আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলাম আযম : একজন খুনীর প্রতিকৃতি-৩

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

১০ ডিসেম্বর থেকে বড় মাপে অপারেশন শুরু করে আল বদররা। কারফিউ আর ব্ল্যাক আউটের মধ্যে কাঁদামাখা বাস নিয়ে বেরুতো তারা, তারপর তালিকা মিলিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিত বুদ্ধিজীবিদের। এরপর মোহাম্মদপুর ফিজিকাল ট্রেনিং কলেজে তাদের জেরা ও নির্যাতন করা হতো। গভীর রাতে রায়েরবাজার বধ্যভূমির ইটখানায় তাদের নিয়ে গিয়ে হত্যা করত এসব ঘাতকেরা। মিরপুর ও ছিল আরেক বধ্যভূমি।

ঘাতক শিরোমণি গোলাম আযম (জন্ম ১৯২২) বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে গুছিয়ে বসেছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর দোসর হিসেবে কুখ্যাত এই লোক শীর্ষ যুদ্ধপরাধী হিসেবে স্বীকৃত। রাজাকার ও আল-বদরের মতো দুটো ঘৃণ্য ঘাতক দলের স্রষ্টা হিসেবে বাঙালী আজীবন তাকে ঘৃণা করবে। পাক সরকার সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দলিল প্রকাশিত করেছে যাতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার পক্ষে জোরালো প্রমাণ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর এই স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি সে।

১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সে পাকিস্তানে বসবাস করে এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তার পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বহাল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উঠতি ছাত্র নেতা হিসেবে গোলাম আযম ১৯৫৭ সালে উগ্রবাদী জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়। ১৯৬৯ সালে সে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের আম্বর (প্রেসিডেন্ট) হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে দালালী ও যুদ্ধপরাধের অভিযোগ ওঠে। নয়মাস ধরে চলা স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে গুরু মৌদুদির টেলিগ্রাম পেয়ে ২২ নভেম্বর লাহোর যায় গোলাম।

এরপর শেখ মুজিব সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করলে তার আর দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে ফিরতে ব্যর্থ এই ঘাতক শিরোমনি হজ্বের নাম করে এর পর মক্কায় যায়। সৌদি আরব থেকে গোলাম দুবাই, আবু ধাবি, কুয়েত, বৈরুত ও লিবিয়া যায় শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও পাল্টা অভুথ্যান ঘটানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে। স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধী এই কার্যক্রমের এক পর্যায়ে গোলাম লন্ডন আসে। সেখান থেকে জামাতের মুখপত্র হিসেবে সংগ্রাম পত্রিকাটি সে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশ করা শুরু করে।

১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা গোলামের কার্যক্রম নিয়ে চাঞ্চল্যকর একটি প্রতিবেদন ছাপায়। এতে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের শুরুর দিকে ইস্ট লন্ডনের একটি বাড়িতে এক কমিটি মিটিংয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একটি নীলনক্সা প্রণয়ন করে সে। একই বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন পাকিস্তানী সূত্র তা নিশ্চিত করে। বৈঠকে ছিল : এটি সাদী, তোয়াহা বিন হাবিব, আলি হোসাইন, ব্যারিস্টার আখতারউদ্দিন, মেহের আলী ও ড. তালুকদার। পাকিস্তানী নাগরিকদের মধ্যে ছিল সদ্য প্রয়াত মাহমুদ আলী।

বৈঠকের সভাপতি গোলাম বলে, ‍লন্ডন থেকে আমাদের কার্যক্রম চালানোটা কঠিন হবে। তাই আমাদের কাউকে দেশে ফিরে যেতে হবে। আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে, নয়তো ফায়দা হবে না। তবে দেশে ফিরলে যোগাযোগের মধ্যে থাকতে পারবে, কারণ আমার লোকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক।

উপস্থিতদের মাঝে একটি লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে গোলাম বলে, এই লিফলেটটি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে বিলি করতে হবে। জনগন আমাদের সাথে আছে। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.