যুদ্ধাপরাধ মামলায় ‘বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল’ মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায় দিয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের সবক’টি প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা ও গণমাধ্যম। বিশ্বের বৃহত্তম স¤প্রচার মাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও এপি এ ট্রাইব্যুনালকে ‘বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল’ বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মূলত এসব সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনই গতকাল বিশ্বের দু’শতাধিক ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসির ‘বাংলাদেশ ক্লারিক সেনটেন্সড টু ডেথ ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনোমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের একটি আদালত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য একজন সুপরিচিতি মুসলিম ধর্মপ্রচারককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল তার প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।
’ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ আদালতকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের সমালোচকরা বলছেন যে, মাওলানা আযাদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধী দলগুলো বলছে, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ বিচার করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক নিহত হয়। তবে অনেক গবেষক বলছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে।
‘টেলিভানজেলিস্ট টু হ্যাং ফর বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক কোনো তদারকি ছাড়াই সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠন করে। এ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রহসন বলে মন্তব্য করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, বিচারে অনেক ঘাপলা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১০ সালের মার্চে এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন।
তবে একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছে এ ট্রাইব্যুনাল। রায় দ্রুত দেয়ার জন্য সরকার চাপ দিচ্ছে বলে স্কাইপ সংলাপ ফাঁস হয়ে গেলে বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন ওঠে। এ ঘটনায় পদত্যাগ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক গবেষক ডেভিড বার্গম্যান এএফপিকে বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, ১৯৭১ সালে নির্মমতা চালানো হয়েছিল। জামায়াত নেতাদের তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
তবে একাধিক বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়ার তাৎপর্যপূর্ণ ঘাটতি ছিল। এটা খুবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অতিস¤প্রতি সরকার ও বিচারপতিদের মধ্যে যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে। ’ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও প্রাইভেট টিভি স্টেশনে মাওলানা আযাদের ইসলামী অনুষ্ঠান বিপুলসংখ্যক দর্শক উপভোগ করতেন। রয়টার্রের ‘ইসলামিক ক্লারিক সেনটেন্সড টু ডেথ ফর বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে বাংলাদেশের বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল একজন জনপ্রিয় ইসলামী টিভি উপস্থাপককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। ’
রয়টার্রের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা না করে বিচার করার জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেছে।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো এ বিচারকে রাজনৈতিক প্রহসন বলে মন্তব্য করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যে আইনে অভিযুক্তদের বিচার করা হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি। অভিযুক্তদের আইনজীবী, সাক্ষী ও তদন্তকারীরা বলেছেন, বিচার চলাকালে তাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ওয়ার ট্রাইব্যুনাল অর্ডারস ক্লারিক এক্সিকিউটেড’ শিরোনামে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার করছে যে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল, তাদের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়। ’ সুত্র আমারদেশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।