জাদুনগরের কড়চা
ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী কর্মকান্ডে পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে অগ্রগামী ছিলো বাঙালিরাই। আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে, পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা। উইকিপিডিয়াতে এই সব বিপ্লবীদের জীবনী লিখতে গিয়ে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করি। যুগান্তর নামে যে বিপ্লবী দল গঠিত হয়, তার প্রধান কর্মক্ষেত্র ছিলো এই পূর্ববঙ্গেই।
এই সাহসী বিপ্লবীদের একজন, বিনয় বসুর জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জে।
বাংলা উইকিপডিয়াতে তাঁর জীবনী নিবন্ধটি নীচে তুলে ধরলাম। লেখাটি বাংলা উইকিপিডিয়া হতে মুক্ত লাইসেন্সে (জিএফডিএল) প্রদত্ত।
------
বিনয় কৃষ্ণ বসু, বিনয় বসু নামে বেশি পরিচিত (জন্ম সেপ্টেম্বর ১১, ১৯০৮, মৃত্যু ডিসেম্বর ১৩, ১৯৩০), ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী।
* ১ প্রাথমিক জীবন
* ২ বিপ্লবী কর্মকান্ড
* ৩ রাইটার্স ভবনে হামলা
* ৪ গ্রন্থসূত্র
১ প্রাথমিক জীবন
বিনয় বসুর জন্ম হয় ১৯০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার রোহিতভোগ গ্রামে। তাঁর পিতা রেবতীমোহন বসু ছিলেন একজন প্রকৌশলী।
ঢাকায় ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করার পর বিনয় মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল (বর্তমানের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) এ ভর্তি হন। এসময় তিনি ঢাকার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সংস্পর্শে আসেন এবং যুগান্তর দল এর সাথে জড়িত মুক্তি সঙ্ঘে যোগ দেন। বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার জন্য তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।
২ বিপ্লবী কর্মকান্ড
বিনয় ও তাঁর সহযোদ্ধারা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে যোগ দেন ১৯২৮ সালে। অল্পদিনের মধ্যেই বিনয় এই সংগঠনের ঢাকা শাখা গড়ে তুলেন।
অচিরেই রাজবন্দীদের উপর পুলিশী নির্যাতনের বিরূদ্ধে তাঁর সংগঠনটি রুখে দাঁড়ায়। ১৯৩০ সালে বিপ্লবীরা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। লোম্যানের মিটফোর্ড হাসপাতালে এক সহকর্মীকে দেখতে আসার কথা ছিল। ১৯৩০ সালের ২৯ আগস্ট বিনয় সাধারণ বেশভূষায় নিরাপত্তা গন্ডীকে ফাঁকি দিয়ে লোম্যানের খুব কাছে চলে এসে তাকে গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই লোম্যানের মৃত্যু হয় এবং তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হডসন গুরুতর আহত হন।
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বিনয় কলকাতা শহরে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০০০ রূপি পুরষ্কার ঘোষণা করে।
৩ রাইটার্স ভবনে হামলা
বিপ্লবীদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল কারা কর্তৃপক্ষের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসন। রাজবন্দীদের উপর অত্যাচার চালানোর জন্য সিম্পসন বিপ্লবীদের কাছে কুখ্যাত ছিলেন। তাঁরা সিম্পসনকে হত্যার সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য তদানিন্তন সচিবালয়ে - কলকাতা শহরের রাইটার্স ভবন (বর্তমানে বিবাদি বাগে অবস্থিত) - হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর তারিখে বিনয়, বাদল গুপ্ত ও দিনেশ গুপ্ত একত্রে মিলে ইউরোপীয় বেশ ভূষায় সজ্জিত হয়ে রাইটার্স ভবনে প্রবেশ করেন ও সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন।
ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী সাথে সাথে গুলি বর্ষণ শুরু করে। গুলি বিনিময়ে টেয়ানাম, প্রেন্টিস, নেলসন সহ আরো কিছু পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হন। তবে অচিরেই তিন বিপ্লবী পরাভূত হন। পুলিশের কাছে ধরা না দেয়ার অভিলাসে বাদল গুপ্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
বিনয় ও দিনেশ পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। হাসপাতালে ১৯৩০ সালের ১৩ই ডিসেম্বর বিনয়ের মৃত্যু হয়।
বিনয়-বাদল-দিনেশের এই আত্মত্যাগের স্মরণে কলকাতার ডালহৌসি চত্ত্বরের নাম করণ করা হয় বিবাদি বাগ।
৪ গ্রন্থসূত্র
* হেমেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত, ভারতের বিপ্লব কাহিনী, ২য় ও ৩য় খন্ডI, কলকাতা, ১৯৪৮।
* আরসি মজুমদার, History of the Freedom Movement in India, III, কলকাতা, ১৯৬৩।
* গঙ্গানারায়ণ চন্দ্র, অবিস্মরণীয়, কলকাতা, ১৯৬৬। .
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।