আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেতার নেটওয়ার্কিং ও বিদ্যুত

পারভেজ

তথ্য প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার বেতার নেটওয়ার্কিং ও বিদ্যুৎ। তথ্য প্রযুক্তি জগতে প্রতিদিন আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। বিস্ময়ের শেষ নেই প্রযুক্তিতে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় এবার আবিকৃত হয়েছে বেতার বিদ্যুৎ এবং বেতার নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির নাম ওয়াই-ফাই।

এ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে প্রযুক্তি জগতে বেশ সারা জাগিয়েছে। ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতিতে। এতে করে সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠছে প্রযুক্তির সব যন্ত্রপাতি। আমরা এসব প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সহজেই হাতের কাছে পাচ্ছি এবং ব্যবহার করে চলছি কিন্তু এর পিছনে তাকানোর প্রয়োজন হয়তো অনেকেই মনে করছি না। যে কোন আবিষ্কারের পিছনে রয়েছে অনেক গবেষকের পরিশ্রম ও সাধনা।

আমরা যারা এর সুফল ভোগ করি তারা হয়তো কখনো চিন্তাই করি না, কি ভাবে এ প্রযুক্তি আবিষ্কার হলো। ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টিই আবিষ্কারকদের স্বার্থকতা বয়ে আনে। আধুনিক আবিষ্কার জগতের নতুন আবিষ্কার তার বিহীন বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি যা ওয়াই-ফাই নামে পরিচিত । বেতার বিদ্যুৎ প্রযুক্তি ঃ বেতার বলতে আমরা সাধারনত রেডিওকেই বুঝি। বেতার মাধ্যমে অন্য কিছু চালানো সম্ভব তা হয়তো অনেকেই চিন্তা করেননি।

এর পরবর্তী সংস্করণ হলো ওয়াকিটকি। যা বাংলাদেশের সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করে থাকেন। ইদানিং বেসরকারী পর্যায়েও ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ আবিষ্কার মোবাইল ফোন। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আমরা শব্দ শুনতে পাই রেডিওর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে।

এ রেডিও আবিষ্কার করেছেন দি মার্কগিলেরসো মার্কোনি। রেডিও আবিষ্কারের চেষ্টা চলছিল মার্কোনির জন্মের অনেক আগে থেকে। ১৮৬৪ সালে অংক শাস্ত্রের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল বলেছিলেন, বিদ্যুৎ তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে। সে সময় তার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। কারন তিনি প্রমান করাতে পারেনি বা প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছিল না।

ফলে তিনি তার প্রাপ্য উপযুক্ত সম্মান বা স্বীকৃতি তিনি পাননি। তিনি বঞ্চিত হয়েছেন তার প্রাপ্য অধিকার থেকে। এর প্রায় দুই শতাব্দি পর ঠিকই তার কথার প্রমান মিলেছে। আবিষ্কার হয়েছে বিদ্যুৎ। এমআইর একদল গবেষক ৬০ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক বাতি সম্প্রতি বেতার বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটির মাধ্যমে জ্বালিয়েছেন।

তামা দিয়ে তৈরী দুইটি কয়েল দিয়ে তারা এ পদ্ধতির প্রয়োগ সফল করেছেন। একটি কয়েলে বিদ্যুতের তার সংযুক্ত করার ফলে কয়েলটি তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরী হবার পর অন্য কয়েলটিতে চৌম্বক আবেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত হয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই চৌম্বক ক্ষেত্রের কম্বাস হচ্ছে মেগাহার্জ পর্যায়ের। এর ফলে মোবাইল ফোন, কম্পিউটারসহ অন্যান্ন যন্ত্রপাতিতে ব্যবহারে কোন সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। এটাকে এক কথায় বাতাস বিদ্যুৎ বলা যেতে পারে।

কারন বাতাসের উপর ভর করে চৌম্বক আবেশের মধ্য দিয়েই এর সঞ্চালন প্রক্রিয়া সংঘঠিত হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণাগারে দুই মিটার দূর থেকে একটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়েছেন গবেষকরা। এ ছাড়া গবেষক দলের একজন আন্দ্রে কার্স বলেন, ভবিষ্যতে তার ও ব্যাটারিকে পুরোপুরি নাজেহাল করে দেবে এই উইট্রিসিটি। ব্যাটারিতে অনেক বিষাক্ত পদার্থ থাকে, সে তুলনায় এটি অধিকতর নিরাপদ। একবছর যাবত এই বেতারের মাধ্যমে সঞ্চালিত বিদ্যুৎকে আরো কার্যকর করার জন্য গবেষনা অব্যাহত রেখে ছিলেন গবেষকরা।

সবচেয়ে মজার খরব হচ্ছে, একটি এ্যানার্জি কনভার্টার ব্যবহার করে একটি কয়েল থেকেই একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব এই বেতার বিদ্যুৎ দিয়ে। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি সর্বসাধারনের ব্যবহারের জন্য উপযোগী ও সহজলভ্য হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন আবিষ্কারগন। মনে করা হচ্ছে, এ বাতাস বিদ্যুৎ বানিজ্যিক ভাবে চালুকরা হলে বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটা সমাধানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকা যেখানে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করার সুযোগ নেই বা কম সময়ে তাৎক্ষনিক ভাবে বিদ্যুৎ প্রয়োজন এমনসব ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এ বাতাস বিদ্যুৎ। বেতার বা বাতাস বিদ্যুৎ চালু হলে যান্ত্রিক ব্যবহার সহজ হবে।

নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারবে একথা বলা যায়। বেতার নেটওয়ার্কিং বা ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ঃ ওয়াই-ফাই আসলে একটি সংক্ষিপ্ত নাম। এর পূর্নাঙ্গ অর্থ হলো- ওয়্যারলেস ফিডালিটি। এটি মূলত ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি আইইই প্রযুক্তি ৮০২.১১ স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে।

মোবাইল কম্পিউটারের জন্য মূলত ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়। এই নতুন তার বিহীন প্রযুক্তির স্বত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ওয়াইফাই অ্যালিয়েন্স। সাধারনত লোকাল এ্যারিয়া নেটওয়ার্কিং কেবল বা তার দিয়ে কথা হয়ে থাকে। এতে অনেক খরচ হয়। তাছাড়া সব জায়গায় কেবল বা তার এর সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়।

এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই উদ্ভাবন করা হয়েছে তারবিহীন নেটওয়ার্কিং প্রযুিক্ত ওয়াই-ফাই। কয়েক বর্গ কিলোমিটার এরিয়া কভারেজ দিতে সক্ষম এই তার বিহীন প্রযুক্তি ওয়াই-ফাই। ওয়াই-ফাই ডিপসেট সমৃদ্ধ নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের দাম দিন দিন কমছে এবং এর ব্যবহারের ব্যাপকতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির গরুত্ব অপরিসীম। ক্যাবল নেটওয়ার্কিং এ ক্যাবলিং করা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয় বহুল ও জটিলতর।

অন্যদিকে ওয়্যারলেস বা তার বিহীন নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে ক্যাবলিং এর কোন ঝামেলা নেই। এছাড়াও কেবলিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ক্যাবল বা তার ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা মেরামত করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও সময়ের ব্যাপার। ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ সব ঝামেলা একদম নেই বললেই চলে। বর্তমানে ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্মার্টফোনে বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড হেল্ড ডিভাইসে ওয়াই-ফাই চিপসেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এসব হ্যান্ড হেল্ড ডিভাইস থেকে সহজেই ইন্টারনেট বা অন্য পিয়ার টু পিয়ার ডিভাইসে সংযোগ দেয়া সহজ হচ্ছে।

আমাদের দেশের বেশ কিছু স্থানে ওয়াই-ফাই রে ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ভবিষ্যতে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের বেশ কিছু স্থানে ওয়াই-ফাই এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ভবিষ্যতে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কেবল নেটওয়ার্কিং এর জায়গা সম্পুর্ণররূপে দখল করে নিবে এই তার বিহীন প্রযুক্তি ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি।

ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার নিশ্চিত হলে নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবে। এর ফলে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন নেটওয়ার্কিং এর জন্য তারের প্রয়োজন হবে না। কমে আসবে নেটওয়ার্কিং ব্যয় এবং পরিশ্রম। এর ব্যাপক ব্যবহার দেখতে হয়তো আমাদের আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.