আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ষণের সাক্ষাৎকার এবং ধর্ষকের প্রাপ্য শাস্তি

তি তি - গতকাল মানিকগঞ্জে একটি বাসে একজন মেয়েকে ২ জন ধর্ষণ করেছে, এটা জানেন? : হ্যাঁ। - তো এই বিষয়ে আপনার মতামত কী? : মেয়েদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, মেয়েদেরকে শালীন পোশাক পড়তে হবে। - আপনি তাহলে মেয়েদেরকে ধর্ষণের জন্য দোষ দিচ্ছেন? : হ্যাঁ, দিচ্ছি। - ধর্ষকদের কোনো দোষ নেই? : না। - আচ্ছা ধরুন, একটি মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে।

মেয়েটি যথেষ্ঠ সচেতন এবং তিনি সব সময় শালীন পোশাক পরেন। তাহলে কাকে দোষ দেবেন? : তাহলে ধর্ষককে দোষ দেবো। ধর্ষককে শাস্তি দেওয়া হোক। - কী শাস্তি ধর্ষকের প্রাপ্য বলে আপনি মনে করেন? : কয়েক বছরের জেল। - এটিই ধর্ষকের প্রাপ্য শাস্তি বলে আপনি মনে করেন? : জি।

- আপনার কয়টি মেয়ে? : ১ টি। - কীসে পড়ে? : এবার নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে। - মানে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে আপনার মেয়ে পড়ে? : জি। - আপনার মেয়ে শালীন পোশাক পরে? : ইয়ে, মানে, ও তো বোরকা পড়ে না। - ঠিক আছে, শুধু বোরকা শালীন পোশাক নয়, শালীন পোশাক আরো আছে।

তো আপনার মেয়ে যদি ধর্ষণ হয়, তবে কাকে দায়ী করবেন? : অবশ্যই ধর্ষককে। - কেন? : কারণ সে আমার মেয়ে। সে যথেষ্ঠ সচেতন এবং শালীন পোশাক পরে। তাই ধর্ষণের জন্য সে কোনোভাবেই দায়ী হবে না। - আপনার মেয়ের ধর্ষকের কোনটি প্রাপ্য শাস্তি বলে আপনি মনে করেন? : ফাঁসি মানে মৃত্যুদণ্ড।

- তাহলে সকল ধর্ষককে কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না? : ইয়ে, মানে...। - আপনারা বিশ্বের লজ্জা। আপনাদের কাছে নিজের মা-বোন, স্ত্রী-মেয়ে আপন। আপনাদের মা-বোন, স্ত্রী-মেয়ে শুধুই মানুষ। অন্যরা পর, মেয়েমানুষ।

আপনাদের মতো মানুষদের জন্য ধর্ষকরা মানুষ থেকে পশু হয়, তারা ধর্ষণ করতে সাহস পায়। আপনারাই প্রতিটি ধর্ষণের সহযোগিতাকারী, ধর্ষণের সমর্থনকারী। আপনাদের মনে হয়, নিজের মেয়ের ধর্ষকের শুধু মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য শাস্তি। অন্য মেয়ের ধর্ষকের শাস্তি কয়েক বছরের জেল। কী সুন্দর চিন্তা! এত প্রতিবাদ, সমাবেশ, মিছিল করে কোনো লাভ হবে না।

আগে প্রতিটি মানুষের চিন্তাধারা বদলাতে হবে। বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্ষণের জন্য ধর্ষক, ধর্ষকের সহযোগিতাকারী এবং ধর্ষকের সমর্থনকারীরা সমানভাবে দায়ী। কোনো অশালীন পোশাকের জন্য মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না। ধর্ষক পোশাক বিবেচনা করে ধর্ষণ করে না।

ধর্ষকের কাছে নিজের মা-বোন-মেয়ে বলে কিছু নেই। কোনো মেয়েই চাইবে না, তাঁর শরীর সবাই দেখুক। পোশাকের জন্য মেয়েকে ধর্ষণের জন্য দায়ী করা সেরেফ একটি কুচিন্তা, যার কারণে ধর্ষক সাহস পায়। শুধু আপনার মেয়েদেরকে নয়, সকল মেয়েদেরকে নিজের মা-বোন-মেয়ে ভাবুন। শুধু আপনাদের মেয়ে মানুষ না, সমস্ত মেয়েরাই মানুষ।

কোনো মেয়েই মেয়েমানুষ না। আমাদের চিন্তাচেতনা মেয়েদেরকে মানুষ থেকে মেয়েমানুষে রূপান্তরিত করছে। ধর্ষকের শাস্তি কয়েক বছরের জেল নয়, শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডই সকল ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি। শাস্তি দিয়ে হয়তো ধর্ষকদেরকে পশু থেকে মানুষ করা যাবে না কিংবা ধর্ষণ পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু ধর্ষকের মৃতুদণ্ড দেখে শুধু ধর্ষক নয় প্রতিটি মানুষ ধর্ষণ করার ব্যাপারে আতঙ্কিত হবে।

তাই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে, আমাদের কুচিন্তাগুলো মাথা থেকে বের করে ফেলতে হবে, সব মানুষকে মানুষ ভাবতে হবে, আপন ভাবতে হবে এবং প্রতিটি ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.