আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব।
রবিন সাহেব আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী
থলথলে ভুড়ি, কাচা-পাকা চুল আর গোফ, মোটা কাচের চশমা
চশমার উপর দিয়ে তাকালে তাকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান দেখায়।
লাল ইটের দেয়ালঘেরা অট্টালিকাসম বাড়িতে অবসর কাটাচ্ছেন
দিনভর খবরের কাগজ আর বই পড়েন বাকি সময় স্ত্রীর সাথে গল্প
আর বাগানে ফুল নিয়ে গবেষণায় কাটে সুখী এই বৃদ্ধ লোকটির।
দিনে তিনবেলা খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস রবিন সাহেবের
সকালে চায়ের কাপ হাতে, দুপুরে খাবারের পর চুরুট হাতে
আর ঘুমুতে যাবার আগে টিভিতে খবর দেখতে দেখতে।
এগারোটা পত্রিকা পড়তেও বেশি সময় লাগেনা তাঁর
শুধু ভাল খবর গুলোই পড়েন তিনি,
উন্নয়নের খবর, কারও ভালো ফলাফলের খবর আর
মানুষের জীবনের গল্পের খবর, বেঁচে থাকার খবর।
ভাল খবরগুলো কেটে আলাদা করতে একজনকে নিয়োগ দেন তিনি
বেতনও দেন, তবে শিক্ষিত ছাড়া কাউকে চাকরি দেন না
সে ভাল খবরগুলি কেটে রবিন সাহেবকে দেয়, সযত্নে
কেটে ফেলা খারাপ সংবাদগুলি পড়তে নিষেধ করেন পত্রিকা কাটনেওয়ালাকে
তিনি মনে করেন পত্রিকার খারাপ সংবাদগুলি তাঁকে তাড়াতাড়ি মেরে ফেলবে।
কিন্তু ভালো মাইনে পাওয়ার পরও এই চাকরিতে কেউ থাকেনা বেশিদিন
তিনমাসে সাতজন চাকরি ছেড়েছেন, সবাই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন
পত্রিকা পাগল বৃদ্ধের কপালে চিন্তার ভাজ, সেটা আরও দীর্ঘায়িত হয়
যখন পরিষ্কার হয় এর জন্য তিনিই দায়ী, আর কেউ নয়।
ভালো সংবাদগুলি তাকে বেঁচে রাখছে অন্যদিকে অযুত দুঃসংবাদের ভারে
দৈনিক সহস্র মৃত্যু আর ধর্ষণের কালো সংবাদের ছায়ায়,
মানুষের নোংরামির গল্পে-দুর্নীতির গল্পে-লোভের গল্পে ধমনী কালো হয়ে যেত তাদের
হৃদপিন্ডে বেঁচে থাকার অপ্রয়োজনীয়তা কালো রক্ত এসে বলে যেত বারবার
মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে জগতের অস্বাভাবিক অন্ধকার খেলে বেড়াত দিনরাত
সইতে পারতেন না তারা পাহাড়সম দুঃসংবাদের অভিশাপ,
তারপর থেকে অমাবশ্যার অবসর রবিন সাহেবের
দুই চোখে দেখতে পারেন না খবরের কাগজ, কোন সংবাদ।
২৯/৫/১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।