আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পত্রিকায় দেখি নিজের মুখ

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

আজকে প্রথম আলোর আইটি কর্নারে শরতের ছবি দেখে পত্রিকায় চেহারা প্রকাশ বিষয়ক স্মৃতিচারণ ভর করলো। একবার আমার বাবা একটা রচনা প্রতিযোগিতায় সমগ্র পাকিস্থানে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। রচনার বিষয় ছিল শিক্ষা জীবনে ইনসুরেন্সের প্রয়োজনীয়তা। পুরষ্কার বিতরণের ছবি পত্রিকায় উঠেছিল। তাতে চেহারা বোঝা না গেলেও তিনি সেই ছবি সুদীর্ঘকাল নিজের এ্যালবামে রেখেছিলেন।

আমার প্রথম ছবি আবিষ্কার করি অনেকটা আকষ্মিকভাবে। টাউন হলের সামনে একটা চশমার দোকানের সামনে আমি দাড়ানো, পাশ দিয়ে বিজয় মিছিল যাচ্ছে আওয়ামী লীগের। ঘটনা ১৯৯৬ এর। মইনুল হোসেনের পত্রিকায় সে ছবি উঠলো শেষের আগের পৃষ্ঠায় আরো অনেক জেলা শহরের বিজয় মিছিলের ছবির এ্যালবামে। তারপরে ছবি দেখলাম একটা কনসার্টের।

কনসার্টটা আয়োজন করেছিল আমার তখনকার সংস্থা। কনসার্টের দৃশ্য যেটা পত্রিকায় এসেছিল, তার এক কোনে আমি ছিলাম। এরপরে আরো একবার পত্রিকায় নিজের ছবি দেখলাম। একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে অডিয়েন্সের যে ছবিটা পত্রিকায় এসেছিল তার মধ্যে।

পত্রিকায় যেসমস্ত মানুষের ছবি দেখা যায় অহরহ, তারা হয় নিহত হয়েছেন, অথবা ক্রিমিনাল অথবা সরকারী মন্ত্রী, স্টার। মৃত্যুর পরে মৃতের ছবি সহ সবাইকে জানান দেয়া এখন নগর সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। পত্রিকার একটা ছবির স্পেস দখল করা লোকেদের মধ্যে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াই সম্ভবত শ্রেষ্ঠ হবেন। বর্তমান সময়ে পত্রিকার যাদের ছবি বেশী আসছে তাদের মধ্যে হাসান মশহুদ, মইনুল হোসেন, মান্নান ভূইয়া, ফয়েজী অন্যতম। এছাড়া আশরাফুল, মাশরাফি স্পোর্টসের পাতাজুরে প্রতি একদিন অন্তর শোভা পেয়ে থাকে।

পত্রিকায় ছবি প্রকাশের বিষয়ে ধরিয়ে দিন একটা অন্যতম আরামদায়ক বিজ্ঞাপন। সাথে নগদ ক্যাসের হাতছানি। ছোটবেলা এমন পেপার কাটিং নিয়ে রাস্তায় হাঁটতাম, যদি দেখা হয়ে যায় অভিযুক্তের সাথে, তাকে এইভাবে ধরে, সেইভাবে নিয়ে হাজির করবো পুলিশের কাছে। আরো একটা ছবি নিয়ে এমন উৎফুল্ল হতাম। ফিরে এসো, তোমার জন্য মা অসুস্থ, টাইপের ছবিগুলোতে কোন সুন্দরী হলেই হলো।

স্কুল বয়সে তখন হিন্দি সিনেমা দেখে অংক মেলাতাম প্রেমের। নিজেকে হিরো আর পলাতকাকে হিরোইন ভেবে রাস্তার প্রতিটি মেয়েকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতাম। পত্রিকায় যে ছবিগুলো সবচেয়ে ক্ষতিকর তার মধ্যে ধর্ষিতার ছবি উল্লেখযোগ্য। এই কিছুদিন আগেও ধর্ষিতার ছবি পত্রিকার মধ্য পৃষ্ঠায় বর্ণনাসহ ছাঁপতো। নির্যাতিত মেয়েটির জন্য যা ছিল আরো ব্যাপক সামাজিক ধর্ষন।

আমাদের মাথায় এতদিন খেলেনি বিষয়টা। পরবর্তীতে এই ছবি দেয়ার বিষয়টা পরিবর্তন করে ধর্ষকের ছবি দেয়া শুরু হয়েছে। মৃত্যুর পরে পত্রিকায় আমার ছবি টানিয়ে শোকসংবাদ দেবার বিজ্ঞাপন দেবার বিষয়ে পরিবারকে সতর্ক করে দেব। তবে অন্য একটা কারণে একবার পত্রিকায় আমার ছবিটা দেখতে চাই, সেটা হচ্ছে, প্রথম বাঙালী হিসাবে মহাশূণ্যে বিচরণ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.