দেখি তামাশা দেখাই
আমার অনেক কিছুই ভালো লাগেনা। এই যে বাসে চড়ে যাচ্ছি- যাচ্ছি তো যাচ্ছিই- অফিস কিন্তু আমাকে একদমই টানছেনা। ওখানে আকর্ষণীয় কি আছে? কিসের মোহে রোজ আমি অফিস যাই, ফিরে আসি কে কলবে? রাস্তায় সমানে বিলবোর্ড, লোকাল বাসের ময়লা সিটে বসে দেখছি সুশ্রী নারীর অদ্ভুত হাসির ফোয়ারা। অধিকাংশ বিলবোর্ডেই পণ্যের চেয়ে জরুরী ও উজ্জ্বল হয়ে ফুটে আছে তাদের বুকের বাহার! অফিস যেতে আমার ভাল্লাগবে কেন? আমার এখন যাওয়া প্রয়োজন রঙ্গালয়ে, এইসবা দেখে শুনে আমি প্রতিদিনই একটা বালাখানার প্রতিষ্ঠাতা হয়ে উঠতে চাইছি। ফলে যে কেউ আমার চোখে তাকিয়ে বলে দিতে পারবে আমি কামুক, আমি ছিনাল...!
"পুরুষ ছিনাল জাত এই যদি ভাবো কন্যা
আমিও ধর্ষক তবে অনেক লোকের মতো
তুমিও ধর্ষিতা জেনো তোমারও রয়েছে ক্ষত
তোমার লালাভ দেহ যেন এবারের বন্যা"
(সোমেশ্বর অলির কবিতা থেকে উদ্ধৃত)
বিশ্বাস করুন, লেখাটা আমি এভাবে শুরু করতে চাইনি।
একটা অন্যরকম লেখা, অন্যরকম ক্ষতের কথা বলতে চেয়েছিলামা আজ। কিন্তু কি করবো উপায়হীন ভাবনা বিন্যস্ত হলো ব্যাকরণহীন রচনায়। সত্যি বলতে, এই রচনায় ' আমার অনেক কিছুই ভালো লাগেনা' শব্দগুলো লেখার পর আমি বসাতে চেয়েছি ' সেদিন আমার মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে সেনা বাহিনী'। লিখতে চেয়েছি এ আঘাত যতটা না শক্ত তারচে বেশি যন্ত্রনা আমি বোধ করছি মেরুদন্ডে, মস্তিষ্কে ও মনে। ব্যাথিত পিঠের কাতরতা কাছের বন্ধুরা ছাড়া আমি আর কাউকে জানতে দিয়েছি? আমার মা, বয়েসী বাবা. বোনটা, এক গাদা ভাই গ্রামে বসে এ খবর পেলে নির্ঘাত কাদাকাটি করতো না! আমার মনে নেই, মনে থাকার কোনো কারনও নেই, বাবা-মা কেউই স্মরনে আনতে পারবে না সর্বশেষ কবে আমি তাদের হাতে সিম্পলি একটা চড় খেয়েছি।
অথচ আমার ভাইয়েরা, জাতির গর্বিত রক্ষাকারীরা আমাকে কুকুরের মতো পেটালো, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের চারতলার খোলা জায়গায় মনের মতো করে কাদালো। আমি নিজের রক্ত দেখিনি, দেখেছি অন্যের যন্ত্রনা, কাকুতি মিনতি, আহাজারি। ঢাকা ভার্সিটি? ঢাকা কলেজের ছাত্র? কোন কথা নেই একটার পর একটা লাঠির বাড়ি পড়তে থাকলো। সেনা বাহিনীর ভাষায় একে বলে 'সার্ভিস'? সেদিন আজিজে বসবাসকারী ছাড়াও রাতে নিরুপায় কিছু ছাত্র এখানে আশ্রয় নিয়েছিল সত্য কিন্তু তাদের সবাই কি আন্দোলনকারী ছিল। কি দোষ ছিল আমার? পত্রিকার আইডি কার্ড দেখেও '' তুই তো ছাত্র, তোকে দেখলেই বোঝা যায় তুই ছাত্র, তু্ই আবার কিসের সাংবাদিক, সার্ভিস'' বলে গায়ের জোরে আমাকে লাটিপেটা করার ব্যাপারটাকে আপনি কিভাবে ব্যখ্যা করবেন?
ওরা আমাকে সার্ভিস করে ছেড়ে দিল, অধিকাংশই সেদিনকার প্রতিশোধপরায়ন সেনা বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পেল।
সত্যি আমরা কি মুক্তি পেয়েছি? আমার পিঠের ব্যথাটা পুরোপুরি সারতে তিনমাস লাগবে, বাম চোখের কাছের আচরটা প্রায় মুছে গেছে, ডান হাতের কনুইয়েও শক্তি পাচ্ছি। সত্যি কি তিনমাস পর আমি যখন সম্পুর্ন ভুলে যাব মেরুদন্ডের ব্যথার কথা? না। আমি চাইলেই কি ভুলে থাকতে পারছি নিরাপরাধ ১০/১২ জন সহযোদ্ধার কথা যাদেরকে মারার পর কোমর বেধে আসামী করে নিয়ে গেছে সেনা বাহিনী? শুনেছি এদের মধ্যে তিনজনের খোজ জানে না কেউ। তবে তারা কোথায় গেল? এদের পরিবার এখন কেমন আছে? ওদেরকে আরো আঘাত করা হচ্ছে? ওরা বাচবে তো? আমি কল্পনও করতে পারছি না ওরা এখন কেমন আছে, কোথায় আছে। ওদের মধ্যে কেউ না কেউ প্রেমিক ছিল? প্রেমিকাদের কি খবর? ওদের কান্না কে থামাবে? এসব হাজার প্রশ্নের একটা জবাবও আমাকে জানতে দেয়া হচ্ছেনা।
আমি ওদের হাতে মার খেয়ে সত্যি ঝিমিয়ে পড়েছি। ওরা আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আমার সততা, আদর্শ, প্রেমিক ও বিদ্রোহী মনের ওপর দিয়ে ওরা রোলার চালিয়ে দিয়েছে। আমার আর কোন প্রতিভা নেই। আমি যেন ফুরিয়ে গেছি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।