আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদুল আজহার শিক্ষা

জানার আগ্রহ মানুষের চিরন্তন, বই হলো তার বাহন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্তু বইয়ের মৃত্যু নেই। মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহতাআলার সৃষ্ট সকল জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষই 'আশরাফুল মাখলুকাত'- সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু মানুষ সেই উঁচু মাপের বিশেষণের অধিকারী হলেও তারাই আবার নানা সময় নানা প্রলোভন, প্ররোচনা বা অসৎ সঙ্গে পড়ে আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে বিচূ্যত হয় এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। তাই আল্লাহপাক মানুষকে সৎ পথের নির্দেশনা দিতে যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। এই নবী ও রাসূলদের একজন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এক অন্ধকার যুগে আল্লাহপাক তাঁকে প্রেরণ করেন মানুষকে ভালো কাজের পরামর্শ ও মন্দ কাজে বাধা দিতে।

আল্লাহপাক প্রায়ই তাঁর প্রিয় বান্দাদের ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এমনই এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। দৃঢ়তা ও আল্লাহর উপর অবিচল আস্থায় পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় এই কঠিন পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে যান তিনি। তাঁর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সময়টিকে দুনিয়ার বুকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে তাঁর অনুগত বান্দাদের প্রতি কুরবানি করার আদেশ দেওয়া হয়। এই যে কুরবানীর কথা বলা হল সে আদেশ আমাদের কাছে কীভাবে এল তা অবশ্যই সকলের জানা দরকার।

একদিন হয়রত ইব্রাহিম (আঃ) ঘুমিয়ে আছেন। তখন গভীর রাত। হঠাৎ তিনি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তাঁকে বলা হল তাঁর প্রিয় বস্তুকে কুরবানি দিতে। ভোরে উঠে তিনি আল্লাহ পাকের নামে উট আর দুম্বা কুরবানি করলেন।

তার পরের রাতে তিনি আবার একইরকম স্বপ্ন দেখতে পেলেন। পরের দিন ভোরে তিনি আরও বেশি উট আর দুম্বা কুরবানি করলেন। তৃতীয় রাতে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় রাতের স্বপ্ন থেকে তৃতীয় রাতের স্বপ্নে একটা সুনির্দিষ্ট বিষয়কে ইংগিত করা হলো, 'হে ইব্রাহিম, তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কুরবানি ক'রা। তৃতীয় রাতের স্বপ্নের পর হয়রত ইব্রাহিম (আঃ) পরলেন মহা ভাবনায়।

একজন নবীর কাছে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কী! ধন, দৌলত, ঐশ্বর্য। নিশ্চয় নয়। আল্লাহ প্রেমে পাগল নবী বুঝতে পারলেন আল্লাহ নিশ্চয় তাঁর কলিজার টুকরা, নয়নের মণি কিশোর পুত্র হযরত ইসমাইল( আঃ) কে কুরবানি করার কথা বলেছেন। এতটুকু বিচলিত বা চিন্তিত না হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর প্রিয় পুত্রকে জানালেন তা। আল্লাহ পাকের ইচ্ছার কথা জানতে পেরে পুণ্যবান পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) হাসি মুখে তাতে সম্মতি দিলেন।

আর মা হাজেরা (আঃ)ও সানন্দের গর্ভের ধনকে উৎসর্গে রাজী হলেন। যথাসময়ে পিতা-পুত্র মিনার এক উন্মত্ত ময়দানে হাজির হলেন। পিতা ইব্রাহিম (আঃ) এর হাতে চকচকে এক ক্ষুরধার ছুরি। তিনি ইসমাইল (আঃ) এর চোখ বেঁধে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। তারপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসমাইল(আঃ) এর গলায় ছুরি চালানো শুরু করলেন।

তখনই ঘটে গেল এক বিস্ময়কর ঘটনা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন তখনই আল্লাহর হুকুমে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বেহেশত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে আসলেন। হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে আল্লাহ পাকের প্রেরিত দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল। এভাবে আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পরীক্ষা পাসের নেয়ামত দান করেন। এবং পরবর্তী বংশধরদের তদ্রুপ পশু কুরবানির বিনিময়ে আত্মত্যাগের নিদর্শন রক্ষা করতে নির্দেশ দেন।

এ ঘটনার পর থেকে সারা মুসলিম বিশ্বে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর কুরবানি করার কথা বলা হয়েছে। তারই সূত্র ধরে আজ পর্যন্ত যে অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে তাহাই কুরবানি। ঈদুল আজহার দিন তাই নিছক কোন অনুষ্ঠানের নাম নয়। এটি একটি পবিত্র ইবাদত। নামাজ যেমন একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে, অনুরূপ কুরবানিও এক আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কারো জন্য করা যেতে পারে না।

ইসলামী শরিয়তে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন নামে পশু জবাই করলে তা কুফর ও শিরকের অন্তুর্ভুক্ত হয়। দশই জিলহজ্ব ঈদুল আজহার দুই রাকাআত ওয়াজিব নামায শেষে কুরবানি করা সামর্থবান নারী-পুরুষের একান্ত কর্তব্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে কুরবানি যেন লোক দেখানো কিংবা গোশত খাওয়ার জন্য না হয়। ছাগল, ভেড়া, গরু, মহিষ, দুম্বা বা উট কুরবানী করা যায়। বন্য প্রাণী হরিণ বা অন্য কোনে দামি প্রাণী কুরবানী করা জায়েজ নয়।

নিখুঁত প্রাণী কুরবানি করা প্রধান শর্ত। ছাগল, দুম্বা, ভেড়া একজনে, গরু, মহিষ বা উট সাতজনে পর্যন্ত কুরবানি করতে পারে। কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফকির মিসকিন, একভাগ আত্মীয়স্বজন এবং একভাগ নিজের জন্য রাখা মুস্তাহাব। কুরবানির সঙ্গে নিহিত আছে আল্লাহপাকের প্রতি আমাদের ভালবাসা, আনুগত্য, নৈকট্য ও আত্মত্যাগের নিদর্শন। আর তাই ঈদুল আজহা প্রতিবছর আমাদের জীবনে নিয়ে আসে আত্মত্যাগের এক মহান শিক্ষা।

এমরান চৌধুরী Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.