আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুবিচার কি আদতেই পাবে মেয়েটি? উৎসর্গ মানবী।

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

আদতে অনেক দিন পর লিখছি তার কারণ মানবীকে ধন্যবাদ জানানো এবং মানবীর পোষ্ট বিষয়ে নিজস্ব মন্তব্য প্রকাশ করা। যদিও এটা তার পোষ্টেই করা যেতো তবে এখানে আলাদা করে মন্তব্য করার বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত অভিরুচি। অনেকদিন আগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ধর্ষণের পর মৃত ভেবে ফেলে রেখে যাওয়া পোশাক শিল্পের শ্রমিকের করুণ মৃত্যু এবং প্রায় ৩ বছর পরে আদালতে মামলার বিচার শুরু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরবার জন্য এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রচার করার জন্য চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদককেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার অতিধীরগতির কারণে এমন বর্বর ঘটনার বিচার শুরু হতে এতটা সময় লেগেছে তবে আমার নিজস্ব ধারণা এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত মেয়েটার পক্ষে যাবে না। এমন ধারণার নানাবিধ কারণ থাকলে মূলত কয়েকটা স্পষ্ট কারণ আছে।

ঘটনা ঘটেছে ৩ বছর আগে, এবং বাদি মৃত, এ ঘটনার কোনো সাক্ষ্য নেই। পরোক্ষ সাক্ষ্য ছিলো যারা তারাও এখন বিচারের বিষয়ে তেমন আগ্রহী নয়। মেয়েটার মা বাবার ঠিকানা হারিয়ে গেছে, হয়তো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কাছে ঠিকানা আছে তবে তারা মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে বেশী বক্তব্য দিতে নারাজ। অপরাধীদের ৩ জন জামিনে বাইরে এবং ১ জন পলাতক। আদালতে নিসংশয়ে যদি প্রমাণিত না হয় যে অপরাধীরা ধর্ষণ করেছে এবং তারা হত্যার উদ্দেশ্যে মেয়েটাকে ফেলে রেখেছিলো গোপন স্থানে তবে আদালত বেকসুর খালাস দিয়ে দিবে কারণ অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত না হলে আদালত অপরাধীকে বেনিফিট ওফ ডাউট দিয়ে দেয়।

এখন কথা হলো ধর্ষণজনিত ডাক্তারি প্রমাণ আছে কি না? হয়তো মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে ডাক্তার একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলো, সেখানে হয়তো ধর্ষণের চিহ্নও ধরা পড়েছে, তবে যে চিহ্ণ ধরা পড়েছে সেটা যে আদতেই অপরাধীদের দ্বারা সৃষ্ট এই প্রমাণ হবে কিভাবে? বাংলাদেশের আদালতে এখনও বোধ হয় ফরেনসিক এভিডেন্স সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রথা প্রচলিত হয় নি। কিংবা যদি হয়েও থাকে ডাক্তার নিশ্চয় তার যৌনাঙ্গ থেকে বীর্য সংগ্রহ করে সেটার ডি এন এ প্রোফাইল তৈরি করে নি, যেটার ভিত্তিতে নিসংশয়ে বলা যাবে এই কয়জন মানুষ মেয়েটার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো এবং তাদের দেহের ছাপ পাওয়া গেছে মেয়েটার শরীরে। এখন কথা হলো মানবী যা করছে , একটা বিকল্প জনমত তৈরির চেষ্টা, যদি এটা দিয়ে বিচারক প্রভাবিত হয়, কিংবা যদি প্রচলিত জনমতের উপর ভিত্তি করে আদালত সিদ্ধান্ত দেয় তবে আদালতে বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা উচিত হবে কি? যে বিচারক প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত দেয় তার সিন্ধান্তের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে সব সময় একটা সংশয় থেকেই যাবে, কারণ বিচারক পদে আসীন থাকবার সময় তার নির্ভর করবার মতো বিষয়াদি হচ্ছে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য। এর বাইরে তার ব্যক্তিগত অনুভব যদি বিচারের রায়ে প্রতিফলিত হয় তবে সেটা অগ্রহনযোগ্য হবে আদালতে। অবশ্য আমরা সবাই এ বিষয়ে নিশ্চিত ডেথ বেড স্টেটমেন্টে মেয়েটা ধর্ষকদের নাম বলেছে, এর উপরে ভিত্তি করে কয়েকজনকে চুড়ান্ত শাস্তি দিয়ে দেওয়া যায় হয়তো।

কিংবা যদি আদালতের রায় মানবীর মনোবাঞ্ছা পুরণ না করে তবে মানবী আরও বড় একটা ক্যাম্পেইন করতে পারে - এবং জনমত গঠিত করে ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। আমার এর কোনোটাতেই তেমন আপত্তি নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে এই বিচারের রায় কখনই নিসংশয়ে ধর্ষণের অপরাধটা প্রমাণ করতে পারবে না। আর মৃতের স্বামী নিজস্ব প্রয়োজনে দ্বীতিয় বিয়ে করেছে, তার মৃত স্ত্রীর বিচারের বিষয়ে আগ্রহ কমে গেছে সময়ের সাথে- সুবিচার আদতে কি পাবে মেয়েটি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.