আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যরাতের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাহীনতা : ১৯৪৭ (দ্বিতীয় কিস্তি)

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

পাকিস্তান ও ভারত জাতিরাষ্ট্র নয়। অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ ও জাতি রাষ্ট্র তৈরির যে হুজুগ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা ভারতবর্ষে কোনো জাতির উত্থান ঘটাতে পারেনি। তাহলে কি মুসলিম ও হিন্দুরা শুধু মুসলিম ও হিন্দু হিসেবে কোনো জাতি হতে পারে না? দ্বিজাতিতত্ত্ব কি তাহলে একটি ভ্রান্ত মতবাদ? এই দুটা প্রশ্নে যে জবাব আছে আমাদের মনে তা একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না। জাতি গঠনের জন্য ধর্ম একটি শক্তিশালী ও কার্যকর উপাদান বটে।

কিন্তু একমাত্র উপাদান নয়। সৌদি আরবের মুসলমানরও মুসলমান কিন্তু তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো জাতি গঠন সম্ভব নয়। আর সেই জাতীয়তা বোধের ভিত্তিতে কোনো দেশ গড়া তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু এ কথা সত্য, পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম ধূয়াটা তৎকালীন বাংলাদেশ অঞ্চলেই উঠেছিল। বাঙালি মুসলমান সে আন্দোলনের বড় শক্তি ছিল এবং ইস্যুটাকে বৈধতা দিয়ে একে জোরদার করেছিল।

বাঙালি মুসলমান বললে যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কথা বুঝা যায় তা কথা এখানে আসে না। মধ্যরাতের স্বাধীনতা এসেছিল আলোচনার টেবিলে কূটক্যাচালের মধ্য দিয়ে। সেখানে আমাদের ভাগ্যবিধাতা ছিলেন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিরা। শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের লোকেরা পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে বৃহত্তর ভারত থেকে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষাটা যুক্ত করতে পেরেছিল। তাদের পলিটিক্যাল মোটিভেশন সঠিক ছিল, যখন দেখা যায় তারা পাকিস্তানের সঙ্গে রাষ্ট্র গঠনের চাইতে কনফেডারেশন গড়ায় বেশি উৎসাহী।

ফলে, ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনে পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে পূর্ববাংলার নেতারা তখন যথার্থই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ফলে, ওই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে রাষ্ট্র তৈরির আওয়াজ সঠিক ছিল। কিন্তু যদি রাজনৈতিক ইস্যুর বাইরে রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্ন বিবেচনায় আনি তবে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা মোক্ষম কোনো সমাধান নয়। এখানেই দ্বিতীয় প্রশ্ন, দ্বিজাতিতত্ত্ব কি তবে ভুল? অবশ্যই ভুল। কারণ ভারতবর্ষ এক জাতির দেশ জাতির দেশ নয়।

সবচেয়ে মজার কথা দুই জাতির দেশও নয়। ভারতবর্ষ বহুজাতির দেশ। এবং ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় এই দেশ যদি বহু রাষ্ট্রে পৃথক হতো এবং শিথিল কনফেডারেশনের ভিত্তেতে ঐক্যবদ্ধ থাকতো তবে সেটাই হতো সংগত। মধ্যরাতের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে ভারতভাগ্যবিধাতারা যে নিয়তি নির্ধারণ করেছেন তা ভারতকে এক স্থায়ী রক্তপাতের দিকে নিয়ে গেছে। এবং সেই রক্তপাতের ইতিহাসে সমাপ্তি ঘটে নাই আজও।

এভাবে ঘটবেও না। দ্বিজাতিতত্ত্ব ভুল বটে কিন্তু দ্বিজাতি তত্ত্বই প্রমাণ করে দিয়েছিল ভারত অবিভাজ্য নয়। ভারত শুধু দ্বিবিভাজ্য বা ত্রিবিভাজ্য নয়। ভারত বহুবিভাজ্য। আর এটা পুরোপুরি বোঝার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।

ফলে দ্বিজাতিতত্ত্ব কতটা ভুল? পরিমাণের বিচারে সামান্য। বাঙালি মুসলমানরা ওই সামান্য ভুলকে শীঘ্রই ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রথমে ধর্ম, তারপর ভাষা। যদি ইতিহাস উল্টে যেত, যদি বাঙালিরা ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ পেত? তাহলেও কি ধর্মের প্রশ্নে বাংলা ভাগ হতো? ইতিহাসে এ প্রশ্নের উত্তর আছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।

যদি ভারতবর্ষ দুইভাগ না হতো তবে তিন ভাগ হতে পারতো না। সহজ হিসাব। আর এই সহজ হিসাবটাই আমাদের মহাপ্রগতিশীল কূয়োবাসীরা বুঝতে পারেন না। তবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যরাতের স্বাধীনতার বিরোধিতা প্রথম বাঙালিরা বা বাঙালি মুসলমানরা করেনি। ক্যাটাগরিকালি প্রথম বিরোধিতা করেছিল কমিউনিস্টরা।

তারাই স্বর উঁচু করে বলেছিল, ইয়ে আজাদী জুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।