আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংবাদিকের শান্তি!!



বুধবার রাত ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে ৪১ ঘণ্টা কারফিউ ছিল। এ সময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় দেড় শতাধিক সংবাদকর্মী তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন ও চলাচলের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত, নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। বহু সংবাদকর্মী পরিচয়পত্র এমনকি কারফিউ পাস দেখিয়েও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা পাননি। তাদের নির্মম অত্যাচারে শয্যাগত হয়েছেন প্রায় ২৫ জন সংবাদকর্মী। সরকার পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওপর সরাসরি কোনো সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়নি।

তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের কারণে অলিখিত চাপের মুখে পড়ে প্রতিটি সংবাদ মাধ্যম। কারফিউ ঘোষণার পর বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত রাজধানীতে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। একদিকে বলা হয়েছে তাদের পরিচয়পত্রই কারফিউ পাস হিসেবে বিবেচিত হবে, অন্যদিকে পুলিশের কাছ থেকে পাস সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবার পুলিশ প্রদত্ত পাস দেখিয়ে সেনা সদস্যদের কাছ থেকে ছাড় পায়নি অনেক সংবাদকর্মী। নীরবে হজম করতে হয়েছে তাদের অশ্রাব্য গালাগাল।

প্রত্যুত্তর করতে গেলেই তারা চড়াও হয়েছে নিরপরাধ সংবাদকর্মীদের ওপর। মূলত সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়হীনতা থেকেই সাংবাদিক নির্যাতনের মতো এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার উদ্ভব হয়েছে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কারফিউ চলাকালে মিডিয়াকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শুক্রবার তা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে শুক্রবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বুধবার কারফিউ শুরু হওয়ার পর কাজ শেষে মোহাম্মদপুরে বাসায় ফেরার পথে বৈশাখী টিভির হেড অফ নিউজ আনিস আলমগীরের গাড়ি আটকে দেয়া হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে সেনা সদস্যরা ড্রাইভারকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। আনিস আলমগীর তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকেও চরমভাবে নিগৃহীত করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে রাস্তায় ফেলে রাইফেলের বাট ও গরানের লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। আনিস আলমগীরকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়।

শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ডাক্তারের পরামর্শে তিনি বেড রেস্টে আছেন। একই দিন দৈনিক সমকালের নয়জন সংবাদকর্মী মোহাম্মদপুরে বাসায় ফিরতে গেলে তাদের সবাইকে থানায় আটক রাখা হয়। রাত দেড়টায় যৌথ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সমকালের আরো তিন সংবাদকর্মীকে আটক করা হয় মিরপুর থানায়। দুজন কর্মীকে পরদিন সকালে ছেড়ে দেয়া হলেও সমকালের সম্পাদনা সহকারী খন্দকার মাসুদুল হক আজাদকে কোর্টে চালান করা হয়।

তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমকালের ফটো জার্নালিস্ট হান্নানকে বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে চার-পাচজন নিরাপত্তাকর্মী ব্যাপক প্রহার করে। এতে তার এক পায়ের হাড় ভেঙে যায় বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মেডিকাল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক যায়াযায়দিনের সিনিয়র অপারেটর হারুনুর রশিদ ডেমরা থেকে হেটে তেজগাও অফিসে আসার পথে শান্তিনগর মোড়ে পুলিশি পিটুনির মুখে পড়েন।

যায়যায়দিনের পরিচয়পত্র দেখিয়েও তিনি পুলিশের মারের কবল থেকে রেহাই পাননি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দৈনিক নয়া দিগন্তের স্টাফ কার্টুনিস্ট খলিলুর রহমান অফিস যাওয়ার পথে সেনা সদস্যদের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হন। দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার ফটো জার্নালিস্ট সানাউল্লাহ নিরাপত্তাকর্মীদের নির্যাতনে গুরুতর আহত হন। ডেইলি নিউ এজ পত্রিকার দুজন ড্রাইভারকে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করা হয়। নিউজ এজেন্সি বিডিনিউজের সাব-এডিটর এহছান লেনিন ও স্পোর্ট রিপোর্টার মাসুদ পারভেজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অফিস থেকে বেরুতে গেলে অফিসের সামনেই তাদের প্রহার করতে শুরু করে সেনা সদস্যরা।

দৈনিক মানবজমিনের রিপোর্টার টুটুল রহমান, সালাহউদ্দিন মুরাদ ও রাজিব আহমেদ বুধবার নিরাপত্তা কর্মীদের হিংস্রতার শিকার হন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার নেছার উদ্দিন আহমেদকে বুধবার রাতে ব্যাপক মারধর করা হয়। এছাড়া গাড়ি আটকে দিয়ে হেটে বাসায় ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে অনেক সংবাদকর্মীকে। অনেকের গাড়ি বা মোটরসাইকেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে পরে তাদের যেতে দেয়া হয়েছে। চলতি পথে সংবাদকর্মীরা একদল নিরাপত্তা কর্মীর লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ছাড়া পেলেও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরেকদল নিরাপত্তাকর্মীর হাতে।

যৌথ বাহিনীর সদস্যদের অকথ্য গালাগাল শুনতে হয়েছে অধিকাংশ সংবাদকর্মীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থানায় নিয়ে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন শেষে অনেক বিলম্বে ছেড়ে দেয়া হয়েছে চ্যানেল ওয়ানের রিপোর্টার পারভেজ রেজা, বিডিনিউজের লিটন হায়দার, বিপ্লব রহমান ও আসিফ আহমেদ, সমকালের আবদুল মজিদ, আবু কায়সার ও জনকণ্ঠের নগর সংবাদদাতা শাহরিয়ার কবিরকে। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন প্রায় প্রতিটি মিডিয়া হাউসের আরো শতাধিক সংবাদকর্মী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.