জীবনের শুরুটা মৃত্যুরই নামান্তর। জিজ্ঞেস করি!!
জী ঠিকই বলছি! উনি চরম রেসিস্ট। আমাকে দেখতেই পারে না। কিন্তু উনার মেয়ের ঘরের বাচ্ছা কাচ্ছা আবার উনার জানের জান! তাদের মায়ার সাগরে সব সময় ভুলিয়ে রাখে। হিংসে হয় এমনটি করা মোটেও ঠিক না।
আমার বাবা পরিবারের বড়। আর আমিই বংশের প্রথম সন্তান এবং বংশের ফিলিপস বাতি। কোথায় শালীর বেটি আমাকে আদর করবে, তা না করে আমাকে সব সময় দুরে ঠেলে দিত। এখনো দেয়।
বুঝিনা কি কারন? উনার এহেন আচরন ছোটবেলায় বুঝতাম না, বড় হয়ে যখন বাড়ীতে যেতাম, দেখতাম উনি আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলতেন, এখনও চলে, আর আমাকে অবহেলা করতেন, এববার বাড়ী গিয়ে আমার প্রচন্ড জ্বর আসলো, সবাই তাড়াহুড়ো করে আমার সেবা যত্ন করতে ব্যস্ত, আর উনি কিনা তখন ঘুমের ভান করে ঘুমাতে গেছেন, ডাক্তার ডাকার কথা বলতেই বল্লেন, এ জ্বর কিছু না এমনেতেই সেরে যাবে! পরে অবশ্য রাতের তিনটায় ডাক্তার ডেকে ইনজেকশান দিয়ে আমার জ্বর নামানো হলো।
জ্বর সারতেই এক মুহূর্ত আর বাড়ীতে থাকিনি, সঙ্গে সঙ্গে মাকে নিয়ে চলে আসি। পরে সবাই বুঝতে পেরেছিল, কেন আমি এমন করেছিলাম।
এরপর দীর্ঘ ৫ বছর গ্রামের বাড়ী যাইনি। মা-বাবা গেছেন অনেক বার। শুনে অবাক হবেন এই পাঁচ বছরে উনি আমার বাবা মাকে একবারো আমার কথা জিগাস করেন নাই।
কাহীনিটা জেনে খারাপ লাগলো বিধায় আমি বের করার চেষ্টা করলাম আমাকে অপছন্দের কারন কি? অনেক কে জিগাস করলাম, কেউ ঠিক জানে না। পরে আমার দাদীর ভাইকে জিগাস করলাম। উনার কাছ থেকে সব জেনে আমি অবাক হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম! উনি মনে করেন উনার শেষ বয়সে উনার ছেলেরা উনাকে দেখবে না!(আমার বাকী সব চাচা বিবাহিত, কারো কোন বাচ্ছা কাচ্ছা নাই) উনার মেয়েরা(আমার ফুপুরা তিনজন, বাচ্চা কাচ্ছা মাশাল্লা, একেক জনের ঘরে ৫-৬ জন করে) নাকি উনাকে ফেলে দেবেন না। তাই তিনি মেয়ের ঘরের সবাই কে প্রচন্ড আদর করে, বাড়ীর মাছ, আম, কাঠাঁল, ধান, সব কিছুই আমার ফুপুদের বাড়ী যায় কিন্তু আমাদের ঘরে আসে না, আমার বাবা কখনো প্রতিবাদ করেন না, কারন বাবা বলেন যাদের কোন আক্কেল নেই তাদের আক্কেল দিয়ে নিজেকে বোকা সাব্যস্ত করার কোন মানে হয়না।
আরো মজার কথা হলো উনি সকল জায়গা জমি, দোকান, রাইস মিল, ইত্যাদি অনেক আগে থেকেই সকলের অজান্তে মেয়েদের কে দিয়ে দিয়েছেন! বাকী চাচারা এ নিয়ে কথা উঠালেও তাদের কে অগ্রাহ্য করে উনি বলেছেন 'আমি যেটা ভাল বুঝি তাই করেছি, তোমরা তোমাদের মত থাক, বাকী যা কিছু আছে, সময় মত আমি তা তোমাদের দেব' বাকী যা বলতে বোঝায়, একটি পুকুর, দুটি বাড়ী, অজপাড়া গায়ে কিছু জমি।
বাবার কোন চাওয়া পাওয়া নেই, উনি উনার জীবনে দিন আনে দিন খায় মত চলেছেন এখনও একই অভ্যাস, সব সময় দেখতাম বেতন পেলেই বা বাকী ব্যবসা থেকে কিছু টাকা আসলেই উনি মাকে দিয়ে বলতেন খাওয়া দাওয়ায় কোন কষ্ট পাওয়া চলবে না, কাপড়ে কোন কমতি থাকতে পারবে না, দৈনন্দিন খরচ যেন কম না পড়ে , সুতরাং মা সেভাবেই সবাইকে দিয়ে , সংসার চালিয়ে নিতেন, কখনো টাকা ফুরালে বাবা নিজেই আলুর ভর্তা বা আরো বিভিন্ন ভর্তা বানিয়ে ভাত খেতে ডাকতেন, বলতেন সব সময়ই তো ভাল খাই, আজ না হয় আমরা একটু বাঙ্গালী পনা খাবার খাই, কি বল তোমরা? তো বাবা কোন আগ্রহ নাই এসব ব্যপারে। বাকী চাচারা সবাই ওই সব জায়গা জমির আশা ছেড়েও দিয়েছেন।
সন ২০০৩ আমার দাদী অসুখে পড়লেন, উনার মেয়েরা কেউ কি কারনে জানি উনাকে দেখতে আসেন নি। পরে শুনেছি পড়শীরা নাকি হাসপাতালে নিয়ে গেছে, টাকার দিতে পারেনি বলে মেঝেতে থাকতে হয়েছে, মা খবর পেতেই ছুটে গেলেন, টাকা জমা দিয়ে বেডের ব্যবস্থা করলেন, চিকিৎসা করালেন।
সন ২০০৪ উনি হজ করতে যাবেন, কে টাকা দেবে? মেয়েদের কাছে চাইলেন সবাই নাই বলে ফিরিয়ে দিলেন।
চাচারা কেউ দিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাবা টাকা দিতে চাইলেন, উনি নিলেন না, কেথাকার কোন জমি বেচে যেতে চাইলেন, পরে কি কারনে জানি গেলেন না।
সন ২০০৫ উনার মেয়ের ঘরের নাতী চেয়ারম্যানের মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে দাদীর বাড়ীতে উঠে। জানাজানি হলে চেয়ারম্যান মেয়েকে নিতে পুলিশ নিয়ে আসে, আর উনি নাতীকে বাচাতে পুলিশকে ঘুষ সাধেন বাড়ীর সামনের পুকুরের মূল্য!
এভাবেই চলছে এখনও, জানি না কেমন আছে, তবে মনে হয় নতুন কোন উপসর্গ নিয়ে লড়াই বা রেষারেষি করছে।
আনেক কথা বল্লাম কারন আজ উনাকে মনে পড়ল, আজ এক বন্ধুর দাদীর জন্মদিন ছিল।
সেখানে গেলাম, ফিরে এসেই আমার দাদীর কথা মনে পড়ল। উনি একজন জাত রেসিস্ট, উনার মত নারীদের কারনে আমাদের পূর্ব পুরুষের ধ্বংস হয়েছে। করো পক্ষ-বিপক্ষ নয়, সমান অধিকার পাবার যোগ্যতা টা তো অনন্ত রাখি। নাকি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।