সব শেষ হয়ে যাবার পরও, কিছু স্বপ্ন বেঁচে থাকে- সব সময় আগের চেয়ে এখন আমি অনেক বেশি লেখায় এগিয়ে গেছি । অনেকেই আমাকে চিনতে শুরু করেছে । ইদানিং আমি ব্লগে লিখি । যখন যা আলোচিত বিষয় - সেটাই তখন আমার লেখার খোরাক । ডায়েরীতে এখন লিখতে বসে কী জঘন্যইনা দেখাচ্ছে আমার হাতের লেখা ।
কম্পিউটারের কী বোর্ড ছেড়ে আজ দেড় বছর পর কলম ধরেছি । আমি সাংবাদিকতা করি । যখন যা হয় মেইল করে পাঠাচ্ছি ঢাকা অফিসে তাত্ক্ষণিক । কোন কিছু করলাম অথচ বিশ্ব জানলো না, তা কী হয় ?
আমার কিছু গোপন কর্ম আছে । না পারছি কাউকে বলতে, না পারছি পেটে ধরে রাখতে ।
তাই এই বিশেষ ধরণের ডায়েরীটা কিনলাম । এটা তালা দিয়ে রাখা যায় । আমি যতদিন বাঁচবো এর দেখভাল করবো । মরে গেলে পরবর্তী প্রজন্মের কেউ এটা পড়ে আমাকে গালমন্দ করলে করুক ।
আমি ব্যাক্তি জীবনে পেশায় একজন সংবাদকর্মী ।
যদিও এটা অন্যান্য পেশার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচের । তারপরও আমার কাছে এটা রোজগারের একটা সহজতম পথ ছাড়া আর কিছুই না ।
সাংবাদিক হিশেবে আমার কাজ হলো এমন কিছু ঘটলো যার কীনা নিউজ ভ্যালু আছে- সেটা সংবাদ আকারে পরিবেশন করা । কিন্তু আমি করি তার ঠিক উল্টো । অর্থাত্ সংবাদ সৃষ্টি করি ।
অবশ্য এই সংবাদ সৃষ্টির জন্যে আমার রেট খুব চড়া । অল্প স্বল্প টাকায় আমি বিক্রী হই না । আমার চরিত্র সম্বন্ধে দু একজন লোকের যে ধারণা নেই তা ভাববার দরকার নেই । অবশ্য এই লোকগুলো খুব উঁচু মাপের । যদিও তারা জননেতা টাইটেলধারী কিন্তু সচরাচর এরা জনগণের সংস্পর্শে আসেন না ।
এখন যা বলার জন্য মুখটা নিশপিশ করছে সেটা একটা ভয়াবহ একটা ঘটনা । আমার চরিত্র খুব একটা খারাপ নয় । অর্থের প্রতি আমি দূর্বল হলেও আমি আমার বউয়ের প্রতি বিশ্বস্ত । আমার চাকরিজীবি স্মার্ট বউ ও দুই বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছি । তবে কেউ যদি সেধে গায়ে পরে সেক্ষেত্রে আমি কীইবা করতে পারি ?
একদিন নারী নির্যাতনের খবর পেয়ে গেলাম এক গ্রামে ।
সরেজমিন ঘুরে দেখলাম, ঘটনা উল্টো । স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে এক মহিলা বেশ কয়েকটি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের সাথে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন । আমার পত্রিকাটি দেশের প্রথম সারির দৈনিকগুলোর একটি । সত্য নিউজটা পাঠালে গুরুত্বের সাথে ছাপাবে । তবে গুণধর মহিলাটি খুব চতুরমতী ।
বুঝলো আমি কী করতে যাচ্ছি । তার ছলা কলা এবং অর্থের কাছে শেষে আমি অফ গেলাম ।
আমার মটর সাইকেলের পেছনের নম্বর প্লেটটা দেখলে আমার গর্ব হয় । ট্রাফিক পুলিশ সেটা দেখলে নড়ে চড়ে দাঁড়ায় । সেখানে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এর জায়গায় ছাপার অক্ষরে বড় করে লেখা 'সাংবাদিক'।
আমার পত্রিকা অফিস থেকে যা দেয় তাতে আমার এক বাচ্চার খরচই চলে না । তবুও মাসে আমাকে ৪০হাজার টাকা ইনকাম করতে হয় । অবশ্য গত মাসে একে বারে রুজি হয়নি । ২৭হাজার পার করতে পারিনি । থানায় যে তদবীরগুলো করেছি তার বেশির ভাগ ছিলো নিজেদের লোকের ।
তাই হাতে একেবারেই পয়সা পাতি আসেনি ।
আজকে আর লিখব না । আমাদের সম্ভাব্য সাংসদের একটু পর জনসংযোগ আছে । তাঁর সাথে আবার গতকালই নিউজ এর কন্ট্রাক্ট হয়েছে । শালা একটা শিক্ষিত বদমাশ ।
যদি তাঁর কাজ ঠিকমতো না করি তবে আমার সব গোপন কর্ম ফাঁস করে দেবেন । বেটার হাত খুব লম্বা । বিগড়ালে আর পত্রিকার প্রতিনিধিত্বটা পর্যন্ত বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন । যাই, গিয়ে নিউজটা পাঠিয়ে দিয়ে আসি ।
[সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাত্সরিক প্রকাশনা 'তিতাস'এর গত মার্চ মাস ২০১১এ প্রকাশিত আমার একটি লেখা ।
] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।