যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
এর আগের দুটি পর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মানের অধোগতির কারনসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ থাকল দেশের প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষামানের অবনতির অন্যতম একটি কারন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ এবং সেই সাথে শিক্ষার মান পর্যালোচনায় পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামুলক চিত্রের প্রথম পর্ব।
# পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অবনতিতি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান নিম্নগতির আর একটি বড় কারণ হচ্ছে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্থান। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করছে এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় ব্যাপার। এবং এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী শক্তি হিসাবে শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এটাই ছিল প্রাথমিক প্রত্যাশা।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠন প্রক্রিয়া এবং এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষকদের অংশগ্রহণের ব্যাপকতায়। প্রায় সব কটি বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষকের প্রকট অভাব বিদ্যমান।
এই অভাব তারা পূরণ করছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে তাদের পার্টটাইম শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে নিরলস শিক্ষাদানে ব্যস্ত আছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম হয়ে পড়ছে নিতান্তই গৌণ।
ফলে তাদের মূল্যবান সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা। অনেকেই আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে পাকাপোক্তভাবে পাড়ি জমাচ্ছেন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সামগ্রিক মান নির্ধারণে এই ঘটনাগুলি নেতিবাচক প্রভাব রাখছে তা বলাই বাহুল্য।
# শিক্ষার মান পর্যালোচনায় পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামুলক চিত্র
সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি ও শিক্ষক-রাজনীতি সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা, সেশন-জট, ধর্মঘট, আন্দোলন, কাস, পরীক্ষা বর্জন, মারামারি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া প্রভৃতি ঘটনার কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবকদের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে । এ সকল অভিভাবকগণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হিসাবে বেছে নিচ্ছেন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।
এর বাইরে সামগ্রিক মেধায় পিছিয়ে থাকা সমাজের উচু শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী যাদের অধিকাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে অক্ষম, তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসেছে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোন সেশন-জট নেই এবং শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে তাদের শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারছে। তাই এখন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির একটি জোয়ার পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হতে পারছে? বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কি আদৌ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সাথে তুলনীয়?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়টি বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মানের সাথে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত। প্রতিযোগীতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের প্রভূত উন্নয়ন সাধনও একান্ত প্রয়োজন।
আমরা যদি আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নির্ধারণের সূচকের (প্রথম পর্ব দেখুন) দিকে তাকাই তাহলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানের প্রকৃত অবস্থাটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হবে।
আলোচনার সুবিধার জন্য সূচকগুলি এখানে আবারও উল্লেখ করছি। সূচকগুলি হচ্ছে
- ভর্তি প্রক্রিয়া
- পাঠক্রম ও বিষয়ের ব্যপ্তি
- ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত
- মেধা যাচাই প্রক্রিয়া
- গবেষণা
- গবেষণা প্রকাশনা ও এর মান
- পাশকৃত গ্র্যাজুয়েটদের গন্তব্য
- আন্তর্জাতিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোলাবরেশন
আগামী পর্বে শিক্ষার মানের স্বীকৃত এই সূচকগুলির আলোকে পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামুলক পর্যালোচনা করব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।