দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে
একটা উৎসব হবে। কেউ আনন্দে থাকবে, কেউ কষ্টে, কেউবা অবহেলায়, কেউ স্বেচ্ছায় অন্যদিনের মত দিনটি কাটিয়ে দিবে.. এ হতে পারে না। কিছু আনন্দ থাকে নিজের জন্য, যা অন্য কেউ বুঝে না। কিন্তু কিছু আছে সার্বজনীন, এখানে সকলের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
গত কয়েকটি ঈদ এভাবে প্রাণোচ্ছল কিছু আনন্দ, খুশি, ভালোলাগা, ভালোবাসা অনুভূতির সাথে কাটিয়েছি।
মানুষকে হাসিখুশি দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। কারো দুঃখকেই দাম দিতে ইচ্ছা করে না। তবে দুঃখের কথাও শুনি, এতে সে হালকা হয়.....যে কোন বিপদের মুহুর্তে সেটা আলোচনা করলে ভাল সল্যুশন বেরিয়ে আসে।
আমার দাদার অনেকগুলি নাতি-নাতনি। উপরের দিকে কারও কারও বিয়ে হয়ে গেছে।
সবসময়ই ঈদ করি বাড়ীতে। অনেক ভাই বোনের সাথে দেখা হয়। চাচারা এলাকাতেই থাকেন, ফুফুদের বাড়ীও কাছাকাছি। আমরা নাতি-নাতনীরা মিলে ঈদে ইউনিক কিছু করার চেষ্টা করি। সবার ঈদ বোনাসের কিছুটা অংশ দিয়ে আমাদের কাজের জন্য ফান্ডিং করি।
অনেকদিন সামহয়্যারে লেখি না, কিভাবে গুছিয়ে লিখব বুঝছি না। আচ্ছা, গত ঈদেরই বর্ননা দেই। আমরা ভাই-বোনেরা মিটিং করে ঠিক করলাম এবার বাড়ীতে একটা অনুষ্ঠান করব। ভাবনা মত, দোকান থেকে পোস্টার পেপার কিনে বাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করলাম রকমারী ভাষায়। সবাইকে দাওয়াত করা হল ঈদের দিন সন্ধ্যায় বাড়ীর আঙিনায়।
প্রশস্ত আঙিনা। ডেকোরেটর থেকে সামিয়ানা, চেয়ার এসব আনালাম। সাজিয়ে ফেললাম উঠানকে। কাউকে কাউকে ছোট ছোট নাটিকার সিকুয়েন্স শিখিয়ে দিলাম, যেগুলোতে ছিল মানুষ হাসানোর দারুণ সব গল্প। ছিল মজার ধাঁধাঁ, মুরুব্বিদের বক্তৃতা, সমবেত সংগীত, আর অনাবৃষ্টির দিনেও তালি দিয়ে বৃষ্টি সৃষ্টির অনাবিল সৌন্দর্য।
দেখলাম সবাই এক্সপার্ট। পিচ্চিদের আনন্দ যেন ধরে না। সোৎসাহে রিহার্সেল চলল। কারোর মধ্যেই নেই অনাগ্রহ।
অনুষ্ঠানের শুরুটায় ছিল এরকম...... বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট জনের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করছেন।
ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে নজরুলের সেই গান " ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এল খুশির ঈদ"। সবাই একে একে সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, আর সালাম দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী মুচকি হেসে সালামের জবাব দিচ্ছেন। যাদের উষ্ঞ অভ্যথর্না জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, ঘোষক তাদের নাম ঘোষণা করছে উইথ ডেজিগনেশন। শেষে আবার এই পর্বটা নিয়ে ছিল ধাঁধাঁও।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে পিচ্চিদের সমবেত কন্ঠে সেই মজার গানটাও ছিল, "দুনিয়াটা যেন হায় মানুষের মেলা, কতশত মানুষ হায় করছে যে খেলা"। গানের কথা আর পিচ্চিদের ভাবলেশহীন মনে গাওয়া গান ছিল দেখার মত।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ছিল আব্বা দাদার বক্তৃতা। তাঁরাও এভাবে সব আত্নীয় স্বজনকে একসাথে নিয়ে ইতোপূর্বে কথা বলার সুযোগ পান নি। তাঁদের কথাতেও ছিল আবেগ, স্নেহ-মায়া, ছিল ইসলাম কে সঠিকভাবে অনুসরণের তাগিদ।
নিঃসন্দেহে জমে উঠেছিল অনুষ্ঠান। দাদা তো খুবই খুশি।
লাইভ অনুষ্ঠান, সেটা যদি নিজেদের লোকদের নিয়ে হয়- নিজেদের পরিবেশে- তবে বুঝতেই পারছেন কেমন মজা। অনুষ্ঠান শেষে ছিল পুরস্কার বিতরণ। সেখানেও ছিল মজা।
খুব ভাবসাব করা প্যাকেট, ভিতরটা খুললেই হাসির রোল পড়ে যায়।
আসুন ঈদে আমরা সবাই এরকম ইউনিক কিছু করার চেষ্টা করি। সবকিছু টিভি অভিনেতাদের উপর ছেড়ে দিলে হয়! আপনার ফ্যামিলিতেই ছড়িয়ে আছে মজাদার কতসব রেসিপি।
এই ঈদটা অবশ্য আমার জন্য একটু অন্যরকম। এবার আমি নিজেই আনন্দের উৎস।
একটু বড়ও হয়ে গেছি, অন্য কেউ এসে দায়িত্ব নিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।