মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর !
বাংলার আপেল খ্যাত বরিশালের উৎপাদিত পেয়ারার অর্ধেক আসে ঝালকাঠি থেকে আর বাকি অর্ধেক পিরোজপুর এবং বরিশালে উৎপাদিত হয়। এখানের প্রায় ৩২ টিরও বেশি গ্রামে পেয়ারার চাষ হয়।
ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সারা বছরই বসে ভাসমান হাট। তবে পেয়ারার মৌসুমে হয় জমজমাট বাজার। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।
পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা। বিক্রেতারা এখানকার খালে খুঁজে বেড়ায় ক্রেতা।
আর ক্রেতাদের বেশিরভাগই হল পাইকার। বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তারা বাজারে আসেন। ছোট ছোট নৌকা থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন।
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে।
অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় ফলচাষিরা নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই ভরপুর পেয়ারা বাগান। এসব বাগান থেকে চাষিরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন।
ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়।
আকর্ষণীয় দিক হল এখানে আসা সব নৌকাগুলোর আকার আর ডিজাইন প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা।
ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হল দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে এই হাটে আসতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা।
আর ইঞ্জিন নৌকায় আসলে সময় লাগে এক ঘণ্টা।
ভিমরুলির বাজার থেকে থেকে ট্রলারে ঘন্টা খানেকের পথ পাড়ি দিলে আটঘর পেয়ারার হাট। এটিও ভাসমান বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকায় পেয়ারা নিয়ে চাষিরা এখানে হাজির হন। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা বোঝাই পেয়ারা বিক্রি হয়ে যায়।
কারণ পাইকাররা এখানে চাষিদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
এ বাজারটিও আকারে বেশ বড়। আশপাশেই দেখা যাবে বড় বড় পেয়ারার বাগান, মাঝে ছোট ছোট নালা। চাষিরা ছোট নৌকা নিয়ে নালার মধ্যে ঢুকে গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এছাড়া এ বাজারের পান চাষিরাও আসেন পান বিক্রি করতে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে ঝালকাঠী যাওয়া যায়। স্টিমারে চড়েও যেতে পারেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট-স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস অস্ট্রিচ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ ছাড়ে।
সপ্তাহের দিনগুলোতে পালাক্রমে ছাড়ে স্টিমারগুলো। ভাড়া প্রথম শ্রেণির কেবিনে জনপ্রতি ১ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা।
দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনে জনপ্রতি ৭৬০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ডেকে জনপ্রতি ১৯০ টাকা।
এছাড়া সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘এমভি টিপু’ এবং ‘এমভি সুন্দরবন-২’ লঞ্চ। ভাড়া দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ টাকা। একক কেবিন ১ হাজার টাকা এবং ডেকে জনপ্রতি ২শ’ টাকা।
ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের এসি বাসও যায় ঝালকাঠী। ভাড়া ৮শ’ টাকা। এছাড়া, ‘দ্রুতি’, ‘ঈগল’, ‘সুরভী’ ও ‘সাকুরা’ পরিবহনের নন এসি বাসও যায়, ভাড়া ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে ঝালকাঠী সদরে যাওয়ার জন্য রয়েছে ‘সুগন্ধা’ পরিবহনের বাস।
ঝালকাঠী লঞ্চঘাট কিংবা কাঠপট্টি থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
১০ জনের চলার উপযোগী একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। এ পথে মোটরবাইকের চেয়ে ইঞ্জিন নৌকায় চড়াই ভালো।
যেখানে থাকবেন
সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ঝালকাঠী থেকে ফিরে আসতে পারেন। থাকতে চাইলে জেলা শহরের সাধারণ মানের হোটেলই একমাত্র ভরসা। এ শহরের দু’একটি হোটেল হল কালিবাড়ি রোডে ‘ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস’, বাতাসা পট্টিতে ‘আরাফাত বোর্ডিং’, সদর রোডে ‘হালিমা বোর্ডিং’ ইত্যাদি।
তবে ভালো কোনো হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল সদরে। ঝালকাঠী থেকে যার দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার। বরিশাল সদরের সব থেকে ভালো দুটি হোটেলের নাম হল এথেনা আর এরিনা।
সাইট লিংকঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।