গোলাম মোর্তোজা
সন্দেহ নেই যে আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। আমরা এও জানি যে, সেটা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সম্ভব না হলেও অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেটা বিশ্বাস করি। এও বিশ্বাস করি যে, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সামরিক বাহিনী সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিছু দিন ধরে খুব জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে দুই নেত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। বলছি বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘মাইনাস টু তত্ত্বের’ কথা। এতদিন আমরা বলতাম দুই নেত্রী যদি অপরাধ করে থাকেন তবে তাদেরও বিচার করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে ‘যদি’ শব্দটি ব্যবহারের আর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরের দুর্নীতির যে চিত্র বাবর, জলিল, মিন্টু, মামুন, সেলিমের মুখ থেকে জানা যাচ্ছে, তাতে আর ‘যদি’ ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
তাই বলি দেশের মঙ্গলের জন্যে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিদেশে পাঠিয়ে দেয়াটা কোনো শাস্তি হওয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে দুর্নীতি করেছে বাবররা ...। বাবর বা মামুনের বিচার হবে, খালেদা জিয়ার হবে নাÑ এটা হতে পারে না। হাসিনার ক্ষেত্রেও একই কথা।
যদিও খালেদা, হাসিনার বিষয়টি একভাবে দেখলে মনে হয় না সুবিচার করা হবে। ৫০০ কোটি টাকার ফ্রিগেট কেনা থেকে হাসিনা নিয়েছেন এক কোটি টাকা। আর খালেদা জিয়া হত্যাকারীকে বাঁচানোর জন্যে ৫০ কোটি টাকার চুক্তি করেছেন। হাসিনার সময়ে দুর্নীতিরও একটা সীমাবদ্ধতা ছিল, খালেদার সময়ে তা ছিল না। বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।
২.
দুর্নীতিমুক্ত বা হ্রাস করার কার্যক্রমকে নীরবে-সরবে সমর্থন করি। কিন্তু যখন বিশেষ কারো বা বিশেষ কোনো দলের প্রতি ভিন্ন আচরণ লক্ষ্য করা যায়, তখন আর নীরবে-সরবে সমর্থন তো করা যায়-ই না। পারা যায় না প্রশ্ন না তুলেও। হাসিনা-খালেদাসহ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের শাস্তি দিতে হবেÑ খুবই ভালো কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে কী চাইছি? কাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করছি? জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিষ্ঠিত করা কি বর্তমান সরকারের বিশেষ কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য? এটা কি সরকার জেনে বুঝে করছে না অজান্তে হয়ে যাচ্ছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা গত সংখ্যায় লিখেছি। লিখেছি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াতের ইসলামী ব্যাংকের সম্পর্কের কথাও। সে বিষয়ে আরো দু-একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুখপত্র মাসিক ‘জাগো মুজাহিদ’। এই পত্রিকার মাধ্যমে তারা তালেবানি প্রচারণা চালিয়েছে।
সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলেছে। মানুষকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছে। করেছেও। বোমা মেরে মানুষ হত্যা তার প্রমাণ। মাসিক ‘জাগো মুজাহিদ’-এর অর্থ লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
ইসলামী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় চলতি হিসাব নং ৫৩১৯ মাসিক ‘জাগো মুজাহিদ’-এর। শুধু তাই নয়, এই পত্রিকাটি খুব কম মানুষই প্রকাশ্যে দেখেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান সেই পত্রিকায়ই বিজ্ঞাপন দেয়, যে পত্রিকার ভালো প্রচার সংখ্যা থাকে, প্রকাশ্যে পাওয়া যায়। যেহেতু ‘জাগো মুজাহিদ’ প্রকাশ্যে পাওয়া যায় না, জেহাদের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জঙ্গি বানানো যাদের উদ্দেশ্য, তাদেরকে কারা বিজ্ঞাপন দেয়? নিশ্চিত করেই বলা যায় তাদের এসব কার্জকর্ম যারা সমর্থন করে তারা। দেখা যায় ‘জাগো মুজাহিদ’-এর প্রায় প্রতিটি সংখ্যায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে জামায়াতের ইসলামী ব্যাংক।
এর থেকে কি কিছু প্রমাণ হয়?
এটাই প্রমাণ হয় যে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। প্রমাণ হয় যে, হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি কার্যক্রমে উৎসাহ এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
সাপ্তাহিক ২০০০ এর বর্তমান সংখ্যায় এই মন্তব্য প্রেতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। পুরোটা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।