আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ নিয়ে ইনডিয়ান মিডিয়ার আগ্রাসন

মুভি ক্রিটিক ব্লগ (প্রথম বাংলা মুভি ব্লগ) ★★★★★ © ২০০৭ - ২০১৩ ওয়েবসাইট: www.saifsamir.com

অভিযোগ আছে, ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার একটি অংশ বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আমাদের পাশের দেশ ইনডিয়া। কথিত আছে, এ দেশের কিছু মীরজাফর এ প্রক্রিয়ায় রসদ যোগাচ্ছে। মিডিয়ার এ অংশটি বাংলাদেশ সংক্রান্ত নেগেটিভ নিউজ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা সাধারণ সংবাদকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে জড়িয়ে ফেলছে। ফলে এসব সংবাদ মাধ্যমের ওপর বস্তুনিষ্ঠহীনতা ও অসচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি একটি ইনডিয়ান পত্রিকা ড. ইউনূসকে নিয়ে অপসাংবাদিকতা করার জন্য আলোচিত হয়েছে। আমি এ ধারার অন্য আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। কেউ বলেন প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে, কেউ বলেন এখনো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসই রচিত হয়নি। সম্প্রতি শহীদ জায়া মুশতারী শফী বলেন, একাত্তরের দিনগুলি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৌলিক রচনা নয়; কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ বলেননি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল আসলে ইনডিয়া বনাম পাকিস্তানের! কিংবা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে ইনডিয়ার যুদ্ধ।

আতকে ওঠার মতো এ কথা আমার নয়। সম্প্রতি ইনডিয়ান একটি পত্রিকা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে এভাবেই প্রচার করছে। সেখানে বাংলাদেশের নামটি একবারও স্থান পায়নি, যেন বাংলাদেশ একাত্তরের যুদ্ধের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ইনডিয়ার কলকাতার আনন্দলোক ম্যাগাজিনের ২৭ মার্চ সংখ্যায় বিভিন্ন ফিচারে মোট তিনবার এসেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবান্বিত সময়টির কথা। কিন্তু কি লেখা হয়েছিল সেখানে যা আমাকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে? দেখুন তাহলে - ১. ...পরিচালক অমৃত সাগরের ১৯৭১।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পটভূমিকায় এই ছবি...। ২. ১৯৭১ ছবিটি একাত্তর সালে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের পর পাকিস্তানের জেলে বন্দী ভারতীয় সেনাদের ওপর তৈরি। আপনার কি মনে হয় না, ভারত-পাক যুদ্ধের ওপর তৈরি ছবিগুলো একঘেয়ে হয়ে গেছে? ৩. ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে হিন্দিতে আজ পর্যন্ত যতো ছবি তৈরি হয়েছে, ১৯৭১ তাদের মধ্যে সেরা...। ছবির প্রেক্ষাপট সারা বিশ্বে সাড়া জাগানো এমন এক ঘটনা...। ১৯৭১-এ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বলে জানি, সেই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনার হাতে ধরা পড়েছিল বেশ কিছু ভারতীয় জওয়ান ও অফিসার।

মুুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৭ সাল থেকে ছবির কাহিনী শুরু। সামান্য বিবেক-বোধসম্পন্ন যে কোনো বাংলাদেশি পাঠক বাক্যাংশগুলো পড়ে চমকে না গিয়ে পারেন না। ইনডিয়ান মিডিয়ার স্পর্ধা দেখে হতবাক হয়ে যেতে হয়। কিভাবে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবলীলায় ইনডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিতে পারে? পুরনো কিছু ভাবনা নতুন করে না ভেবে পারা যায় না। তবে কি তারা বাংলাদেশকে ইনডিয়ার একটি অঙ্গরাজ্য মনে করে? মুক্তিযুদ্ধে ইনডিয়া বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল।

যুদ্ধের শেষদিকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাধে কাধ মিলিয়ে সরাসরি পাক হানাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। তাই বুঝি আজ তারা পুরো যুদ্ধটাকে নিজেদের করে নিচ্ছে? তবে কি তাদের সে সহযোগিতা পুরোপুরি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ছিল? এবং এ বিষয়ে যেসব কথা চালু আছে সেগুলো কি তাহলে সত্যি? যদি মিথ্যা হয় তবে কেন তারা এখন ১৯৭১-কে স্রেফ পাকিস্তান-ইনডিয়া যুদ্ধ হিসেবে দেখছে? কিন্তু যুদ্ধটা তো সে রকম ছিল না। এটি ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের যুদ্ধ। ইনডিয়া আমাদের সাহায্য করেছিল মাত্র! এখন যদি তারা এটাকে পাকিস্তান-ইনডিয়া যুদ্ধ বলে আমাদের ছোট করে স্নায়ুসুখ পেতে চায় তবে তাদের কি বলে ধিক্কার দেবো? আরো আশ্চর্য, একাত্তরের যুদ্ধকে তারা আবার পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সঙ্গে ইনডিয়ার যুদ্ধও বলছে! তবে কি এটি একটি ত্রিমুখী যুদ্ধ ছিল? ইনডিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে না হয় অস্ত্র দিয়ে লড়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে কি দিয়ে লড়েছিল? কি ছিল সেসব গোপন অস্ত্র আর জয়-পরাজয়? কি দুঃসাহস আনন্দলোক পত্রিকাটির, ১৯৭১-এর ইনডিয়া-পাকিস্তানের যুদ্ধকেই তারা নাকি মুক্তিযুদ্ধ বলে জানে! এখানে বাংলাদেশ ভোজবাজির মতো গায়েব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নামটি তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে একবারও উচ্চারণ করেনি।

তবে কি এতোদিন আমাদের জানার মধ্যে ভুল ছিল? ইতিহাসের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আমাদের কি কোনো সম্পর্ক নেই। হায়, বাংলাদেশের লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ের মহান অর্জনটাকে কি অপমানটাই না করা হলো। রূপক সাহা যাকে আমি একজন তুখোড় ক্রীড়া লেখক হিসেবে চিনি, তার সম্পাদিত আনন্দলোক ম্যাগাজিনটি আসলে কি মেসেজ দিতে চাচ্ছে? যদি তারা কলকাতার তরুণ প্রজন্মকে শুধু একটি বানোয়াট ইতিহাসই শেখাতে চায় তবে কেন পত্রিকাটির বাংলাদেশ এডিশনে কথাগুলো সংস্করণ করা হয়নি? সত্যিই কি আমাদের আবার সবকিছু নতুন করে জানতে হবে? এ রহস্যের সমাধান কি বাংলাদেশে ইনডিয়ার বৈধ প্রতিনিধি মি. পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর জানা আছে? বিষয়টি হালকা করে দেখার নয়। আজ তারা ১৯৭১-এর যুদ্ধকে ইনডিয়া-পাকিস্তানের যুদ্ধ, সেই যুদ্ধকে আবার মুক্তিযুদ্ধ বলছে। না জানি আগামীতে তারা আর কি বলবে! কিন্তু এখনই যদি এর জোর প্রতিবাদ না করি সেটি হবে অসহায় সমর্থনের সমতুল্য।

আর তাদের কাছে বোধ হবে পিঠ চাপড়ে চালিয়ে যাও উৎসাহ দেয়ার মতো। আশা করি তথ্য উপদেষ্টা এসব স্পর্শকাতর বিষয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিবেচনা করবেন। সে পর্যন্ত ইনডিয়ান মিডিয়ার এ আগ্রাসনকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।