আকাশের আঁধারে নিশ্চুপ কেউ একজন......
মাথাটা ঝিম ঝিম করছিলো একটু আগেও।
এখন অবশ্য ঠিক হয় গেছে।
কিন্তু দিনের আলোটা বড্ড চোখে লাগছে। মানুষ গুলো কেমন যেন বড় বড়!
বড় বড় মানে আমার কাছে বড় বড় লাগছে।
কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
কাঁধে একটা হাত পড়লো।
ফিরে তাকালাম। একটা ছোটখাট গোলগাল চেহারার মানুষ।
দেখতে একজন সরকারী ছা পোষা কেরানি যেমন হয়।
মোটা ফ্রেমের চশমাটার ওপারে হাসি হাসি চোখ।
মুখেও ঝলমলে হাসি।
“কি? নতুন?” একটু খেয়ালী ভঙ্গিতে লোকটা জিজ্ঞেস করলো।
আমি একটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। পরে বিষয়টা ধরতে পেরেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
“কেস কি?”
“ছিনতাই”, আমি মাথা নামিয়ে অপরাধীর মত জবাব দিলাম।
কোন দরকারই ছিলো না এই রাস্তায় আসার।
কিন্তু মিনির কানের দুল জোড়া যে দোকানে ঠিক করাতে দিয়েছিলো তা এই রাস্তার শেষ মাথায়।
এভাবে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সব খোয়াতে হবে ভাবিনি।
লোকটা উহ আহ সূচক শব্দ করে সমবেদনা জানালো।
“দরজা খুলেছে?” তড়িঘড়ি প্রশ্ন।
আমি আবার ভ্যাবাচেকা খেলাম। “মানে?”
“অ! খোলে নি তাহলে! আমারও না। যদিও অন্য কেস, অসাবধান হয়ে রাস্তা দিয়ে চললে যা হয় আর কি”
আমি চুপ করে রইলাম।
“আমারও এখনো দরজা খোলেনি, তবে আজ কালের মধ্যেই খুলে যাবে। তাই ঘুরে বেড়াচ্ছি!”
লোকটা আবার বললো।
আমি তাও জবাব না দিয়ে ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বাসায় যাওয়া দরকার।
কিন্তু কি নিয়ে যাবো?
সব তো হারিয়ে এসেছি।
“এই যে, এমনে বসে থাকলে চলবে?”
“কি করবো?” আমি ক্ষীণ গলায় জবাব দিলাম।
“দরজা খুললে আর সময় পাবেন না।
কিছু করার থাকলে এখনি করে নিন”
আমি এক মুহুর্ত ভাবলাম।
নাহ! বাসায়ই যাবো।
লোকটাকে বললাম।
“চলুন” লোকটা উঠে পড়লো।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে লোকটার গল্প শুনলাম।
কেউ নেই আপাতত তার সংসারে।
বউ মরেছে। ছেলেরা বিয়ের পর বউ নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। তার খবর কেউ রাখে না।
বাসায় পৌঁছে গেলাম।
ঘরে ঢুকে দেখি মিনি রান্না করছে। আর রাতুল কম্পিউটারে একটা প্লেন আকার চেষ্টা করছে।
আমার ৫ বছরের ছেলে রাতুল।
ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হল।
মিনিকে এক নজর দেখলাম রান্নাঘরে।
আমাকে বিয়ে করার পর থেকে মেয়েটা খালি খেটেই যাচ্ছে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম।
ফিরে চললাম সেই রাস্তায়।
যেখানে ছিনতাই হয়েছে।
লোকটা এবার কোন কথা বলছে না।
কেবল আমার পাশে পাশে হাঁটছে।
আমার মন খারাপ দেখে কথা না বলাটাই সমীচীন মনে করছে বোধহয়!
রাস্তার এক পাশে একটা ভিড়।
সবাই চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে দেখছে।
লোকটা দ্রুত একটু এগিয়ে দেখতে গেলো।
আমি রাস্তার পাশের লাইটপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
লোকটা গেলো।
ভিড়ের মাঝে মাথা উঁচিয়ে দেখলো।
তারপর আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
এইবার লোকটা ফিরে এসে বললো “চলুন”।
আমি এবার লোকটাকে নিয়ে উল্টো দিকে হাঁটতে লাগলাম।
এইদিকে আর এগোতে ইচ্ছে করছে না।
হৃদপিন্ডে ছুরি নিয়ে রক্তে ভেসে যাওয়া, রাস্তায় পড়ে থাকা আমার নিথর শরীরটা দেখার কিছু নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।