বাংলায় মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাংলা ব্লগারদের সাথে মত বিনিয়ের উদ্দেশ্যে এই প্রোফাইলটি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। আপনার ভালো লাগা, খারাপ লাগা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে সামিল হোন।
কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হয়েছেন বর্ধিত ফি-র বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে। আপনি রাস্তায় বের হলেই দেখতে পান ভিক্ষার পাত্র হাতে দাড়িয়ে আছে মানুষ , কাঁধে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে অপেক্ষা করছে কর্মক্ষম কর্মপ্রত্যাশী জনগণ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেও দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী জনগোষ্ঠী- যুবসমাজের বেশিরভাগ-ই অপেক্ষা করছে কবে তার পছন্দসই কিংবা নিদেনপক্ষে ভালোভাবে সম্মানের সাথে খেয়ে-পড়ে বাঁচার মত একটা কাজ পাবে।
আমরা বিভিন্ন সময়ই দেখতে পাই সরকারসমূহ কোন আগাম সতর্কতা ছাড়াই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিল সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে , কিংবা আদিবাসী জনগোষ্ঠিকে উচ্ছেদ করলো ইকো-পার্ক এর নামে আর সরকার নিয়ন্ত্রিত এইসব উচ্ছেদের ফলে নির্যাতিত এবং নিগৃহীত এইসব মানুষদের আশ্রয় নিতে হলো রাস্তাতে যেখানে অনেক বড় খোলা আকাশটাই তাদের মাথার উপরে ছাদ।
ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই এইসব মানুষেরা দিন এবং রাতযাপন করে। এরকম বিভিন্ন ঘটনা প্রায়ই আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখি কিংবা খবর কাগজ , রেডিও , টেলিভিশন মারফত জানতে পারি।
সরকার এইসব সমস্যাগুলোর কোনো সুরাহা করতে পারছে না বা করার চেষ্টাও করছে না। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ যেমন খাদ্য, পর্যাপ্ত বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কাজ করার অধিকারের কথা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে এবং বিভিন্ন চুক্তিসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিও রয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রপক্ষ হলো ১৬০টি দেশ।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের বিষয়গুলো অনেক দেশের জাতীয় আইনে স্বীকৃত। তাছাড়া ১০ বছর আগে বাংলাদেশসহ ১৮৯টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ জাতিসংঘ আয়োজিত এক বিশ্ব সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বৈষম্যহীন এক সমাজের, যেখানে বিশ্ববাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক অধিকারগুলো ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জিত হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘের সহ্স্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ( MDG ) অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ যেখানে দারিদ্র্য হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং বস্তিবাসীদের জীবনমান বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী অনেক মানুষ যেমন বস্তিবাসীরা বেশিরভাগ সময়ই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রার কর্মসূচির বাইরে থেকে যায়।
অনেক মানুষ পর্যাপ্ত বাসস্থান, খাদ্য, জল, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার এবং শিক্ষা লাভের অধিকারগুলো থেকে নিত্যদিন বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরকারসমূহ প্রায়শ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সকলের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে মুখে বড় বড় কথা বলে।
সকল সরকার দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া সত্বেও নির্যাতিত, দরিদ্র প্রান্তিক গোষ্ঠির জনগণ প্রায়শ তাদের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হয়, এবং তারা সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার মতো সত্যিকারের সুযোগও পায় না। তারা কোনমতেই পারছেনা সরকারসমূহকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে। সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যায় এমন পদ্ধতিগুলোতে তাদের প্রবেশের সুযোগও নেই। তারা বরং সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল থাকে।
সরকারসমূহ যখন জবাবদিহিহীন থাকে তখন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রার কর্মসূচি সংক্রান্ত তাদের যে লক্ষ্য তা অর্জন ব্যর্থ হতে পারে।
সরকারসমূহ যদি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সকল মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও দারিদ্র্য হ্রাস করার ব্যাপারে আন্তরিক হয় তারা অবশ্যই একটি জাতীয় জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও জোরদার করবে এবং তারা অবশ্যই এই কাজের জন্য সহায়ক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতিগুলোতে যোগদান করবে যেমন আইসিইএসসিআর এর ঐচ্ছিক প্রটোকল যা ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির ( ICESCR ) ঐচ্ছিক প্রটোকল গৃহীত হয়। এই প্রটোকল অনুযায়ী নিজ দেশে অধিকার লংঘনের শিকার একজন ব্যক্তি যিনি জাতীয়ভাবে কার্যকর প্রতিকার পাননি তিনি জাতিসংঘের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী হতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক একটি স্বাধীন কমিটি অভিযোগসমূহ শুনবে।
এই প্রটোকল শুধুমাত্র অভিযোগকারীদের উপকারে লাগবে তা নয়, এটি তাদের সিদ্ধান্তসমূহ বিশ্বের জাতীয় ও আঞ্চলিক আদালতসমূহকেও প্রভাবিত করবে।
এছাড়াও এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারসমূহের ব্যর্থতার দিকে মনোযোগ দেয়ার ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে। এই প্রটোকল মেনে চলা আইনগতভাবে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক যারা প্রটোকলের রাষ্ট্রপক্ষ হবে। ১০টি রাষ্ট্র অনুমোদনের পর এটি কার্যকর হবে।
একটি দেশের উপর ঐচ্ছিক প্রটোকলের আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে ওই দেশকে অবশ্যই প্রটোকলটি অনুমোদন করতে হবে বা চুক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে যোগদান করতে হবে।
এই প্রটোকলটি ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
২০১০ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ৩৩টি রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে, এর মানে হলো তারা এটি অনুমোদনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। ইকুয়েডর এবং মঙ্গোলিয়া অনুমোদনকারী প্রথম দিককার দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি বলেছেন {http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-09-19/news/94531} বাংলাদেশ সরকার যদি মানবাধিকারের সব ক্ষেত্রে সুবিচারের সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে তাদের আন্তরিকতা দেখাতে চায়, তবে তা এই প্রটোকলের অনুমোদনের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। তিনি আরো মনে করেন যে, নিউইয়র্কে এমডিজি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা দেওয়া উচিত যে বাংলাদেশ প্রটোকলের রাষ্ট্রপক্ষ হওয়ার জন্য আর কালক্ষেপণ করবে না।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে সরকারকে বলুন, তারা যদি সত্যিই মানবাধিকারের সকল ক্ষেত্রে সুবিচার নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাস করতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে সদিচ্ছা প্রমাণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুমোদন করা।
ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুমোদন করার জন্য আজই সরকারের কাছে দাবি জানান। সুবিচার পেতে বাংলাদেশের প্রতি চুক্তি অনুমোদনের আহ্বান জানান। @ http://bangla.amnesty.org/bn/op-bd
Call on Bangladesh to ratify treaty to enable access to justice: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।