যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
আলোচনা করছিলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে। এর আগের পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রস্তাবিত বিষয়গুলি ছিল শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন, নতুন শিক্ষকদের জন্য শিক্ষকতার মৌলিক কোর্স চালু এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ফিডব্যাক দানের প্রক্রিয়া চালু করা। এই পর্বে আরো দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।
# ৮ । শিক্ষক রাজনীতির ব্যাপ্তি সীমিতকরন।
-------------------------------------------------------
জাতীয় রাজনীতির সাথে শিক্ষক রাজনীতির সরাসরি সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করতে হবে। লেজুরবৃত্তির রাজনীতির পরিবর্তে শিক্ষকগণ মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করবেন এবং দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিবেন, এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। বর্তমান ধারার শিক্ষক রাজনীতিতে শিক্ষকগণ নানা রং এ বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শ ধারণ করছেন এবং জাতিকে দিক নির্দেশনা দেবার পরিবর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাবার স্ট্যাম্প হিসাবে কাজ করছেন।
আর এই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে এক শ্রেণীর শিক্ষক ছাত্রদেরকে ব্যবহার করছেন এবং প্রকারান্তরে ছাত্র-রাজনীতিকে বিপথগামী করছেন। শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে এই ধারার শিক্ষক রাজনীতি সীমিত করা প্রয়োজন।
১৯৭৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট, সিন্ডিকেট, ভিসি নিয়োগ এবং বিভিন্ন সমিতি নিয়ে নির্বাচন আধিক্যের কারণে শিক্ষক রাজনীতির আরো ব্যাপক বিস্তৃতি হয়েছে। এবং এর ফলে শিক্ষক রাজনীতির মুল সুর ব্যহত হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে কিছু সংশোধন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সংশোধনী প্রস্তাব করছি।
# ৯ ।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সংশোধন এর মাধ্যমে শিক্ষক রাজনীতির দলনির্ভরতা হ্রাস
---------------------------------------------------------
- অনুষদ ভিত্তিক ডীন নির্বাচন প্রথা বাতিল করতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির কারণে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে দলীয় আনুগত্য সম্পন্ন ভোটার নিয়োগ এর ঘটনা ঘটছে। একটি সিলেকশন প্যানেল এর মাধ্যমে অনুষদের গবেষনা ও গবেষণা প্রকাশনায় অগ্রণীদের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ডীন মনোন্নয়ন দেয়া হবে। এর ফলে ডীন নির্বাচন কেন্দ্রিক শিক্ষক রাজনীতি ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের প্রবণতা হ্রাস পাবে।
- ভিসি প্যানেল নিয়োগে নির্বাচন প্রথা বিলোপ করতে হবে।
জাতীয়ভাবে গঠিত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একটি প্যানেল গবেষণা ও গবেষণা প্রকাশনায় অগ্রণীদের মধ্যে যারা ভিসি হতে আগ্রহী তাদের মধ্যে থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে নিয়োগ প্রদান করবেন। এর ফলে দলীয় ভিসির পরিবর্তে সত্যিকারের একাডেমিক শিক্ষক ভিসি হিসাবে নিয়োগ পাবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মান উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখতে পারবেন।
- সিনেট এ শিক্ষক প্রতিনিধি, সিন্ডিকেট ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে প্রার্থীতার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী শিক্ষাবছরের গবেষণা ও গবেষণা প্রকাশনার ন্যূনতম সংখ্যা যোগ্যতা নির্ধারনে মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। এক্ষত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান দলবাজীর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষক নেতৃত্বে সত্যিকারের যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের আগমন ঘটবে।
ডীন, ভিসি, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সংশোধনের মাধ্যমেই সম্ভব।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।