যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
এর আগের পর্বগুলিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সূচকের আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মানের প্রকৃত অবস্থা এবং শিক্ষা মানের অধোগতির সাধারণ কারনগুলি আলোচনা করেছিলাম।
এর আগের দুটি পর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামান নিয়ে তুলনামুলক আলোচনা করার পর দেখা যাচ্ছে যে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান কোন ক্রমেই উঁচু দরের নয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে বহু পিছিয়ে আছে। তাই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সত্যিকারের বিকল্প বা সহযোগী হিসাবে গড়ে উঠছেনা। এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষার শিক্ষার মানের সার্বিক উন্নতিতে আমাদের প্রধান ফোকাস হতে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি, এবং সেই সাথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে।
এই পর্ব থেকে তাই প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামান উন্নয়নে করণীয়গুলি আলোচনা করব এবং তারপর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দিকে নজর দেয়া যাবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয়
------------------------------------------------
১। - বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য উন্নত বিশ্ব ও সার্কভূক্ত অন্যান্য দেশের আদলে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করা গেলে তাদের শিক্ষাদান ও গবেষণায় উদ্যম বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে যা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবার স্থান আর এই জ্ঞান সৃষ্টির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকমন্ডলীকে যদি সম্মানজনকভাবে সংসার চালানোর জন্য বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ নিতে হয়, তাহলে জ্ঞান সৃষ্টির প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে। এবং এটিই বর্তমান বাস্তবতা।
অর্থনৈতিকভাবে অনিশ্চিত কারো পক্ষে সৃষ্টিশীল কিছু উপহার দেয়া কঠিন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রমে নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষা মানের উন্নতিতে তা একটি পজেটিভ ভূমিকা রাখতে বাধ্য। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল হবে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
২ । - পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রিসার্চ এ্যাসেসমেন্ট এক্সারসাইজ (RAE) চালু করতে হবে।
গবেষণায় অগ্রণী শিক্ষক, বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ ইনসেনটিভ প্রদান করতে হবে। এবং একই সাথে গবেষণা ও শিক্ষামানে পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলকে RAE স্কোর এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।
Research Assessment Exercise (RAE) প্রক্রিয়া চালুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে উদ্যোগী হয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করতে হবে। এই প্যানেল কিছু নির্দিষ্ট প্যারামিটার যেমন
- - Journal publication
- Research collaboration
- Academic achievements
- Research funding
- Student feedback
ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করবে। প্রয়োজনে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য একটি নির্দিষ্ট প্যানেল কাজ করতে পারে।
এই র্যাংকিং এবং RAE স্কোর ফলাও করে জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকগণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে সক্ষম হবেন এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন।
এছাড়াও এই র্যাংকিং এবং RAE স্কোর এর শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
এটি চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের সুনাম ও অস্তিত্বের স্বার্থেই শিক্ষা মান উন্নয়নে সচেষ্ট হবেন। পাশ্চাত্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রক্রিয়া চালু আছে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।