হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!
শিরোণামে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিপাদ্যটা গবেষণালব্ধ না হলেও নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়; বরং বলা যায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। বিভিন্ন ভাবে আমি অসংখ্যবার এই প্রতিপাদ্যের প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু আজ শুধু একটা বিষয়ের কথাই বলব - সেটা হল ঈদের নামায বা জুমার নামাযের পর কুশল বিনিময়ের কথা।
খুব বেশি ছোটকালের কথা বলব না; গত এক যুগের কথাই বলি। গত বারো বছর ধরে কোন ঈদেই আমি ঈদের নামায মিস করিনি।
প্রথমে যখন মিসরাতায় ছিলাম, তখন সেখানকার সবচেয়ে বড় মসজিদ জামা'ল আলীতে এবং সিরতে আসার পর থেকে এখানকার একমাত্র ঈদগাহ আল মুতাবা'তে নিয়মিতভাবে ঈদের নামায আদায় করে আসছি।
সঠিকভাবে বলা কঠিন, তবে আনুমানিকভাবে বলা যায় এসব মসজিদে উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষতো অবশ্যই লিবিয়ান; তারপর সম্ভবত যথাক্রমে মিসর, সুদান, ফিলিস্তিন, জেজায়ের, মাগরিব, ইরাক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিরিয়া, ঘানা, তেশাদ, মৌরিতানিয়া, নাইজার, বসনিয়া, ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেশীয়রা।
অন্য সব দেশের মুসল্লীরা সাধারণত ঈদের নামায এবং খুতবা শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ পরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময় করেই বাড়ি ফিরে যায়। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে। মিসরাতা এবং সিরত দুইজায়গাতেই দেখেছি, হোক সেটা জুমার নামায শেষে বা ঈদের নামায শেষে, সব দেশীরা চলে যাওয়ার পরেও আরো অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশীরা থেকে যায়।
প্রায় সব বাংলাদেশীই তাদের সকল পরিচিতের সাথে কোলাকুলি করতে থাকে এবং বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। আর এটা নিছকই লোক দেখানো নয় - তাদের কন্ঠস্বর থেকেই তাদের আন্তরিকতাটুকু টের পাওয়া যায়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী কোলাকুলি করার পরে বুক ব্যাথা হয় না, এমন বাংলাদেশী পাওয়া খুবই কঠিন।
যেমন এবারকার ঈদের কথাই ধরা যাক। ঈদের নামাযের পর খুতবা শেষ হয়েছে আটটা বাজে।
সাড়ে আটটার দিকে দেখা গেল, ঈদগাহের ব্যবস্থাপনায় যে কয়েকজন লিবিয়ান ছিল তারা, দুইটা পুলিশের পেট্রোল কার আর দূরে একটা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কেউ উপস্থিত নেই; কিন্তু তখনও প্রায় সব বাংলাদেশীই বহাল তবিয়তে উপস্থিত ছিল। আমরা ঈদগাহ থেকে বাসার দিকে রওনা দেই সোয়া নয়টার দিকে। তখন পুরো ঈদগাহে মানুষ বলতে ছিল শুধুমাত্র ছয়-সাত জন বাংলাদেশী।
আর এই চিত্রতো শুধু এবারের নয়, প্রতিবারের ঈদের। আর শুধু ঈদ কেন, জুমার নামাযের পরেও সবাই চলে যাওয়ার পর, এমনকি মসজিদের শেষ ব্যক্তিটিও চলে যাওয়ার পরেও দেখা যায় কয়েকজন বাংলাদেশী মসজিদের সামনের কোন একটা ছায়ায় দাঁড়িয়ে গল্প-গুজব করছে, কথা-বার্তা বলছে - কাজের কথার চেয়ে অকাজের কথাই বেশি, যার মধ্যে একটা বড় অংশ অবশ্যই বাংলাদেশের এবং সারা বিশ্বের রাজনীতি।
ঈদগাহে বাংলাদেশীদের চেয়ে একটু আগে যারা স্থান ত্যাগ করে, তারা হল সুদানিরা। শুধু ঈদগাহের ক্ষেত্রে নয়, এমনিতেও সুদানিরা বেশ সামাজিক। বাংলাদেশীদের মতোই তারা অতিথি-আপ্যায়নপ্রিয়। প্রায়ই দেখা যায় পুরো পরিবার নিয়ে এক সুদানি আরেক সুদানির বাসায় বেড়াতে গিয়েছে, যেটা বাংলাদেশী ছাড়া এখানে অন্যদেশীদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়।
অপরদিকে মিসরীদের অবস্থান এদিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম।
ঈদগাহে দেখা যায় অধিকাংশ মিসরীই ঈদের নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ঊটে চলে যায়; খুতবা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না।
বাংলাদেশীদের অনেক দিকে অনেক নেগেটিভ পরিচয় আছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা যে অন্যান্যদেশীদের তুলনায় অনেক বেশি সামাজিক, অতিথিবত্সল, আতিথ্যপরায়ন, সেটা কি খুব বেশি বিদেশী জানে
আরও পড়ুন : প্রতি ঈদে এশীয়রা করে বকাবকি আর আরবীয়রা করে গালাগালি
ঈদ ছড়া - ঈদের চাঁদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।