আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বদেশে গিয়ে স্বদেশ ভাবনা...

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

অর্থনীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটা সম্ভাবনার দেশ, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সমস্যা হচ্ছে সে সম্ভাবনাটাকে গিলে খাচ্ছে বিবেকহীন এবং হ্রস দৃষ্টির কিছু মানুষ। অবশ্যই কারন আছে এর পিছনে। বাংলাদেশের মানুষ কোন ভাবেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পায়না, পায়না কোন রকমের নিরাপত্তার আভাস - তাই সবাই ভবিষ্যৎতের নিরাপত্তার জন্যে সম্পদ সংগ্রহ এবং সঞ্চয়ের চেষ্টা করে। সেটা করে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র থেকে - গ্রামের চাষী করিমের ছেলেও।

এই ক্ষেত্রে কোন নীতি বা নৈতিকতার ধার ধারে না। এটা এক সময় প্রতিযোগীতায় রূপাক্তরিত হয়েছে। বন্ধুদের অনেকে ঢাকায় কন্ডোমিনিয়াম কিনেছে যা দাম ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা - আর যারা পারেনি ঢাকায় তারা জমি কিনছে মফস্বলে। সমস্যা হচ্ছে তাদের সম্পদ সংগ্রহের কোন তো সীমারেখা নেই যে - যেখানে গিয়ে থামবে তারা। এ কাজে সবাই বুদ্ধিমানের মতো তাদের সুবিধা (রাজনৈতিক, আর্থিক বা সামাজিক শক্তি ) ব্যবহার করে।

আর এ প্রক্রিয়ায় পুরোদেশটা হয়ে গেছে অনিয়ম আর বিশৃংখলায় ভরপুর। প্রত্যেকটা ক্রিয়ার যেমন প্রতিক্রিয়া থাকে তেমনি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম আর বিশৃংখলার প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নিচ্ছে সামাজিক অনিয়ম। জন্ম নিচ্ছে চাঁদাবাজ - মাস্তান আর গড ফাদার কালচারের। যেমন মনে করুন একজন ওয়াসার পানির মিটার রিডার সুদুর কোন গ্রাম থেকে এসে তার সংগৃহিত অর্থে ঢাকায় প্রসাদতুল্য বাড়ী বানাবে। সে সময় সে কিছুটা ঝামেলা মুক্তির জন্যে পাড়ার সাহসী ছেলেটাকে হাতে কিছু নগদ অর্থ আর একটা কৃত্রিম সন্মান দিলেন এবং শুরু হলো একজন মাস্তানের যাত্রা।

একসময় তার সাহস বেড়ে তার চাহিদার সীমাকে অনেক দূর নিয়ে গেলে যাতে পত্রিকায় নাম বিশেষন সহ (গলাকাটা, পেটকাটা বা কালা, ধলা ইত্যাদি) উঠে সে হলো টপ মাস্তান। তাকে মারার জন্যে বর্তমান সরকার RAB পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। তাতে কিন্তু দৃশ্যমান আগাছা বিলিন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আগাছার গোড়া কিন্তু থেকই যাচ্ছে। মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে পিলারটি তার সাথে যুক্ত হয়েছে - তা হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা। সভ্য সমাজের প্রধান নর্ম হচ্ছে যে কোন মানুষকে দোষী সাব্যস্থ করার আগে তাকে আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া।

বাংলাদেশের সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখন আর সে দিকে না গিয়ে তার উল্টা দিকে যাচ্ছে। হয় জনগন রাস্তায় একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে একটা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নয়তো RAB মেরে ফেলছে - নয়তো পুলিশ নিজেই মেরে ফেলছে একটা মিথ্যা গল্প বলে। সে মিথ্যা গল্পটা সকল মিডিয়া প্রচার করছে আগ্রহের সাথে। মিথ্যার এমন অবাধ প্রবাহ ২য় বিশ্বযুদ্ধের নাজীদের পর আর কেহ করেছে কিনা জানা নেই। পাঠক, মিথ্যাকে মিথ্যা জেনে তার সাথে সহাবস্থান কোন ধর্মের প্রভাব বা কোন ধর্মীয় প্রতিক্রিয়া কিনা এবিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার জন্যে হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম গবেষনা করবে।

আশার আলো যে নেই তা নয়। স্বাধীন দূর্নীতি দমন কমিশন, বেসরকারী ব্যাংকের সেবা আর বাংলাদেশ রেলওয়ের সময় আর সেবা দেখে অভিভূত হয়েছি। আরশোলার বিষয়টা বাদ দিলে বাংলাদেশে রেলওয়ের সময়ানুবর্তীতা আর রেলওয়ে কর্মচারীদের ব্যবহার সত্যই মুগ্ধ করেছে। ভাল লেগেছে ঢাকা শহরের বাসে চড়ে - যা নিরাপদ এবং আরামদায়ক। এ ছাড়া আজিজ সুপার মার্কেটের বই দেখে বেশ ভাল লেগেছে।

অবাক হয়েছি ঢাকার নব নির্মিত নভোথিয়েটার, আইটি মার্কেট আর বসুন্ধরা মার্কেট দেখে আর বিচলিত হয়েছি ঢাকার জ্যাম দেখে। দুঃখ পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার দুর্দশা দেখে। প্রচন্ড একটা নীতিহীনতা কাজ করছে সমাজে। সাথে যোগ দিয়েছে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভারতীয় টিভি কালচার। যা বাংলাদেশের মানুষকে একটা কাল্পনিক জগতে নিয়ে যাচ্ছে।

সে জন্যে দেখবে শাহ কিবরিয়ার ভয়াবহ হত্যা কান্ডের পর লক্ষ মানুষের সমাগম হয় ক্রিকেট মাঠ। রাতে সবাই বসে দেখে “ইন্ডিয়ান আইডল” - সুনামীর ভয়াবহতা তাদের স্পর্শ করে না। ১৯৯০ সালের গালফ ওয়ারে যেমন মানুষ প্রবলভাবে আলোড়িত ছিল- এখন মানুষ এসব নিয়ে ভাবে না। পুঁজিবাদের এক বিকৃত রূপে প্রচন্ড প্রভাবে প্রবল এক ভোগবাদী সমাজে রুপান্তরিত হচ্ছে বাংলাদেশ। সবার চাই ভোগের সামগ্রী।

যেমন ধরা যাক - মধ্যবিত্ত্ব সব সময়ই একটা হীনমন্যতায় ভোগছে। তারা সে হীনমন্যতাটাকে ঢাকতে চায় বাহ্যিক চাকচক্য দিয়ে। একটা কম্পিউটার কিনতে হবে এবং একটা সেল ফোন। অনেক বাসায় দেখেছি কস্পিউটার ব্যরহূত হয় শুধুমাত্র হিন্দি সিনেমা দেখে বা হিন্দি গান শুনে। মোদ্দা কথা হচ্ছে কি কিনলো সেটা বিষয় নয় - কত বেশী দিয়ে কিনলো সেটাই হচ্ছে সামাজিক মর্যাদার নিয়ামক।

সেখানে মৌলবাদীরা যদিও কয়েকটা বোমা ফুটিয়ে কিছু মানুষ মারেও - তাদের জন্যেও একটা ইস্পিত সমাজ প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে। একটা জটিল সামাজিক এবং আর্থিক ব্যবস্থার দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। তার ভিতরে বসবাস করার জন্যে যা দরকার তা অর্জন করছে সবাই - সেটা হচ্ছে একধরনের নির্বিকার ভাব। শুধু নিজের সুবিধার জন্যে যতটুকু দরকার তার বাইরে চিন্তা না করা। মনে হচ্ছে - “আপন ভাল- সব ভাল” এ হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক দর্শন।

(২০০৫ সালে ডিসেম্বর মাসে দেশ থেকে ফিরে লেখা, কারো ভাল লাগলে সার্থক মনে করবো)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।