২য় পর্ব
অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় কিছুদিন যাবত বেশ রাত করে ঘরে ফিরি। প্রায় মাসখানেক আমাদের দুজন আলেমের সাথে সাক্ষাত হয়না। ব্যস্ততা কমে যাবার পর একদিন বিকেলে লবিতে মৌলানা আলতাফ সাহেবের সাথে দেখা। কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়াসিন সাহেবকে দেখছিনা। তিনি কোথায়? কেমন আছেন? আমার এতগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বললেন: একটা ঘটনা তো হয়ে গেছে! বলতে লজ্জা করে।
তিনি এখন জেলে।
বলেন কী! একজন আলেম মানুষ! কি কারনে জেলে? জেলে না হাজতে?
ঐ একই কথা হল।
কি, হয়েছিল কি? ঘটনা বলুন তো!
তিনি যে আরবী পড়াতেন সেখানে কিছু একটা হয়েছে। আপনি বরং তার ছেলে কাসেমের সাথে কথা বলুন। সেই সব ঠিকভাবে বলতে পারবে।
উকিল নিযুক্ত করেছে? নিশ্চয়ই কোথায়ও ভুল হচ্ছে। এমন একজন হাজি, আলেম মানুষ, আল্লাহর কাজে যিনি সর্বদা ব্যস্ত, একটা মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা তিনি খারাপ কিছু করতেই পারেনা! দুনিয়ার সব আলেম এক হয়ে এখন তার প্রতিবাদ করা উচিত। মসজিদের সব মুসুল্লিরা কি বলে? হাজি সাহেবকে বের করে আনার কি ব্যবস্থা হচ্ছে?
এসব আমি কিছুই জানি না। কাসেম সব জানে।
আমি আর দাড়ালম না।
সোজা কাশেমের বাসায় চলে গেলাম। দরজা নক করতেই কাসেম খুলে দিল। সালাম বিনিময় করে ঘরে গিয়ে বসলাম। সে বলল, আপনি এসেছেন ভালই হল। একজন মানুষ নেই যার সাথে একটু পরামর্শ করব।
আমি আজ আপনার বাসায় যেতাম। সবার সাথে তো সব কথা বলা যায়না! আমি এইমাত্র উকিলের কাছ থেকে আসলাম। বোধ হয় শুনেছেন ঘটনা।
না, আমি তো কিছুই জানি না। এইমাত্র আলতাফ সাহেবের কাছে শুনলাম তিনি জেলে।
কি কারনে জেলে আলতাফ সাহেব বলতে পারেননি। এখন আমাকে ব্যপারটা খুলে বল তো!
ব্যাপার কিছুই না। একটা বার বছরের মেয়ের অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
মেয়েটা কে?
একটা বাঙালি মেয়ে। তাকে আরবী পড়াতেন।
তার বাবা মা অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ করলেই হল! আশি বছরের একজন বৃদ্ব একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে কিছু করেছে একথা কেউ বিশ্বাস করবে? এটা নিশ্চয়ই বানানো কিছু। আমি উকিলের সাথে কথা বলতে চাই। আমি একা গেলে তো কথা বলবে না। তোমার সাথে যেতে হবে।
কখন যেতে পারি?
আমি তো কাজে যাই আজ দু সপ্তাহ হল। এই ঝামেলা শেষ করে কবে যে কাজে যোগ দিতে পারব জানিনা। আমি যে কোন সময় যেতে পারি। কালও উকিলের কাছে যাব। দুটার সময়।
আপনি গেলে যেতে পারেন।
কাল আমি ছুটি নিব। তোমার সাথে যাব। একজন আলেমের জন্য কাজ করব না তো কার জন্য করব। একজন হাজির উপকার করতে পারলে কত নেকি পাব তার হিসাব আমার জানা নেই।
মনে মনে ভাবলাম যদি এমনিভাবে মানুষের উপকারে লেগে যাই তাহলে বেহেস্তের পথটা পরিষ্কার হয়েও যেতে পারে। আর একবার যদি হয়ে যায় তাহলে সেখানে কি কি পাওয়া যাবে তারও একটা হিসাব করলাম মনে মনে। কাসেমকে বললাম, আমি ঠিক বারটায় রেডি থাকব। তুমি আমাকে নিয়ে যেও।
আমরা ঠিক সময়ে গিয়ে পৌছলাম উকিলের অফিসে।
উকিলের নাম....
কাসেম পরিচয় করিয়ে দিল। বলল, আমার আঙ্কেল জনাব মিসকীন। তোমার সাথে কথা বলতে এসেছে। করমর্দন করে সে আমাকে বসতে বলল। তারপর বলল, বল, তুমি কি কথা বলতে এসেছ?
কি অভিযোগে এমন একজন পায়াস মানুষকে গ্রেফতার করা হল?
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হল: সেক্সুয়েল এবিউসমেন্ট, চাইল্ড মলেষ্টেশন।
কে করেছে অভিযোগ?
এ পর্যন্ত তিনটা অভিযোগ হয়েছে। প্রথম হয়েছে ছয়মাস আগে। একটি বার বছরের মেয়ের বাবামা অভিযোগ করেছে। তাদের মেয়েকে ধর্মিয় শিক্ষা দেবার সময় সে মলেষ্ট করেছে। সেই অভিযোগের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।
কারন সে একজন পচাত্তর বছরের বৃদ্ধ এবং পায়াস লোক। ফাইভ টাইম সে এবাদত করে, বেশিরভাগ সময় মসজিদে কাটায়। কিন্তু পুলিশ তাকে নজরে রেখেছে। তারপর দুমাস আগে একই ধরনের অভিযোগ আসে আর একটি পরিবারের কাছ থেকে। এখানেও সে ধর্মিয় শিক্ষা দিত।
দশ বছরের একটি মেয়েকে সে কোলে বসিয়ে পড়াচ্ছিল। তার মা দেখে ফেলে ইয়াসিনকে শিক্ষকের কাজ থেকে বাদ দিয়ে পুলিশে অভিযোগ করে। পুলিশ আরও প্রমানের অপেক্ষায় ছিল। একদিন বিকেলে একটি বার বছরের মেয়ে মেইল চেক করার জন্য মেইল রুমে যায়। তখন অন্য কোন লোকজন ছিলনা সেখানে।
সাদা পোষাকে পুলিশ তার উপর নজর রাখছিল। যখন মেয়েটি মেইল রুমে ঢকে তার পিছু পিছু ইয়াসিনও ঢুকে। যদিও তার মেইল চেক করার চাবি ছিলনা। এক সময় সে মেয়েটিকে খুব আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরতেই মেয়েটি তার বাহু থেকে ফসকে দে ছুট। এ সময় দূরে লবির এক কোনে দাড়ানো পুলিশ দেখে ফেলে এবং হাতে নাতে গ্রেফতার করে।
এসব মামলা খুবই স্পর্শকাতর। কোন সাক্ষী লাগেনা। তার বিরুদ্ধে তিনটা অভিযোগ। এখন ভাবছি কিভাবে তাকে বাঁচানো যায়। অথবা মিনিমাম পানিসমেন্ট কিভাবে হতে পারে।
আমি আমার আরও সহকারীদেও নিয়ে আগামী কাল বসব এই মামলাটা নিয়ে আলোচনার জন্য। এখন কোন পথে এগুনো যায় তা তোমাকে তিন দিন পর বলতে পারব। তুমি বরং তিন দিন পর আমার এখানে আর একবার এস অথবা ফোন করো। আমার এখন কোর্টে যেতে হবে। তোমার সাথে আর কথা বলতে পারবনা।
সি ইউ, বাই..(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।