বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ চলছে। সরকারের নারী নীতিমালা ইসলামী শরীয়ার সাথে বিরোধপূর্ণ হওয়াতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ক্ষিপ্ত হয়েছেন। সরকারের এ ভ্রান্ত নীতিমালার বিরুদ্ধে চলছে মিটিং-মিছিল ও লেখালেখি। প্রতিবাদ স্বরূপ হরতালও ডাকা হয়েছে।
যা নিয়ে বিতর্ক: জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সবক্ষেত্রে, যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যে সমঅধীকারী তা স্বীকৃতি স্বরূপ নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ করা’।
এই বাক্যের মাধ্যমে সরকার চাতুরতার সাথে ইসলামের উত্তরাধিকার আইন ও অন্যান্য ইসলামী বিধানকে সরাসরি অস্বীকার করেছে। আর তাই সারা দেশের আলেম ওলামাগণসহ সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ এ নীতিমালার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। তাদের মতে, সরকারের এ নীতিমালা আল্লাহর আইনের সরাসরি লংঘন। আল্লাহ বলেন: “তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান। যদি (মৃতের ওয়ারিস) দুয়ের বেশী মেয়ে হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ তাদের দাও।
আর যদি একটি মেয়ে ওয়ারিস হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তার। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তাহলে তার বাপ-মা প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং বাপ-মা তার ওয়ারিস হয়, তাহলে মাকে তিন ভাগের একভাগ দিতে হবে। যদি মৃতের ভাই-বোনও থাকে, তাহলে মা ছয় ভাগের একভাগ পাবে। (এ সম্পদ তারা তখন পাবে) মৃত ব্যক্তি যে অসিয়ত করে গেছে তা পূর্ণ করা এবং যে ঋণ রেখে গেছে তা আদায় করার পর।
তোমরা জানো না তোমাদের বাপ-মা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারের দিক দিয়ে কে তোমাদের বেশী নিকটবর্তী। এসব অংশ আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ অবশ্যি সকল সত্য জানেন এবং সকল কল্যাণময় ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন” (সূরা আন নিসা:১১)।
নারীর উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আল-কুরআনের এ আয়াতখানি এতটাই স্পষ্ট যে, এ নিয়ে আর কোন ব্যখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের কাজই হলো- বিভিন্ন চটকদার কথা ও বিভিন্ন অধিকারের কথা বলে ইসলামের বিধি-বিধানকে মানুষের কাছে বিতর্কিত করা।
নারীর ক্ষমতায়ন ও সমান অধিকার নিশ্চিত করতে তারা যতটা না আন্তরিক তার চেয়ে বেশী আন্তরিক ইসলামকে বিতর্কিত করতে। মূল উদ্দেশ্য ইসলামকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা। এই অধিকার সেই অধিকারের কথা- ছুতা মাত্র। ইসলামের বিরুদ্ধবাদীরা সব সময় আল্লাহর আইনের চেয়ে যুক্তিকে বেশী প্রাধান্য দেয়। কিন্তু কখনো কখনো তারা যুক্তিরও ধার ধরে না।
নারীর সমান অধিকার কেন অযৌক্তিক: নারী-পুরুষের সমান অধিকার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যার নূন্যতম বিদ্যা-বুদ্ধি আছে তিনি একথা বলতে পারেন না। নারী পুরুষের সমান অধিকার তালাশ করা বিজ্ঞান সম্মত কাজ নয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। আচ্ছা বলুনতো আগুন ও পানি কি এক? আসমান ও যমিন কি এক? মাটি ও বাতাস কি এক? যার বিন্দুমাত্র বোধ আছে তিনি বলবেন, না এক নয়।
পানি এক ধরনের বস্তু যার সাথে রং, গুণ, আকৃতি, রূপ, উপকারীতা ও অপকারীতায় আগুনের সাথে কোন মিল নেই। ঠিক তেমনিভাবে আকাশ-বাতাস, আসমান-যমিন সবকিছুই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। এগুলোর কোনটিকে আরেকটির মধ্যে একাকার করা যাবে না। আবার কলা গাছ ও আম গাছ এক নয়। এই দুই জাতের গাছের রং, বৈশিষ্ট্য, ধরণ সবই আলাদা।
এই দু’ধরনের গাছকে কি কেউ সমান বানাতে পারবে? নিশ্চয়ই না। আবার ধরুন যে ব্যক্তি ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলো, তিনি কি একজন ফাইভ পাশ করা ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করবেন? দু’জনের বেতন কি এক হবে? নিশ্চয়ই নয়। একজন কুলি মাথায় করে একবস্তা চাউল বহন করে গন্তব্যে গিয়ে একশ টাকা দাবি করতে পারে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েও তিনি ঐ কুলির মত একশ টাকা দাবি করতে পারেন না; কেননা তিনি এখানে অযোগ্য, বস্তা টানার যোগ্যতা তার নেই, তার আছে পড়ানোর যোগ্যতা। কুলিও অধ্যাপকের বেতনের সমান বেতন দাবি করতে পারেন না যেহেতু তিনি পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন না।
উপরোল্লেখিত উদাহরণগুলি যদি যৌক্তিক মনে হয় তাহলে আমাদেরকে মানতে হবে নারী-পুরুষও সমান নয়।
সমান নয় তাদের অধিকারও। আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে সম্পূর্ন আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরী করেছেন। নারীদের দেহের গঠন, মেজাজের ভারসাম্য, কর্ম তৎপরতা, কাজের সক্ষমতা, স্বভাব-চরিত্র সবকিছুই পুরুষ থেকে আলাদা। নারীরা গর্ভ ধারণ করতে পারে কিন্তু পুরুষ তা পারে না। আবার পুরুষ যে কাজ করতে পারে নারীরা তা পারে না।
পুরুষের সাহস ও বীরত্বপণার ধারে কাছেও নারীরা যেতে পারে না। নারীরা একটি সন্তান ধারণ ও পালন করতে যে ধৈর্য্য প্রদর্শন করেন তা কোন পুরুষের মধ্যে কামনা করা যায় না। তাই নারী পুরুষের সমান অধিকার চাওয়া ভুল ও অন্যায়। এটি একটি অযৌক্তিক দাবি।
বাস্তবতা কি বলে: কেউ বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারে না।
বর্তমান সময়ে নারীরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধন করলেও তার নিজ স্বত্বাই এখন সবচেয়ে বেশী হুমকির মধ্যে নিপতিত। এখন নারীরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত।
সত্যকথা হচ্ছে বর্তমান এ সভ্য যুগে নারীরাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতিতা। তাদের উপর যে বর্বরতা চালানো হয় তা জাহেলী যুগকেও হার মানায়। প্রতিটি ক্ষণে বিশ্বের ভিভিন্ন জায়গায় নারীকে ধর্ষণ করা হয়, হত্যা করা হয়, নির্যাতন করা হয়, এসিড নিক্ষেপ করা হয়, আগুনে পুড়ে মারা হয়।
ভারতে গর্ভবতী মহিলাদের আল্ট্রাসনো পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তান মেয়ে নাকি ছেলে তা পরীক্ষা করা হয়। যদি মেয়ে হয় তাহলে গর্ভাবস্থায়ই তাকে মেরে ফেলা হয়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নারী নির্যাতনের দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে খ্যাতিও (!) অর্জন করেছে। ইভটিজিং, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকারের’ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত ২০১০ সনে বাংলাদেশে ধর্ষিত হয়েছেন ৫৫৬ জন নারী ও শিশু।
এরমধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৯ নারী ৯৩ শিশু। আর যৌতুকের কারণে সংহিসতায় প্রাণ দিয়েছেন ২৪৩ জন নারী।
নারীরা বাজারের পণ্য। টিভির পর্দায় এদেরকে পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়। উপস্থাপন করা হয় নগ্নভাবে।
নাটক সিনেমাতে নারীদেরকে পুরুষের মনোরঞ্জনের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফ্যাশন শোর নামে নারীর দেহ প্রদর্শনী চলে। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামে নারীর সবকিছুকেই বিসর্জন দেয়া হয়। এ সভ্যযুগেও প্রত্যেকটি দেশের হোটেলগুলিতে নারীদের দেহ দিয়ে পুরুষদের খেদমত করানো হয় সরকারী বৈধতা নিয়েই। শপিংমল, মার্কেট বিপনী বিতানগুলোতে নারীরা সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পিছনে কাজ করে তাদের রুপ সৌন্দর্য্য।
দেশে দেশে পতিতালয় গড়ে উঠেছে নারীদের নিয়ে যা দিয়ে সরকার আয়ও করে থাকে। নারীদের ব্লু ফিল্ম তৈরী করে বাজারে সিডি ছাড়া হয়। ইন্টারনেটে কোটি কোটি ওয়েব সাইট নারীদের পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফিল্ম দিয়ে সাজানো। যেখানেই যাবেন সেখানেই নারী অনুষঙ্গ। তবে তা পণ্য হিসেবে, ব্যবসায়িক কাজে।
অন্য কিছু নয়। কিছুদিন আগে বৃটেনে নাকি নারী বক্ষের দুধ বাজারজাত করণ শুরু হয়েছে। তা দিয়ে তৈরী হচ্ছে চকলেট। অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে নাকি এ উদ্যোগ!
উপরের চিত্র থেকে এটাই প্রতিভাত হয় যে, যারা নারীদের সমান অধিকারের কথা বলেন তারা নারীদের সতীত্ব, ইজ্জত ও জীবনকে তুচ্ছ করে ও তাদেরকে পন্য বানিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তাতে নারীর যা লাভ হয়েছে তার চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশ।
এটাই সত্য। এটাই নির্মম বাস্তবতা।
ইসলামে নারীর মর্যাদা: আরবের আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ সম্পর্কে আমরা কম-বেশী সবাই জানি। যেখানে নারীরাই সবচেয়ে নিগৃহীত হতো। কোন বাবা কণ্যা সন্তান সহ্য করতে পারতো না।
কণ্যা সন্তান জন্ম হলে বাবা অপমান বোধ করতো। নবজাতক কণ্যাকে জ্যান্ত কবর দেয়া হতো। ইহুদী খৃষ্টান ও হিন্দু কোন ধর্মেই নারীদের বেশী মর্যাদা ছিল না। ইহুদীদের পুরাতন গ্রন্থ ‘তালমুদে’ বলা হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী জাতিকে মানব জাতির অপরাধের ফল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। হিন্দু ধর্মের সতিদাহ প্রথার কথা এখনো কেউ ভুলেনি।
ইসলাম ধর্ম নারীকে যে মর্যাদা দান করেছে তা দুনিয়ার কোন বিধান, সংস্থা ও কেউ দিতে পারেনি কিয়ামত অবধি কেউ দিতেও পারবে না। ইসলাম নারীকে মায়ের মর্যাদা দিয়ে যে সম্মানিত করেছে তা অপূর্ব। আল্লাহর সাথে কোন ‘মা’ শরীক করলেও স্বয়ং আল্লাহ সন্তানকে তার মুশরিক মাতার সাথে সদাচরণ করতে বলেছেন। আল্লাহ বলেন: “আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে।
তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে” (সূরা লুক্বমান: ১৪-১৫)। একদা একব্যক্তি রাসূল (স.) কে জিজ্ঞেস করলেন: হে রাসূল (স.) মানুষের মধ্যে কে আমার ওপর সদ্ব্যবহারে বেশী অধিকার রাখেন? তিনি বললেন: তোমার মা।
লোকটি বলল: এরপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: এরপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: এরপর কে? নবী (স.) বললেন: এরপর তোমার বাবা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোষাক স্বরূপ আখ্যা দিয়েছেন। রাসূল স. বিদায় হজ্জেও নারী অধিকারের কথা উচ্চারণ করেছেন।
নারীর প্রতি ইসলামের সুবিচার: ইসলাম নারীর মর্যাদা শুধু মৌখিক স্বীকৃতির মধ্যে আবদ্ধ রাখেনি বরং তাকে অর্থনৈতিকভাবেও সুসংহত করেছে। নিম্নের কয়েকটি লাইনে তা আরও পরিস্কার হবে।
* মেয়ে হিসেবে সুবিধা: মেয়েকে বিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত মেয়ের যাবতীয় দেখ-ভালো বাবাকেই করতে হয়। বাবা মৃত্যুবরণ করলে ভাই, মা, মামা, দাদা, চাচা কিংবা যেকোন নিকট আত্মীয় উক্ত মেয়েকে পাত্রস্থ করার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। অথচ ছেলের বেলায় এর বিপরীত।
ছেলে বড় হওয়ার সাথে সাথে সংসারের বোঝা তার ওপরেই বর্তায়। তিনি নিজে বাবার কাজে সাহায্য করেন। চাকুরী করে টাকা পয়সা পরিবারে খরচ করেন। নিজের বোনদেরকে ভালো ছেলের কাছে বিবাহের ব্যবস্থা করেন।
* স্ত্রী হিসেবে সুবিধা: আবার যে ছেলে তাকে বিয়ে করল সে ছেলের মোহরানার টাকাও সম্পূর্ণ মেয়ের।
এ সম্পদে আর কারও অধিকার নেই। তাছাড়া স্ত্রীর আজীবন ভরণ-পোষণের খরচ স্বামীকে বহন করতে হবে। অসুস্থ হলে স্বামীকেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সন্তান হলে, সন্তানের লালন পালনে যাবতীয় খরচও কিন্তু সন্তানের বাবার অর্থাৎ স্বামীকে বহন করতে হবে।
* মা হিসেবে সুবিধা: একজন মহিলা মা হিসেবেও অনেক সুবিধা ভোগ করে থাকেন।
মায়ের যাবতীয় দেখাশুনা ছেলেকেই করতে হয়। কোন মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে এসে মাকে পালন করে না। আবার মা হিসেবে মৃত সন্তানের সম্পত্তিতে ভাগ পান।
* বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে সুবিধা: বাবা মারা যাওয়ার পরে বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে মেয়েটি তার ভাইয়ের অর্ধেক পরিমাণ সম্পদ পায়। এ সম্পদও তার কোথাও খরচ করতে হয় না।
তাহলে এবার উদাহরণ স্বরূপ দেখা যাক কে বেশী লাভবান পুরুষ নাকি মহিলা? দেখুন মহিলাই লাভবান বেশী। ধরুন কোন মহিলা বিশ বছর যাবত বাবার সংসারে থেকে বিয়ের মাধ্যমে স্বামীর ঘরে এলো। সেখানে সে মোহরানা বাবদ পাচ লক্ষ টাকা পেল। আবার বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার সম্পত্তি থেকে ইসলামী আইন মোতাবেক দশ লক্ষ টাকার সম্পদ পেল। উক্ত মহিলাটি এখন পনের লক্ষ টাকার মালিক।
এই পনের লক্ষ টাকা তাকে খরচ হয়না। তিনি চাইলে এ সম্পত্তি ব্যবসার মাধ্যমে আরো বর্ধিত করতে পারেন। অপরপক্ষে একটি ছেলে বাবার সম্পদ থেকে বিশ লক্ষ টাকার সম্পদ পেল। সেই সম্পত্তি বাহ্যত মেয়ের দ্বিগুন হলেও এই সম্পত্তি ছেলে জমা করে রাখতে পারে না। তার সম্পদ ব্যয় করতে হবে অনেক খাতে।
* তাকে বিয়ে করতে হলে মোহরানা বাবদ টাকা ব্যয় করতে হবে।
* নিজ স্ত্রীর থাকা খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ চালাতে হবে।
* নিজ সন্তানের যাবতীয় খরচ চালাতে হবে।
* নিজ পিতা-মাতার খরচ বহন করতে হবে।
* বোন-ভগ্নিপতি ও আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করতে হবে।
* বাবা কর্জ রেখে মারা গেলে তাও শোধ করতে ছেলেকে। অর্থাৎ শুধু ছেলে হওয়ার কারণে একটিমাত্র উৎস থেকে সম্পদ পেয়েও তাকে একাধিক খাতে ব্যয় করতে হয়। আর শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে একাধিক উৎস থেকে সম্পদ পেয়েও তার ঐ সম্পত্তি কানাকড়িও ব্যয় করতে হয় না। কোথাও ব্যয় করার দায়বদ্ধতাও নেই মেয়েটির। এই বিধান বৈষম্যমূলক নয়।
ছেলেদেরকে আল্লাহ সমস্ত দায়-দায়িত্ব নেয়ার সক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন বিধায় তাকে এ দায়িত্ব নিতে হয়।
নারী-পুরুষ সমান অধিকার: সুবিচার নয় অবিচার: আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জুলুম হবে। এতে সমাজে নৈরাজ্য তৈরী হবে। পুরুষ বলবে আমি সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করে রোজগার করি, নারীদেরকেও আমাদের মত কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। পুরুষের দাবি মোতাবেক সকল নারীরা যদি কঠিন পরিশ্রমে নেমে যায় আর সন্তান ধারণ থেকে বিরত থাকে তাহলে এ জগত সংসার একদিন মানব শূণ্য হয়ে পড়বে।
আবার কোন মহিলা যদি বলে তোমার আমার সমান অধিকার; তাহলে আমি কেন একা সন্তান ধারণ করবো? তোমাকেও সন্তান ধারন করতে হবে তাহলেও বিসৃংখলা দেখা দিবে। আবার পুরুষেরা বিয়ের সময় মোহরানা দিতেও অস্বীকার করবে। সংসারের যাবতীয় খরচে পুরুষ লোকটি স্ত্রীর কাছে অর্থ তালাশ করবে। এতে করে দিন দিন সংসারে ঝগড়া বিবাদ বাড়বে। অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলবে।
বাবার সম্পত্তিতে ভাইয়ের সমান ভাগ বসাতে গিয়ে নারীরা কেন নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন? অথবা সরকার কেন তাদেরকে এমনটি করতে বাধ্য করবেন? এটি অবিচার নয় কি?
আল্লাহর কাছে নারী পুরুষের মর্যাদা: কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষকে মানুষ হিসেবে দেখবেন। তিনি মানুষ হিসেবে যার যে দায়িত্ব ছিল তা পালন করা হয়েছে কিনা তার হিসাব নিবেন। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে যিনি বেশী খোদাভীরু তিনিই আল্লাহর কাছে সম্মানিত” (সূরা আল হুজুরাত: ১৩)। এখানে কে নারী আর কে পুরুষ তা বিবেচ্য নয়। আবার হাদীসেও আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক নারী পুরুষকেই এক একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়াতেও নারী পুরুষ মানুষ হিসেবে কোন ভেদাভেদ নেই। মানুষ হিসেবে নারী পুরুষ তার মৌলিক অধিকার ভোগ করবেন। শুধুমাত্র প্রত্যেকের কর্মের পরিধি ও ন্যাচার অনুযায়ী যার যতটুকু অধিকার ভোগ করার তা ভোগ করবেন। আল্লাহর ইবাদত পালন করার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি যে, নারীর জন্য আলাদা কোন ইবাদত নেই। পুরুষ লোক যে ধরনের ইবাদত করে নারীরাও সে ধরনের ইবাদত করেন।
বরং কখনো কখনো নারীর শারীরিক দূর্বলতার কথা বিবেচনা কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে। নারীদের হায়েজ (মাসিক) চলাকালীন নামাজ পড়তে হয় না। রোযার ব্যাপারে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। মাহরিম পুরুষ না থাকলে কোটি টাকা থাকলেও হজ্জ করতে হয় না।
আল্লাহর বিধান প্রাকৃতিক; তাতেই বান্দার কল্যাণ: আমাদেরকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
গাছ-পালা, নদী-নালা, আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, পশু-প্রানী ও সূর্য্য-চন্দ্র সবই আল্লাহর তৈরী। যিনি সৃষ্টিকর্তা হন তিনিই তার সৃষ্টির স্বভাব সম্পর্কে অধিক জানেন। সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিকেই বেশী ভালবাসেন। এটিই যুক্তি সংগত ও বিজ্ঞান সম্মত কথা। এতএব যে আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহ নারীর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিকে খেয়াল রেখে ও তার কল্যাণের বিষয়টি সামনে রেখেই তার জন্য যা করার তা-ই করেছেন ও আমাদেরকেও তার বিধান মেনে চলতে বলেছেন।
অনুরূপ পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের দিক খেয়াল রেখে তাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা যে বিধান দিয়েছেন তা মেনে চলতে হবে। এটাই ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক। এর বিপরীত হাটতে গেলে সমস্যা আছে। অতএব আল্লাহর বিধানের দোষ খোজা কিংবা বিরুদ্ধচারণ করা মোটেও সমুচীন নয়। আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো চলতে পারলেই বরং নারী পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
এটিই হবে ন্যায্য অধিকার। এতেই আছে কল্যাণ। একমাত্র খোদদ্রোহী নাস্তিক অথবা গন্ড-মূর্খ ও পাগল না হলে কেউ আল্লাহর এ সহজাত নিয়মকে অস্বীকার করতে পারে না। আর খোদাদ্রোহী নাস্তিকদের উল্টা বুঝ নিয়ে আমরা আমাদের মা বোনদের বিপদের মূখে ফেলতে চাই না। নিজেরাও চাই না আল্লাহর গযবে পতিত হতে।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।