আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করা বা ঢেলে সাজানোটার আসল অর্থ কী?

মাহফুজ জুয়েল

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে সরকার। এ জন্যে সারাদেশে মোট ৫১৯টি থানায় (পুলিশ স্টেশনসহ) ২ জন করে পুলিশ ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হবে। ফলে প্রায় ১ হাজার পুলিশ ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, এসএসপি ও পুলিশ ইন্সপেক্টর উভয় পদের জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। বাকি ৫০ শতাংশ নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে এর থেকে মুক্তি পাবার জন্য যমুনা সেতু স্থাপনের মতো সারচার্জ দিতে রাজি আছেন বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন। একই সভায় লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, দেশের ও রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩ বছরের মধ্যে ৫১টি থানা গঠন করবে। এর মধ্যে আগামী জুন মাসের মধ্যেই আরো ৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হবে। মামলার তদন্তের গতিশীলতা আনতে দেশের সব থানায় আরো দুজন করে পুলিশ সাব ইন্সপেক্টরও নিয়োগ দেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এসব কথার মধ্যে একটা বিষয় পরিষ্ড়্গার যে, মাঠে আরো পুলিশ নামছে এবং দুর্নীতি আরো মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।

কারণ তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান পুলিশ বাহিনীকে ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত করার অঙ্গীকার কোথাও ব্যক্ত করেননি। তার মানে দাঁড়ালো এই যে, এই পুলিশ যেখানেই থাকবে অনাচার সেখানে আগের মতোই থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাপ্ত দুটি তথ্য দিয়ে আমাদের পুলিশ বিভাগকে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমটি হলো পুলিশ বিভাগ মাসে ৫০ কোটি টাকা আয় করে শুধু পরিবহন খাত থেকে। অন্যান্য খাত বাদ দিয়েই এ হিসাব প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন যে, পরিবহন থেকে ঘুষ না নিয়ে তাদের কোনো পথ নেই। কারণ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় ডিউটি নিলে ঐ পরিমাণ টাকা তার বড়কর্মকর্তাকে দিয়ে তার ডিউটি নিতে হয়। জায়গা অনুযায়ী টাকার অংকও আলাদা। সুতরাং সে কি করবে? সায়েদাবাদ গাবতলী রুটের ৮ নম্বর গাড়ির একজন হেলপারের নাম তসলিম, তার অভিমত হচ্ছে- তেলের মূল্য বাড়লে ভাড়া আর কয়টাকা বাড়ে, বাড়ে ট্রাফিক সার্জেন্টদের টাকা দিতে দিতে। এরপর অপরাধ জগত, নেশার ভুবন হোটেল, পতিতা বাণিজ্য তো রয়েছেই।

সব জায়গায় পুলিশের রাজত্ব। একটি চলন্ত গাড়ির ব্যস্ত যাত্রীদের হয়রানি করে যে কোনো সময় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে সামান্য কুণ্ঠাবোধ করেন না একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট। এ চিত্র সব জায়গার। সুতরাং পুলিশের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান না চালালে জনগণ পুলিশের দ্বারা ক্রমশ বেশি নির্যাতিত হবে। সরকারের উদ্দেশ্য রক্ষা করতে তার যে কোনো সময় যে কোনো কাজ করতে বাধ্য থাকবে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায় এ বিষয়টার কোনো সুরাহার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বরং জনগণ ও ব্যবসায়ীদের উদ্ধার (!) করতে আরো থানা, আরো পুলিশ ব্যবহৃত হবে-এ কথা মোটেও সুখের নয়। অসৎ পুলিশ অশান্তির জন্মই দেবে তাতে জনগণের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসবে না। অন্যদিকে পুলিশকে ঢেলে সাজানোর যে নিত্যনতুন গরম বুলি শোনা যায় তারও একটি ঘটনার জন্য তৈরি হচ্ছে সরকার। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে সরকার।

এ জন্যে সারাদেশে মোট ৫১৯টি থানায় (পুলিশ স্টেশনসহ) ২ জন করে পুলিশ ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হবে। ফলে প্রায় ১ হাজার পুলিশ ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, এসএসপি ও পুলিশ ইন্সপেক্টর উভয় পদের জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। বাকি ৫০ শতাংশ নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হচ্ছে নতুন নিয়োগের ও পদোন্নতির তালিকায় যারা, তারা জোট সরকারের অনুগত- এভাবেই তালিকা করা হয়েছে।

একইভাবে অনুমেয় যে পুলিশের এই ঢেলে সাজানো প্রক্রিয়ার কারণ আগামী নির্বাচন। পুলিশকে হাতের মুঠোয় রেখে নির্বাচন করার নীলনকশা মাথায় রেখে পুলিশ দুর্নীতিমুক্ত করার প্রক্রিয়াটা কি সেটা সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল একটু স্পষ্ট করে বলবেন? ২৪ এপ্রিল, ২০০৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.