আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিডরের কাজ সিডর করেছে, ধ্বংস করেছে সব।। অতঃপর... ...

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সমুদ্র উত্তাল করে আসল সিডর, ধ্বংস করল, অতঃপর নিজেকে নিঃশেষ করছে এখন। আমরা শুধু দেখলাম এবং নিজেদের বাচালাম। এই বা কম কিসে? যদি শুধুই দেখতাম, তবে লক্ষ লক্ষ লাশের বোঝা বইতে হত। ভেবেছিলাম সমুদ্র হতে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে থাকি, ঝাপটাও লাগবে না। কিন্তু, পারলাম কি ঝাপটা এড়াতে? বৃহঃস্পতিবারের সে ঝড়ের রাতে ব্লগ পড়ছিলাম, তখনই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল।

সেই থেকে পরদিন দুপুর বারটা নাগাদ সব যোগাযোগ বন্ধ। দুপুরে মাত্র মিনিট ১৫ এর জন্য ইলেকট্রিসিটি এল, তখন জানতে পারলাম মৃতের সংখ্যা ২৪২। এরপর আবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অবশেষে ইলেকট্রিসিটি এল রাত ১০ টায়। ইয়াহু নিউজে দেখি মৃতের সংখ্যা ১,১০০।

এনটিভিতে খবরে দেখলাম ধ্বংসযজ্ঞের আসল চিত্র। বরগুনার পাথরঘাটার লন্ডভন্ড দৃশ্য। কোথাও কিছু নেই, শুধু ধ্বংস ছাড়া। শুক্রবার সকাল থেকে চেষ্টা করছি ঝালকাঠিতে খালা মামার খবর নিতে। সেই রাতে ৯টার পর থেকে কোন যোগাযোগ নেই।

ল্যান্ডফোনের লাইনও নেই, না আছে মোবাইলের নেটওয়ার্ক। পরদিন সকালে কিছুক্ষণের জন্য নেটওয়ার্ক পেলাম। শুধু জানতে পারলাম টিনের ঘরের ওপর নারিকেল গাছ পড়ে আছে, সরাবার কেউ নেই। এটুকুই, এরপর লাইন আবার কেটে গেল। রাতে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি পাড়িয়ে যেতে হল টিউশুনিতে।

আসলাম একই পথে। এ রাতের অন্যান্য বৃষ্টি বহুল রাতের থেকে পার্থক্য একটাই, সেটা হল অন্ধকার। শুধু আমার এলাকাই নয় সম্পূর্ণ ঢাকা শহর অন্ধকারে ঢাকা। সেই অন্ধকারে ময়লা পানি আর কাঁদার পাড়িয়ে চলা, প্রতিমূহুর্তে খোলা ম্যানহোলের ক্রাস। যেহেতু, সংসারের হাল এখনো ধরি নাই বিধায় আপাতত বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের ঘুর্ণিঝড় বাবার উপর দিয়েই যাবে।

আগামীদিনে এই ঝড়ের প্রভাব তার মুখে দেখা যাবে, বাজার থেকে ফেরার পরে। এর মাঝে আমার সেই চট্টগ্রামের বান্ধবির কোন খোঁজ় নেই। তাকে ম্যাসেজ দিলাম, ফোন করলাম কিন্তু উত্তর পেলাম না। চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকতের খুব কাছে থাকে সে। শুধু ফোন নম্বর আর মেইল এড্রেস ছাড়া ওর কোন ঠিকানা আমার কাছে নেই।

যদি, কিছু হয় তবে জীবনে আর কখনো তার হদিস পাব না। ইনশাল্লাহ্‌, আল্লাহ্ তাকে ভাল রাখবে। শনিবার সকালে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাইন্স লাইব্রেরীর সামনের বাঁশ ঝাড়ের কয়েকটা বাঁশ ভেঙ্গে পরে আছে। দুপুর একটার দিকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর দিকে দেখি, বিশাল এক গাছ উপড়ে গেছে একদম।

ঝড়ের একদিন পরে যাওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রভাবের আসল চিত্র দেখা সম্ভব হল না। পরিবেশ একদম ঠান্ডা, চারিদিকে শুধু ঝড়ের আলোচনা। একদিকে বৃটিশ কাউন্সিলে, ফ্লিম ফেস্টিভালের টিকেট সব বুক হয়ে গেছে। অন্যদিকে ছাত্রমুক্তির ব্যানারে কিছু ছাত্র আক্রান্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহে বাক্স নিয়ে ঘুরছে। রাত ১১টার সময় ব্লগের জন্য এই পোস্ট লিখতে লিখতে সেই বান্ধবি ফোন করল।

অনেক্ষণ ওর সাথে কথা বললাম। ভাল লাগল। আজ সন্ধ্যার খবরে মৃতের সংখ্যা জানা গেল প্রায় ১,৬০০। গাছপালা, বাড়িঘর, ফসল বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে অগনিত। হাজার হাজার মানুষ ঘর ছাড়া।

খবরে একটা বিষয় আশাব্যাঞ্জক ছিল। বাংলাদেশ সরকার বিদেশীদের কাছে কোন সাহায্য চাচ্ছে না, তবে সাহায্য দিলে তা গ্রহণ করা হবে। আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হচ্ছি। সিডর তার কাজ সম্পূর্ণ করে গেল। অতঃপর দায়িত্ব আমাদের... ... ... ... ... ... ...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.