আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমরত্ব

‘দাদী, তোমার কাছে এক ভদ্র লোক এসেছেন। ‘ বলেই হেসে ফেলল রুমানা এতে হাসির কি হল? আমার কাছে কেউ আসতে পারে না? যাও, গেলেই বুঝবা কেন হাসছি। বিরক্ত হব না অবাক হব ভেবে পেলাম না। যদিও আমার কাছে সচরাচর কেউ আসে না। আত্মীয় স্বজন যারা আসেন তাঁরা পরিবারের কাছেই আসে, আমার সঙ্গেও দেখা হয় এই যা।

কেবল আমার কাছে কার কি দরকার পড়ল? কিছুটা চিন্তিত হয়েই এগোলাম ড্রইং রুমের দিকে। পঁচিশ ছাব্বিস বছরের একটা ছেলে বসে আছে। চেহারা চেনা চেনা। ইশতিয়াকের মত দেখতে। মেডিকেল কলেজে ইশতিয়াক আমাদের ক্লাসমেট ছিল।

আমার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ও ছিল। এরপর তো আর অনেক দিন দেখা নাই। কোথায় যেন থাকে এখন? আমেরিকায় গিয়েছিল শুনেছিলাম, তারপর আর কোন খবর জানি না। ওর ছেলে নাকি? ছেলে হলেও ছোট ছেলে হবে হয়তো। আমার নাতিই তো ওর চেয়ে বড় হয়ে গেছে।

হঠাৎ করে কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে গেল। সোফায় বসতে বসতে বললাম, তুমি ইশতিয়াকের কেউ হও? সুন্দর মিষ্টি করে হাসল ছেলেটা। চেহারা মনে আছে তাহলে? এরকম ফটোকপি চেহারা কারো হতে পারে তোমাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। তুমি কে হও ইশতিয়াকের? বলছি। তাঁর আগে বল তুমি কেমন আছ? আচ্ছা বেয়াদব ছেলে তো? দাদীর বয়সী একজনকে তুমি করে বলছে।

আমেরিকায় থাকে বলে হয়তো। ওখানে তো কেবল ‘ইউ’। আপনি তুমি আলাদা করতে শেখে নি হয়তো। রেগে গেলেও শান্ত থাকলাম। ইশতিয়াকের অবস্থা জানতে বেশী আগ্রহ হচ্ছে।

অনেকদিন কোন খবর নাই। বিয়ে থা করেছে কি না? করেছে বোধহয়, নইলে এই ছেলে এলো কোথা থেকে? শান্ত ভাবেই উত্তর দিলাম, আমি ভালোই আছি। তোমার পরিচয় কিন্তু এখনও বল নি। আমি ইশতিয়াক। মানে? মানে তোমার ক্লাসমেট ইশতিয়াক।

যে একসময় তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেত। ইম্পসিবল। তাঁর বয়স তো এখনও আশি হওয়ার কথা। আমি তো অস্বীকার করছি না। মানে? প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছ নাকি? সে অনেক গল্প।

আমি তোমার মত জানতে এসেছি। আমার মত? কি ব্যাপারে? আমাকে বিয়ের ব্যাপারে। এসব কি কথা বলা শুরু করেছে ছেলেটা। ও আসলে কে? ইশতিয়াক হতেই পারে না। ও এখন আশি বছরের বৃদ্ধ।

এমন পঁচিশ বছরের যুবক কিভাবে হবে? বিজ্ঞান কি বয়স কমাতে কোন ওষুধ তৈরি করেছে? আমেরিকায় থাকে, হতেও পারে। সব কেমন এলোমেলো লাগছে। আর আমাকে এই বয়সে বিয়ে করতে চাওয়ার মানে কি? ও কি দুষ্টামি করছে? তোমাদের বাসায় কোন গেস্ট আসলে চা নাস্তা দেয়া হয় না? সেই দুস্টামি ভরা কথা বার্তা। ওকে কি শিখিয়ে পাঠিয়েছে ইশতিয়াক? আমাকে অবাক করে দেয়ার জন্য? বললাম, দেয়া হয়। কিছুক্ষণের ভেতরই আসবে।

আচ্ছা তুমি আমার নাতনী কে কি বলেছ? বলেছি, আমি তোমার ক্লাসমেট। দেখা করতে এসছি প্রাক্তন বান্ধবীর সঙ্গে। এবার বুঝলাম রুমানা হাসছিল কেন। ধাঁধা এখনও কাটছে না। আমার অবস্থা বোধহয় ছেলেটাও বুঝতে পেরেছে।

মিটিমিটি হাসছে আর আমাকে দেখছে। কি? এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমি ইশতিয়াক? কিভাবে হবে। তোমার বয়স এখন আশি হওয়ার কথা। আমি তো অস্বীকার করছি না। আশি বয়সে এই শরীর থাকা সম্ভব? এই শরীরের বয়স তো পঁচিশ।

তোমার কোন কথাই আমি বুঝছি না। ডাক্তারি কর এখন? না। পড়াশোনা কর? নতুন কোন টেকনোলজি সম্পর্কে খবর রাখো? এবার ইন্টারেস্টেড বোধ করলাম। প্রথমবারে মত মনে হচ্ছে যা দেখছি তাঁর ভেতর অনেকখানি সত্য লুকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ও হয়তো সত্যিই ইশতিয়াক।

কোন মেডিকেল ইনভেনশানের জোরে বয়স কমিয়ে ফেলেছে। হয়তো আমার বয়সও কমিয় ফেলতে পারবে। তারপর বিয়ে করবে। ভাবতে খারাপ লাগছে না। সত্যি যদি আবার সেই বয়স ফেরত পাওয়া যায়, মন্দ কি? ইশতিয়াক তো আর ছেলে খারাপ না।

বলতে চাচ্ছ বয়স কমানোর কোন ওষুধ বেরিয়েছে? না। তাহলে? ক্লোনিং এর নাম শুনেছ? সে তো অনলি অ্যানিম্যাল এ ওপর আলাউড। সে তো দুই যুগ আগের কথা। এরপর কত অলটপালট হয়েছে। কি হয়েছে? এখন তো মানুষ ক্লোনিং হর হামেশা হচ্ছে।

দরকার তো একটা ভ্রূণ। সেই ভ্রূণ থেকে ক্রোমোজোম বের করে নিজের ক্রোমোজোম ঢুকিয়ে দিলেই আরেকটা তুমি তৈরি করার ভ্রূণ পাওয়া হয়ে গেল। এরপর চাই একটা ‘মা’ যার মাধ্যমে সেই ভ্রূণ সন্তানে পরিনত হবে। ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং হওয়ায় এখন সস্তায় ‘মা’ পাওয়া যাচ্ছে। যারই সামর্থ আছে সেই নিজের একটা ক্লোন বানিয়ে রাখছে।

কেন? বারে, কখনও শরীরের কিছু নষ্ট হলে? কিডনি নষ্ট হল কিংবা হার্ট বা ফুসফুস তখন? তখন সেই ক্লোনের কাছ থেকে ওর একটা অর্গান নিয়ে নেয়া হয়। বিশেষ করে যেসব অর্গান দুটো আছে। লিভার কিংবা হার্ট দরকার পড়লে অবশ্য ক্লোনকে মেরে ফেলতে হয়। বল কি? মানে তুমি ইশতিয়াকের ক্লোন? ক্লোন তো অবশ্যই। তবে আরও একটু সংযোজন আছে।

একটু বুঝিয়ে বলবে? ক্লোন যদিও আমার কপি, কিন্তু ওর মন মানসিকতা তো আর আমার না। ও যেভাবে বড় হবে, যা শিখবে, ও তাই তৈরি হবে। ক্লোনদের সাধারণতঃ বন্দী করেই রাখা হয়। প্রয়োজনে ওদের অরগ্যান নেয়া হয়। কখনও বিক্রিও করা হয়।

রিসেন্টলি আবিস্কার হয়েছে ‘ব্রেন ট্রান্সপ্লান্ট’। এরপর পাল্টে যায় পুরো চিত্র। কেন? কারণ এখন ঘটছে উল্টোটা। এখন আর সেই ক্লোনকে মেরে ফেলা হচ্ছে না। বরং উল্টো ওরিজিনাল মানুষটিকে মেরে তাঁর ব্রেন ক্লোন বডিতে ট্রান্সপ্লান্ট কড়া হচ্ছে।

মানে তুমি হচ্ছ ইশতিয়াকের ক্লোন উইথ ইশতিয়াকস ব্রেন? এই তো বুঝেছ। এখন বল তুমি রাজী কি না? কিসে রাজী? আমাকে বিয়ে করতে? এই বয়সে? তোমার ক্লোন রেডি। মানে তোমার ব্লাড স্যাম্পল জোগাড় করে এই কাজ আমি আগেই সেরে রেখেছি। ওর বয়স এখন তেইশ। তুমি রাজী হলেই বাকী কাজে হাত দেয়া হবে।

বল রাজী? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।