আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিলির প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেত

আমি কাক নই, আমি মানুষ...

চিলিতে সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী মিশেল ব্যাচেলেত গত রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। গোটা আমেরিকা মহাদেশে তিনিই প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। গত রোববার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে তিনি রক্ষণশীল প্রার্থী কোটিপতি সেবাস্তিয়ান পিনেরাকে পরাজিত করেন। তার প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে সাড়ে তেপ্পান্ন শতাংশ। এই হার পিনেরার চেয়ে সাত শতাংশ বেশি।

দেশের ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে বারটিতেই তিনি জয়লাভ করেন। ৫৪ বছর বয়সী ব্যাচেলেত এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘদিন কারাবাস করেছেন। তার স্বামী বা পিতা দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। এই অবস্থায় সরাসরি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হতে পারা ব্যাচেলেতের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার বিষয়।

অনেকেই ধারণা করছেন, ব্যাচেলেতের জয় লাতিন আমেরিকায় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। অগাস্টো পিনোশে’র ১৭ বছর স্বৈরশাসন শেষে ১৯৯০ সালে চিলিতে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর এ নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। তার এ জয়ের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে কেন্দ্রীয়-বাম কোয়ালিশনের শাসনকাল আরও দীর্ঘায়িত হল। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো লাগোস চিলি’র প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসেবে প্রশংসা করেন। শুধু চিলির বিদায়ী প্রেসিডেন্টই নন গোটা বিশ্বই মিশেলা ব্যাচেলেতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বিশেষ করে চিলির প্রতিবেশি লাতিন আমেরিকান রাষ্ট্রগুলোর নেতারা ব্যাচেলেতের বিজয়ে সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বলিভিয়া,পেরু,কলম্বিয়া প্রভৃতি দেশের নেতারা উচ্ছসিত অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যাচেলেতকে। এ ছাড়াও ইতালি,ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই নারী প্রেসিডেন্টকে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এলভারো উর্বি টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যাচেলেতকে। এলভারো বলেছেন,‘আমি একই সঙ্গে ব্যাচেলেত এবং গোটা লাতিন আমেরিকার নারীদেরকে উচ্ছসিত অভিনন্দন জানাচ্ছি।

’ কলম্বিয়ার মন্ত্রীসভায় ৪ জন নারী রয়েছেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে এলভারো বলেন,‘মহিলাদের হাতে দায়িত্ব দেয়া হলে তারা সুচারুভাবে তা পালন করে থাকেন। ’ বলিভিয়ার নবনির্বাচিত বামপন্থি প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসও আরো বেশি উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন ব্যাচেলেতের বিজয়ে। তিনি ২২ জানুয়ারি তার অভিষেক অনুষ্ঠানে ব্যাচেলেতকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চিলির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,‘আমি এমন একটি দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আশা করছি অতিতে যে দেশের তীব্র সমালোচনা করতাম।

’ উল্লেখ্য চিলির সঙ্গে বলিভিয়ার দীর্ঘদিন ধরেই টানা পোড়েনের সম্পর্ক চলে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে দেশদুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে । পেরুর প্রেসিডেন্ট আলেসান্দ্রো তলেদো তার দেশের সঙ্গে ব্যাচেলেতের ঘনিষ্ট সম্পর্কের আশা প্রকাশ করেছেন। ব্যাচেলেতের বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে এই আশা প্রকাশ করেন তলেদো। লাতিন আমেরিকার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় নেতারাও স্বাগতম জানিয়েছেন চিলির প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্টকে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক বলেছেন,‘ব্যাচেলেতের নেতৃত্বে চিলির সঙ্গে ফ্রান্সের রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে আমি দৃঢ় আশা পোষণ করছি। ’ ইতালির বিরোধীদলীয় নেতা পিয়েরে ফ্যাসিনো বলেছেন,‘ নারী নেত্রী ব্যাচেলেতের বিজয়ে লাতিন আমেরিকার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অগ্রগতি আরো সুসংহত হবে বলে আমি আশা করছি। ’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউস থেকেও ব্যাচেলেতকে অভিনন্দন জানানো হয়। হোয়াইটহাউসের মুখপাত্র ক্রিস্টি প্যারেল বলেছেন,‘ব্যাচেলেতের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা চিলির গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতির জোরদার অবস্থায় নির্দেশ করে। ’ মহিলা রাজনীতিক মিশেল ব্যাচেলেত তার দেশে নারী প্রগতির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিবেন বলে অঙ্গিকার করেছেন।

দেশটির প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মন্ত্রীসভার অর্ধেক সদস্য নারীদের মধ্য থেকে নিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নারীর এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এই কামনাই বিশ্বের সংগ্রামী নারী সমাজের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.