চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
ডন কুইক্সোট উপন্যাসটিকে বলা যায় স্পেন সাহিত্যের সবচাইতে বিখ্যাত উপন্যাস হিসাবে। কিছুটা কমিক কিছুটা ট্র্যজিডিধর্মী এই উপন্যাসটি ১৭ শতাব্দীর স্পেনীয় সমাজের চিত্র তুলে ধরেছে।
মুল চরিত্রটি একজন বর্ষীয়ান আদর্শবাদী নাইটের যিনি তার পুরানো ঘোড়া আর বস্তুবাদী সংগী সানচো পাঞ্জাকে নিয়ে বের হন এডভেনচারে।
মুলতবর্ষীয়ান এই গ্রাম্য ভদ্রলোক চিভারলি বইগুলো পড়তে পড়তে বইগুলোতে ঘটে যাওয়া অসম্ভব ঘটনাগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেন। বইগুলোর প্রতিটি শব্দ তার কাছে মনে হতে লাগল সত্য ।
নিদ্রাহীনতা, ক্ষুদা আর বেশি পড়াশুনায় একসময় ভদ্রলোকের মতিবিভ্রম ঘটে। একসময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন নাইট হিসাবে এডভেনচারে খোজে বেরিয়ে পড়ার।
তিনি তার পুরানো বর্ম, হেলমেট পড়ে নিজেকে ঘোষনা করলেন ডন কুইক্সোজ ডে লা মানচা হিসাবে। নিজের চামড়াসার ঘোড়াটির নাম দিলেন রোসিনানতে। পাশের এক চাষীর মেয়েকে বানালেন লেডিলাভ, নতুন নাম দিলেন তবসোর ডুলসিনেকা, যার সেই মেয়েটি কিছুই জানতনা।
পরের দিন সকালে রওয়ানা দিয়ে তিনি পৌছলেন এক গ্রামের হোটেলে যাকে তিনি মনে করলেন একটি প্রাসাদ আর হোটেলকিপারকে মনে করলেন লর্ড। তাকে অনুরোধ করলেন তাকে নাইট হিসাবে ভুষিত করার জন্য। ডন কুক্সোট সারা রাত তার বর্মটি রাখলেন সতর্কতার সাথে, সেসময় তিনি পশুরক্ষকের সাথে যুদ্ধে অবতীরন হলেন যে কিনা তার ঘোড়ার খাবারের কনটেইনার থেকে বর্মটি সরিয়ে নিল যাতে করে সে তার পশুগুলোকে পানি দিতে পারে। শেষমেষ হোটেলকিপার নিরুপায় হয়ে তাকে নাইট উপাধি দিলেন এবং সাথে এই উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন যে তার একজন অধিনস্তের প্রয়োজন। ফেরার পথে ডন কুইক্সোট ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্সে জড়িয়ে পড়েন যারা তার কল্পনার ডুলসিনেকাকে অপমান করেছিল।
এবং তিনি একটি বালককেও মুক্ত করেন যার মনিব তাকে গাছে বেধে রেখেছিল সে তার তার পাওনা মজুরি চাইতে গিয়েছিল বলে। অবশেষে প্রতিবেশী এক চাষীর সহায়তায় তিনি বাড়ি ফেরেন।
বাড়ি ফেরে ডন কুইক্সোট আবার পালাবার পায়তারা করতে থাকেন, এরিমধ্যে ভাতিজা, কাজের লোক এবং নাপিত মিলে লূকিয়ে তার চিভারলির বইগুলোর প্রায় সবগুলো বই পুড়িয়ে ফেলল এবং এই বলে লাইব্রেরীতে তালা লাগিয়ে ফেলল যে কোন এক যাদুকর এসে সব নিয়ে গেছে। ডন কুইক্সোট তার আর একজন প্রতিবেশি সানচো পাঞ্জাকে একটি অলীক দ্বীপের গভরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সংগী হওয়ার প্রস্তাব দিল। অধিকতর নির্বোধ সানচো পাঞ্জা তার এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল।
ডন কূইক্সোটের সাথে সানচো পাঞ্জার সম্পর্কটি মসৃন না হলেও একের পর এক ব্যর্থ অভিযানে তারা পরস্পরের সংগী ছিল। মনে মনে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করতেন।
এডভেনচারে বেরিয়ে অতুত্তসাহী, অতি উত্তেজিত ডন কুইক্সোট বাস্তবজ্ঞানবিবরজিত হয়ে পড়ল। উইন্ডমিলকে সে আক্রমন করে বসল অন্যায়কারি এক দৈত্য মনে করে, ভেড়ার পালকে তার মনে হল সৈন্যবাহিনী আর দাসদের মনে হল অত্যাচারিত ভদ্রলোক।
ডন কুইক্সোট নিজে হুয়াইট মুনের নাইটের (যে ছিল কিনা ছদ্দ্যবেশধারী তার এক পরিচিতের ছাত্র) সাথে দৈত্বযুদ্ধে জয়ী হল।
ডন কুইক্সোট তার নিজস্ব এই কল্পনার জগত গড়ে তুলেছিলেন অতি নিষ্ঠা আর যত্নের সাথে।
নিজের গ্রাম লা মনচাতে একসময় ফিরে যান এই নায়ক। মানসিকভাবে সুস্থ্য হওয়ার পর চিভারলির সাথে তার সব সম্পর্কের অবসান ঘটান। এবং একমাত্র তার মৃত্যুশয্যায় তার অতীত এডভেনচারের নিরবুদ্ধিতার কথা নিজের পাগলামীর স্বীকার করেন।
আমাদের সামহ্যোয়ার ইনে এমন কেউ কি আছেন যারা হিরো হওয়ার বাসনায় ডন কুইক্সোটের মত এক অলিক জগতে বিচরন করেন আর বিভিন্ন ভিলেইন ভার্চুয়াল চরিত্র গড়ে তুলে আক্রমন চালান শব্দের তলোয়ারে।
বাস্তবিকে যেই চরিত্রগুলো খুবই নিরীহ গোছের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।