জানিনা ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি অ্যানিমেল সায়েন্স (স্নাতক) কোর্স চালু না করার ইউজিসির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা এ ভাঙচুর চালান। এ সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে তিনজন আহত হন।
এদিকে ইউজিসির সিদ্ধান্তের সমর্থনে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, ইউজিসির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ২৭ জুলাই থেকে বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
একই সময় ইউজিসির সিদ্ধান্তের সমর্থনে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কাছে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুপুর একটার দিকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও কৃষি অনুষদে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করেন।
এ সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে তিনজন আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকেরা পুলিশের সহায়তায় তালা ভেঙে প্রশাসন ভবনে ঢোকেন।
পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম এ সামাদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষক আবু হাদি নূর আলী খানের উসকানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের ফলে এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক আবু হাদি নূর আলী খান বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি সমাধান এবং ক্যাম্পাস শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।
’
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগ বা বিষয় চালু করার দায়িত্ব বা ক্ষমতা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। ’ ইউজিসির নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিটি আমরা শুধু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরোয়ার্ড করেছি। ’
উল্লেখ্য, ইউজিসি গত ১৭ জুলাই আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে সংগতিহীন ও অকার্যকর বিএসসি অ্যানিমেল সায়েন্স (অনার্স) কোর্স চালু না করতে নির্দেশ দিয়ে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠায়।
পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দাবি, নতুন বিভাগটি চালু করা হলে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। অপর দিকে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন করে যে বিভাগটি চালু করার চেষ্টা চলছে, সেটিতে ভেটেরিনাটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে পড়ছেন।
ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনের ব্যাখ্যা
১ আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘অ্যানিমেল সায়েন্স কোর্স চালুর পক্ষে-বিপক্ষে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটিতে নিজের বক্তব্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক জালাল উদ্দিন আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক জালাল উদ্দিন বলেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে অকার্যকর ও সংগতিহীন বিএসসি অ্যানিমেল সায়েন্স ডিগ্রি চালু না করার জন্য ইউজিসির গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এবং তা বাস্তবায়নের দাবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্ররা আন্দোলন করে আসছে। তিনি আরও বলেছেন, ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্রদের এই আন্দোলন কোনো বিশেষ অনুষদের বিপক্ষে নয়।
ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আন্দোলনের নামে পশুপালন অনুষদের ছাত্ররা ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে এবং তাদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে বিধায় ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করছে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান সেশনজটমুক্ত শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সবার ধৈর্যশীল আচরণের মাধ্যমে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র: প্রথম আলো, ০৩.০৮.২০১১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।