেব নিকেশ করছে, আমাদের অবদান অনুযায়ী কতোটা পাঠাতে পারে।
এসব দেখে তথাকথিক 'গ্লোবালাইজেশান' এর নগ্নতা আরো বেশী পরিস্কার হয়ে পড়ে। এ 'গ্লোবালাইজেশান' শুধুমাত্র ব্যবসার খাতিরেই, এর সাথে এক পৃথিবীতে ভালভাবে, সচ্ছলভাবে, পরস্পরের বিপদে পরস্পরের পাশাপাশি দাঁড়ানোর কোন সম্পর্কই নেই। আমার কাছে সাহায্যের এই অংকগুলো গালে চড় মারার মতোই মনে হয়েছে। কিন্তু আমাদের আর কি উপায়, একগালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়াই আমাদের ভাগ্য!
আরেক গাল যদি পেতে দিতে না চাই, তাহলে আমাদের সাবলম্বী হতে হবে। ওদের ব্যবসায়িক হাত থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে।
তবে তা হম্বিতম্বির পথে নয়, বরং সুচিন্তিত পথে নিজেদের মেধা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে তা বহুদুরের পথ, সে তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত তা করতে পেরেছে। গত সুনামীকে মোকাবেলা করেছে ভারত অনেকটাই একা। সাহায্যের নামে ভিক্ষে হিসেবে যা পাঠাতে চেয়েছিল পশ্চিমা বিশ্ব, তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।
এবার হয়তো আমাদের পক্ষে এধরণের প্রত্যাখ্যান সম্ভব নয়। কিন্তু ভারত যা গতবার পেরেছে, আমরা কেন তা সামনের বার পারবো না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।