আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাস্তা পার হওয়া শিখলাম (বার্মিংহাম -২)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

ইংল্যান্ডে এসে প্রথম যে কাজটা করলাম তা হলো ঘুমানো। ভালোভাবে ঘুমিয়ে পরদিন দুপুরে বাসা থেকে পাড়ার দোকান চেনার জন্য বের হলাম। আমরা যে বাসায় উঠেছি তার ডিজাইনটা পুরনো বলে মনে হলো। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এগুলো প্রায় ১০০ বছরের পুরনো বিল্ডিং। তবে ভেতর থেকে বোঝা যায় না।

রাস্তায় বের হয়ে প্রথমেই আমার মনে হলো আফ্রিকার কোনো দেশে এসে পড়লাম নাকি! এ এলাকায় সাদা চামড়ার লোক খুবই কম। এলাকার রাস্তা ঝকঝকে পরিষ্কার না (বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিষ্কার অবশ্য)। বাসার সামনের রাস্তায় বহু গাড়ি পার্ক করা। তার মধ্যে বেশ কয়েকটা বিএমডাব্লিউ, মার্সিডিজও আছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, এগুলো এখানে বাংলাদেশের মতো দামি না।

অন্যান্য সাধারণ গাড়ি এখানে বেশ কম দামেই পাওয়া যায়। অবশ্য গাড়ির ট্যাক্স কম নয়। যতো পুরনো গাড়ি, ট্যাক্সও ততো বেশি। বুঝতে পারলাম এখানকার মানুষ আমাদের চেয়ে বেশি আইন মানে। বন্ধুর সঙ্গে বের হয়েছিলাম কাছের এক বাড়িতে যাওয়ার জন্য।

রাস্তায় দেখি গাড়িগুলো খুব জোরে চলছে। এছাড়া এগুলোর শব্দও কম। এ অবস্থায় আমার মতো নতুন মানুষের পক্ষে রাস্তা পার হওয়াটা বেশ বিপজ্জনক। শুনলাম, যেখানে সেখানে রাস্তা পার হলে পুলিশ জরিমানা করতে পারে। তাহলে এখানে রাস্তা পার হওয়ার উপায় কি? রাস্তায় এক জায়গায় দুই পাশে সিগনাল বাতি এবং মাঝে সাদা দুটো দাগ দেয়া।

এগুলো জেব্রা ক্রসিং থেকে আলাদা। রাস্তার পাশের সিগনাল বাতির পিলারে একটা সুইচ লাগানো আছে। বন্ধু বললো সুইচে একটা টিপ দিতে হবে। সুইচে টিপ দিলাম, পাশের ডিসপ্লেতে লেখা উঠলো ওয়েট (অপেক্ষা কর)। ৪-৫ সেকেন্ড পর সিগনাল বাতি অটোমেটিক লাল হয়ে গেল।

বাতি তো লাল হলো, এখন আমাদের রাস্তা পার হবার জন্য ব্যস্ত রাস্তার গাড়িগুলো থামবে কি? আশপাশে কোনো পুলিশ টুলিশও নাই। সে সময় এদিকে এগিয়ে আসছিল সিলভার কালারের একটি মার্সিডিস, লাল ভক্সওয়াগন, পাকিস্তানি ড্রাইভার চালিক ট্যাক্সি। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার সব গাড়ি থেমে গেল। ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম ঠিক থেমেছে কি? সবগুলো থেমে আছে নিশ্চিন্ত হয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলাম। সিগনাল বাতি আবার অটোমেটিক সবুজ হয়ে গেল।

গাড়িগুলো চলতে শুরু করলো। পরে রাস্তা পার হওয়ার আরো একটা সহজ পদ্ধতি দেখলাম। জেব্রা ক্রসিং। কোনো মানুষ জেব্রা ক্রসিংয়ের পাশে দাড়ালেই গাড়িগুলো অটোমেটিক থেমে যায়। লাল বাতির সিগনাল দেবারও দরকার হয় না।

জানতে পারলাম, রাস্তায় যেখানে হলুদ বা লাল ডাবল লাইন থাকে সেখানে সাধারণত গাড়ি থামায় না। আমাদের দেশে অবশ্য এসব লাইনের দিকে কখনো তাকানোর দরকার হয় না। বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখলাম, বাসগুলো রাস্তায় দেয়া সাদা দাগ অনুযায়ী বাসস্ট্যান্ডে দাড়ায়। বাসে ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট বলে চিতকার করতে থাকা কোনো হেলপার নাই। ফলে যাত্রীদেরও ধমক দিয়ে বলতে হয়না, বাড়ি থেকে ডেকে আনো।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাঝ রাতে যখন রাস্তায় দ্বিতীয় কোনো গাড়ি নাই তখনও গাড়িগুলো সিগনাল বাতি অমান্য করে না। এখানে অনেকক্ষণ রাস্তায় ঘুরার পরও হর্নের কোনো শব্দ না পেয়ে আমার ধারণা হচ্ছিলো, গাড়িগুলোতে হর্নই নাই। প্রথম হর্নের শব্দ শুনি পরিচিত এক বাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভারের ট্যাক্সি থেকে। রাস্তাতে হর্ন বাজিয়ে আমাদের ডেকে তিনি লিফট দিতে চাইলেন। তিন দিন পর দ্বিতীয়বার হর্নের শব্দ শুনি ডাবল ডেকার বাসে।

বাসের বুড়ো ড্রাইভারের মেজাজ সম্ভবত খারাপ ছিল। এ কারনে তিনি আধা ঘন্টায় তিনবার হর্ন বাজিয়েছিলেন। তৃতীয়বার হর্নের শব্দ শুনি এর কয়েক দিন পর। এ সময় সামনের গাড়ি জোরে ব্রেক করায় পিছনের গাড়ির টিনেজ ড্রাইভার হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছিলো। ছবি: বাসার সামনে থেকে তোলা


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।