নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
"পানি পথের যুদ্ধ" - অর্থাত পানিতে পানিতে যে যুদ্ধ, নদী, বিল, হাউড়, সমূদ্র সোজা কথায় পানিতে পানিতে অবস্থানে যে যুদ্ধ পরিচালিত হয়, সেটাই "পানি পথের যুদ্ধ"।
এরকমটি যদি কেউ ভেবে থাকেন তাতে আমার বিন্দুমাত্র কোন দ্বিধা কিংবা বিরোধ নেই, কারণ সময়ের আবর্তে বর্তমানের "সড়ক পথের যুদ্ধ"-কে যে একই রুপে রং-এ সংঙ্গায়িত করব, তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই।
পানি পথের প্রসঙ্গ বাদ দেই, কি পানিতে যুদ্ধ হয়েছিল, না ডাঙ্গায়, না মাঠে ঘাটে হয়ে শেষ মেষ পানিতে ঝাপিয়ে পড়েছিল সে ইতিহাস রচনা করবনা। এই সময়কার আলোচিত "সড়ক পথের যুদ্ধ" নিয়েই খানিকটা বলি, যা কিনা আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রতিদিনই এ যুদ্ধ করে কখনো জয়ী, কখনো পরাজিত সৈনিক কিংবা নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে।
অফিস শেষ হয় বিকেল ৩টার দিকে, রাস্তায় বের হতে হতে ৩.৩০ বেজে যায়, ইফতারীর সময় ৫.৫৫ কি এর ধারে কাছে, হাতে সময় থাকে মাত্র ২.৩০ ঘন্টার মত, এরই মধ্যে যে যার গন্তব্যে পৌছানোর ব্যাকুল আগ্রহ ও তীব্র ইচ্ছাই আমাদের "সড়ক পথের যুদ্ধ"-এর আবির্ভাব।
বাবা চায় পরিবারের সাথে ইফতারি করবে, সন্তান চায় বাবা মার সাথে কে না চায় এই সময়টুকু নিজ পরিচিতদের মাঝে সময় দিতে, আর তখনই শুরু হয় "সড়ক পথের যুদ্ধ"। কে কার ঠেলে আগে বাসে উঠবে, ধাক্কাধাক্কি, মারামারি, গালাগালি, কোনটাই বাদ যায়না। এক একজনের একশন কোন অংশেই যুদ্ধের মাঠের তেজী সৈনিকের চেয়ে কম নয় !
আজকের আমার ব্যাক্তিগত ঘটনা বলি,
অফিস থেকে বের হয়েছি প্রায় ৪টায়, হাতেও বেশী সময় নেই, বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায়, কদাচিত আমার গন্তব্যের বাসের দেখা মিললেও তাতে তিল ধারণের ঠাই নেই, এমনিতে যা দুই একজন নামছে তাও আবার চলন্ত গাড়ী থেকে। যুদ্ধ বলে কথা, রিস্ক নিতেই হবে, তাই ৪৫মিনিট অপো করে চলন্ত বাসেই লাফ দিয়ে কোনরকমে গেইটের হ্যান্ডেলটা ধরতে পারলাম, ব্যাস এতেই কেমন জান রাস্তার পাশে হাজার হাজার দাড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মধ্য থেকে নিজেকে কেমন জানি গর্বিত মনে হল, পরের স্টপজে লোক নামবে, তাই গেট থেকে হ্যান্ডেলটা ছাড়তেই তা ফসকে গেল, বাসও কিছুদূর এগিয়ে গেল, বাসও চলছে চাকায়, আমি চলছি পায়ের দৌড়ে। যাক অবশেষে কোনরকমে ফাক গলিয়ে বাসের ভিতরেই অবস্থান করে নিলাম, এবার দেখি নতুন বিপদ, পকেটে বোনাসের পুরো টাকাট, পেন ড্রাইভ, মানিব্যাগ সবকিছুরই চিন্তা মাথায় ভর করল, কোনটা সামলাব, সামনের পকেট না পিছনের পকেট, এদিকে চাপাচাপিতে দু - পায়ের উপর আরও চার পা-এর অবস্থান নিশ্চিত হর, সবারই দুর্দশার কথা চিন্তা করে সেটা মেনে নিলাম, কিন্তু নিজের পকেট তো নিজেকেই সামলাতে হবে, সে দুশ্চিন্তায় আরও পেয়ে বসল, এক হাত ডান পকেটে এক হাত স্টান্ডে এবং মস্তিষ্কের সব নিউরণগুলোকে একটিভ করে রেখেছি পিছনের পকেটে।
ওদিকে ভাড়া নিয়ে কণ্টাক্টর আর প্যাসেঞ্জারের মধ্যে গগণবিদারী চিতকার শুরু হয়েছে, যত বলি রমজান মাস ভাই সংযত হন, কে কার কথা শোনে, যে যার লাইনে চলছে। গন্তব্য মাত্র ৩০ মিনিটের কিন্তু সেই পথ এসে পৌছলাম ১ঘন্টারও উপরে। হাতে আছে মাত্র ১০-১৫মিনিট, বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসায় পৌছতে সময় লাগবে যদি হেটে যাই ১০ মিনিট, আর রিকশায় গেলে ৭-৮ মিনিট, বাস থেকে নেমেই দিলাম ভো - দৌড়, আল্লহর অশেষ রহমত হুজুর সাহেব আযানও দিয়েছেন, আর আমি বাসার গেইটে, মা সাথে সাথে শরবতের গ্লাস নিয়ে আগে ইফতারী সেরে জামা কাপড় খুলতে বললেন, ওইভাবেই শরবত পান করে আজকের দিনের "সড়ক পথের যুদ্ধ"-এর এখানেই সমাপ্ত করেছিলাম।
এটা শুধু, আমার একার একদিনের ঘটনা, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন এরকম আমরা যারা বাসের পথে বা পথের বাসের ভ্রমনপিপাসু তাদের প্রতিদিনকার এ "সড়ক পথের যুদ্ধ"-এর বণর্না কিরূপ। কোনদিন হয়তবা বিজিত আবার কোনদিন হয়তবা জয়ী, এইতো এভাবে যুগের বিবর্তনে "সড়ক পথের যুদ্ধে" আমরা লড়াকু সৈনিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।