অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন বর্বরতার শেষ কীর্তি হিসেবে বাঙালী সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার এক মরিয়া প্রয়াস নেয় পাকবাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনী জামাতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী আল-বদর ও আল-শামসকে লেলিয়ে দেয় বুদ্ধিজীবিদের হত্যার জন্য। লক্ষ্য ছিল বাঙালী রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, কবি, চিকিৎসক, আইনজীবি, সাংবাদিক ও অন্যান্য বুদ্ধিজীবিদের খুঁজেপেতে হত্যা করা। আল-বদর ও আল-শামস খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবিদের নৃশংস হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের নামের তালিকা তৈরি করে। তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার জলাভূমি রায়ের বাজারের দিকে।
পিঠমোড়া করে হাত ও চোখ বাধা এসব বুদ্ধিজীবিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জামাতে ইসলামী ও এর নেতারা ছিল এসব বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা ও কার্যকর করায় সক্রিয় অংশগ্রহনকারী। গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে দুশোর ওপর বুদ্ধিজীবি ও পন্ডিত লোককে হত্যা করে আল-বদর ও আল-শামস। শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকদের জড়ো করে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন টর্চার সেলগুলোতে। এদের বেশিরভাগকে একসঙ্গে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, বেশিরভাগকে রায়ের বাজার ও মিরপুরে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর নিহত বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে আছেন ড. জি.সি দেব (ঢাবির দর্শনের অধ্যাপক), ড. মুনীর চৌধুরী (নাট্যকার, ঢাবি অধ্যাপক), ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (ঢাবি অধ্যাপক), ড. আনোয়ার পাশা (ঢাবি অধ্যাপক), ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলীম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক), নিজামুদ্দিন আহমেদ (সাংবাদিক), সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক), আলতাফ মাহমুদ (সুরকার ও গীতিকার), ড. হাবিবুর রহমান (গণিতবিদ, রাবি শিক্ষক), ধীরেন দত্ত (রাজনীতিবিদ), দানবীর আরপি সাহা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. ক. মোয়াজ্জেম হোসেন, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন মাহমুদ এবং আরো অনেকে।
ড. রশীদ আকসারি লিখেছেন, পাকবাহিনীর পুর্বাঞ্চলের অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজির পৃষ্টপোষকতায় ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আল-বদর বাহিনীর জন্ম যারা ওই গোপন গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপহরণ ও হত্যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করা। তথাকথিত গভর্নর নুরুল আমিনের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এই উচ্চশিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবি শ্রেনীর বিনাশের নীলনক্সার প্রণেতা। আর এক সপ্তাহ হাতে পেলে তারা এদেশের বাকি সব বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করত।
সত্যি বলতে বদর বাহিনী ছিল মৌদুদী, গোলাম আযম ও আব্দুর রহিমের দল জামাতে ইসলামীর একটি বিশেষ সন্ত্রাসবাদী অংশ।
তিনি আরো লিখেছেন, হত্যার তালিকা পেশ করার পরপর গোলাম আযম, রাজাকার বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ ইউনুস ও শান্তি কমিটির লিয়াজো অফিসার মাহবুবুর রহমান গুর্হাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর শরীর শিক্ষা কেন্দ্রে রাজাকার ও আলবদরদের প্রশিক্ষণ দেখতে যায়। তারপর থেকেই গোটা দেশে ইসলামী ছাত্র সংঘকে (এখন ইসলামী ছাত্র শিবির) আলবদরে রূপান্তর করা হয়। এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথমভাগ পর্যন্ত তাদেরকে অপহরণ ও হত্যার জন্য বুদ্ধিজীবিদের তালিকা সরবরাহ করা হয়।
৪ ডিসেম্বর থেকে কারফিউ ও ব্ল্যাক আউট আরোপ করা হয় অপহরণের সুবিধার্থে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।